× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বরাদ্দ

আরাফাত আহমেদ রিফাত

প্রকাশ : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:১৬ পিএম

বরাদ্দ

অফিস থেকে ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি। এবারের ছুটিটা আর হুট করেই নিতে হয়নি। তাই অফিসের কাজগুলো গুছিয়ে রেখে আসতে পেরেছি। এক সপ্তাহ একদম নিশ্চিন্তে থাকব। গতবারের মতো আর ঝামেলা হবে না এবার। 

বড় বড় ইমারত পেছনে ফেলে ছুটে যাচ্ছে বাস। অবশ্য ছুটে যাচ্ছে বলা যাবে না, হেঁটে যাচ্ছে বলতে হবে। কারণ রাস্তায় প্রচুর জ্যাম, গাড়ি চলছে মন্থর গতিতে। টেলিভিশনে, সংবাদপত্রে বলা হচ্ছে এসব জ্যামের প্রধান কারণ দেশের চলমান উন্নয়ন কাজ। উন্নয়ন না অবনতি তা বুঝতে পারি না। কারণ এসব কাজ কয়েক বছর ধরেই চলছে, ফলাফল জনগণের ভোগান্তি। 

বাসের সুপারভাইজারের কপালে চিন্তার ভাঁজ। গাড়ির অর্ধেক সিটই ফাঁকা। এসব সিটের যাত্রী কাউন্টারে কল করে অগ্রিম বুকিং দিয়ে রেখেছে। সবাই তাদের সুবিধাজনক স্থান থেকে গাড়িতে উঠবে। যাত্রীরা সবাই সেইসব স্থানে দাঁড়িয়ে আছে। কাউন্টার থেকে বেঁধে দেওয়া সময় পার হয়ে গেছে অনেক আগেই। দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা সুপারভাইজারকে কলের ওপর কল করছে। অনেকে এমন হুমকিও দিচ্ছে যে ‘পাঁচ মিনিটের ভেতর বাস না এলে তারা অন্য বাসে চলে যাবে।’ সুপারভাইজার এমন হুমকির তোয়াক্কাও করত না যদি যাত্রীরা বুকিং দেওয়ার সময় অগ্রিম ভাড়া পরিশোধ করত। সেটা যেহেতু হয়নি, সেহেতু সুপারভাইজারের কপালের চিন্তার ভাঁজ জ্যামিতিক হারে বাড়বে। 

আমার অবশ্য অত তাড়া নেই। যেহেতু একবার গাড়িতে উঠেছি সেহেতু বাড়িতে পৌঁছাবই, হোক সেটা কিছুটা দেরিতে। কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছেন,  ‘আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না; জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে, পৌঁছে অনেকক্ষণ বসে অপেক্ষা করবার অবসর আছে। জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা অন্য সবাই বহন করে করুক; আমি প্রয়োজনবোধ করি না: আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে নক্ষত্রের নিচে।’

‘হালার সরকার’ সুপারভাইজারের কণ্ঠে ক্ষোভ। ‘কাজ করবি তো এক-এক কইরা কর। একলগে সব কাজ করলে মাইনষে যাব কেমনে? গাড়ি-ঘোড়া যাওয়ার জন্য তো একটা সাইড খালি রাইখা দিবি। এত তাড়াতাড়ি তো ডিজিটাল হওন যাইব না। হালার, আমার মতো মূর্খ মাইনষের মাথাত এই চিন্তা আইলে তগো মতন শিক্ষিত মাইনষের মাথাত এই চিন্তা আহে না?’ বোঝা গেল দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা ফোনে তাকে অনেক কথা শুনিয়েছে, এখন সে এই ক্ষোভ ঝাড়ছে সরকারের ওপর। সব দিক থেকে মন সরিয়ে ব্যাগ থেকে আবদুল্লাহ আল ইমরানের ‘হৃদয়ের দখিন দুয়ার’ বইটা বের করে পড়তে শুরু করলাম। বইটা গত সপ্তাহে বইমেলা থেকে কিনেছি, কিন্তু অফিসের কাজের চাপে আর পড়া হয়নি।

মোটামুটি দেড় ঘণ্টা পর বই থেকে চোখ সরিয়ে নিজেকে বড়বাড়িতে আবিষ্কার করলাম। বাসটি এখনও গাজীপুর পৌঁছায়নি। প্রচুর জ্যাম। ড্রাইভার ইঞ্জিন বন্ধ করে রেখেছে। মিনিট দশেক পর জ্যাম ছাড়ল। বাস আবার চলতে শুরু করল। আমিও বই পড়তে শুরু করলাম। 

জয়দেবপুর চৌরাস্তায় এসে আবারও বাস থামল। এবার অবশ্য সামনে জ্যাম নেই। ড্রাইভার বাস থেকে নেমে রাস্তার উলটো পাশে চলে গেল। কেউ কিছু বুঝতে পারল না। অমি অবশ্য ভাবলাম ‘ড্রাইভারের বুঝি প্রকৃতির ডাক দিয়েছে।’ পেছনের সিটে বসা একজন যাত্রী বলল, ‘কিরে মামা, ওস্তাদের ডায়াবেটিস আছে না-কি রে? এতক্ষণ জ্যামে বসে থাকলাম, তখন গেলেই তো হতো। আবার কখন জ্যাম বাঁধবে তার ঠিকঠিকানা নেই!’

বাসচালক খুব দ্রুতই রাস্তার ওপাশ থেকে ফিরে এলো। হাতে একটা গোলাপ। গোলাপটি ককপিটের সামনে রেখে আবার বাস চালাতে শুরু করল। গোলাপ দেখেই হঠাৎ মনে পড়ল ‘আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ভালোবাসা দিবস।’

ড্রাইভারকে কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও ইচ্ছেটা দমিয়ে রাখলাম। চলন্ত অবস্থায় বাসের চালকের সঙ্গে কথা বলা ঠিক নয়। মাওনার কাছে আসতেই আবার জ্যামে পড়ে বাস। এবার অবশ্য কৃত্রিম জ্যাম নয়, প্রাকৃতিক জ্যাম। বাস আর ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে অনেক আগে। এখন ক্রেন দিয়ে সেগুলো সরিয়ে রাস্তা ক্লিয়ার করা হচ্ছে। ভাবলাম এবার অবশ্য চালকের সঙ্গে কথা বলা যায়। ‘ড্রাইভার মামার নাম কি?’ জিজ্ঞেস করলাম। পেছনে ঘুরে দেখার চেষ্টা করল যে প্রশ্নটা কে করল। তারপর উত্তরে বলল, ‘হারুন।’ 

‘তা মামা, দেখলাম ফুল কিনে আনলে, ঘটনা কী? প্রেমটেম করো না-কি?’ হারুন আমতা আমতা করে বলল, ‘প্রেম একটা করি।’ বুঝতে পারলাম ছেলেটা খুব লজ্জা পেয়েছে। ‘ওর লগে আমার বিয়াও ঠিক হইছে। আইজকা বলে ভালোবাসা দিবস। আমি তো গাড়িত, ছুডি পাই নাই। ওর কথা ভাইবা ফুল কিনছি।’ এতটুকু বলে কিছুটা থামল। তারপর আবার বলল, ‘পরে ভাবলাম, ওর পরে এই গাড়িডারে বেশি ভালোবাসি। তাই ওর কথা ভাইবা ফুলডা গাড়িরেই দিলাম।’ কথাগুলো শুনে খুব ভালো লাগল।

দিনশেষে সবাই আমরা ভালোবাসার কাঙাল। শত ব্যস্ততার মাঝেও একটুখানি সময় আমরা বরাদ্দ রাখি ভালোবাসার মানুষটির জন্য। সে ড্রাইভার হারুনই হোক বা চাকুরে সয়ানই হোক।  

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা