সাব্বির ফকির
প্রকাশ : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:০৮ পিএম
না, এভাবে আর চলে না! বাবার মুখে শুনেছি, আমাদের নাকি মস্ত বড় জমিদারবাড়ি রয়েছে সেই গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন যে বাবা গ্রাম থেকে আমাদের নিয়ে এতদূরে এই অচেনা শহরের থাকছে, সেটাই বুঝি না। এভাবে আর কতদিন? আমাকে একবার জমিদারবাড়িতে যেতেই হবে, বাবা কি সত্যি বলছিল না মিথ্যা বলছিল যাচাই ও হয়ে যাবে। আর একটু ঘোরাও হয়ে যাবে। কিন্তু বাবা কি অনুমতি দেবে? নাও দিতে পারে! তাহলে বাবাকে বলা যাবে না যে আমি জমিদারবাড়ি যাচ্ছি।
মনে মনে ফন্দি আঁটছে রাজু। বাবার মুখে শোনা জমিদারবাড়ি নিয়ে অনেক গল্প রয়েছে। কিন্তু কখনও বাবাকে সে বাড়িতে যেতে দেখেনি। আর যখন রাজু সে বাড়িতে যাওয়ার কথা বলত, তখন তার বাবার মুখে ভীষণ কালো ছায়া দেখতো। হয়তো-বা কোনো ইতিহাস রয়েছে পূর্বের। কিন্তু তার বাবা কখনও সে বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে না; আর রাজু জমিদারবাড়িতে যাওয়ার কথা বললে তাকেও নিষেধ করেন।
রাজু সবে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা শেষ করেছে। এখন অবসর সময়ে কাটছে। তাই মনে মনে পরিকল্পনা করল, সে গ্রামের জমিদারবাড়িতে ঘুরতে যাবে। যেহেতু বাবা তাকে যেতে দেবে না, সে কারণেই সে পরিকল্পনা করল। তার খুব কাছের বন্ধু সজীবকে নিয়ে জমিদারবাড়িতে যাবে। কিন্তু বাবাকে বলবে সজীবের নানা বাড়িতে যাচ্ছে।
যেমন কথা তেমন কাজ, তখনই সজীবের বাড়ির সামনে গিয়ে ডাকতে লাগল।
-সজীব বাড়িতে আছিস?
-রাজীব বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতেই পিছন থেকে সজীব হাজির। আরে তুই হঠাৎ আমার বাড়িতে?
-তোর সাথে একটা জরুরি বিষয় আলাপ করার ছিল।
-তা কি বিষয়ে, বল।
-তুই তো জানিস আমাদের পূর্বপুরুষরা জমিদার ছিল। আমাদের একটা জমিদারবাড়ি রয়েছে সেই ভৈরবপুর।
-হ্যাঁ শুনেছি, সেখানে তো তোরা কখনও যাস না।
-বাবা কখনই সেখানে আমাদেরকে নেয়নি। তাই ভাবছি গোপনে তুই আর আমি সেই জমিদারবাড়িতে যাব। বাসায় বলব তোর নানাবাড়িতে যাচ্ছি।
-হ্যাঁ, তাহলে যাওয়া যায়।
রাজীব সজীবের মাকে বলল। সজীবের মা দ্বিমত করল না। রাজীবের বাসা থেকে একই কথা বলল। প্রথমে মত না দিলেও ছেলের আবদার ফেলতে পারেনি।
পরের সপ্তাহে রাজীব আর সজীব জমিদারবাড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। তারা রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছে। তখন সজীব রাজীবকে বলল, পুরোনো জমিদারবাড়িতে নাকি নানারকম ভূত-প্রেত থাকে। জমিদাররা যাদের ওপর অত্যাচার-জুলুম করেছে, তাদের অতৃপ্ত আত্মা সে বাড়িতে থাকে।
সজীবের কথা শুনে রাজীব হাসতে হাসতে বলল, আরে তুই বোকার মতো কথা বলিস না তো। এ যুগে জন্মেও তুই ভূত-প্রেত মানিস, ভূত দেখেছিস কখনও পাগল।
কথা বলতে বলতে ট্রেন চলে এলো। রাজীব- সজীব ট্রেনে উঠে পড়ল।
সজীবের নানাবাড়ি বিষ্ণুপুরে। ঠিক ভৈরবপুরের পরের স্টেশন। দুই বন্ধু মিলে নানা ধরনের গল্প করতে করতে একপর্যায় ঘুমিয়ে পড়লো। তাদের ঘুম ভাঙে চেঁচামেচির শব্দে। সবাই ট্রেন থেকে নামছে। রাজু আর সজীবও ট্রেন থেকে নামল।
এমন সময় রাজু শুনতে পায় পেছন থেকে মা ডাকছে- রাজু, সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চলল এবার ঘুম থেকে ওঠ!
রাজু কিছু বুঝতে পারছে না। পিছনে তাকিয়ে দেখে মা দাঁড়িয়ে আছে আর সে বিছানায়...!