সাদিয়া আফরিন তিশা
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:২৫ পিএম
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:৫৭ পিএম
ভেনিস শহরের রূপ দ্বীপশহর বরিশালের। বাংলাদেশের নদীপ্রধান অন্য এলাকার সঙ্গে বরিশালের তুলনা দেওয়াটা ভুলের শামিল। বরিশালেই অবস্থিত অসংখ্য নদীর। কিন্তু তার মধ্যে সবচেয়ে রহস্যময়, সবচেয়ে পরিচিত এবং সবচেয়ে নান্দনিক নদীটি বোধহয় ধানসিড়ি। ধানসিড়ি এমন এক নদী যাকে জীবনানন্দ দেখেছেন, রূপ দিয়েছেন।
বাংলার অন্যান্য নদীর মতো এই নদীরও জন্মকাহিনীর সঙ্গে মিথের সম্পর্ক রয়েছে। অবশ্য ধানসিড়ি বোধহয় নদীটির আসল নাম নয়। নাগা পাহাড়ের ৩৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীটির নাম ধানসিড়ি। এর উৎপত্তিস্থল দেখার জন্য দ্বীপশহর বরিশালেই পৌঁছতে হবে। তবে ধানসিড়ি নদীটির পূর্ব নাম ধানসেদ্ধ নদী। একটি প্রচলিত পুরাণ অনুযায়ী এই নদীর জন্মলগ্নে এক ঋষির যোগসূত্র ছিল। যে সময় নদীটির জন্ম হয় তখন উত্তাপে আশপাশের গাছপালার পাতা ঝরে যায়। এমনকি উত্তাপে ধানক্ষেতের ধানও সেদ্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে নদীটিকে বলা হতো ধানসেদ্ধ নদী। অবশ্য বয়োজ্যেষ্ঠরা এখনও নদীটিকে ধানসিদ্ধ হিসেবেই চেনেন। পুরাণ বাদেও ধানসেদ্ধর বাস্তবিক ইতিহাসও রয়েছে। এক সময় এই নদীর তীরবর্তী অঞ্চল ধান-চালের ব্যবসার জন্য বিখ্যাত ছিল। তখন নদীর দুই পাড়ে চাল ব্যবসায়ীরা বড় বড় উনুন তৈরি করে দিন-রাত ধান সিদ্ধ করতেন। কলকাতাসহ দূরদূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে এখান থেকে চাল সংগ্রহ করে নিয়ে যেতেন। নদীর দুই তীরে ধান সিদ্ধ হতো বলেই এই নদীর নাম হয়েছিল ধানসিদ্ধ। কিন্তু কবি যখন কোথাও হাত রাখেন, তখন তা বাস্তবকেও বদলে দিতে পারে। যেমন জীবনানন্দ এর নামই বদলে দিলেন।
চিলের কান্নার সুরে উড়ে বেড়ানো কিংবা চড়ুইয়ের আঁকাবাঁকা আকাশের নিচে এককালের উত্তাল ধানসিড়ি আর ক’দিন পর কাগজে-কলমের চিহ্ন হয়েই থাকবে বোধহয়। জীবনানন্দ যেখানে জোছনা দেখতে এসেছিলেন, সে নদী আজ মৃত। বহু মানুষ এখনও এই নদী দেখতে আসেন, এসে হতাশ হন। ধানসিড়ি খননের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা যেন এখনও বাস্তবায়িত হচ্ছে না। জীবনানন্দ ফিরলে তাহলে ধানসিড়ি খুঁজে পাবেন কীভাবে?