× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রাণের মেলা মনের মেলা

আবুবকর সিদ্দিক শিবলী

প্রকাশ : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:৩৫ পিএম

আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:৪১ পিএম

অলংকরণ : জয়ন্ত সরকার জন

অলংকরণ : জয়ন্ত সরকার জন

বই আর বইমেলা; আমার কাছে আবেগের-অনুভূতির এক পরম আশ্রয়স্থল। এর শুরু সেই ছোটবেলায়। মাসের শুরুতে বেতন পেয়ে আম্মু আমার জন্য রঙিন বই নিয়ে আসতেন। চার-পাঁচ বছরের আমি কিছু না বুঝেই সেই বই আগলে ধরতাম। স্লেটে চক দিয়ে বইয়ের ছবিগুলো হুবহু আঁকার চেষ্ট করতাম। এভাবেই শিখতে থাকি, বর্ণমালা লিখতে থাকি। তারপর, গণ্ডি হয় পাঠকক্ষ আর মলাটে বাঁধা নতুন বইয়ের মাঝে। বই থেকে জাগে কল্পনা, আশা, আস্থা। শুরু হয় লেখালেখি। পাঠ আর লেখা এই করেই গড়ে ওঠে ‘ইচ্ছের বইঘর’ নামে আমার প্রায় সাতশো বইয়ের পাঠাগার। 

দেশকালের সীমা অতিক্রম করে জ্ঞানের আলো মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারে বই। অগোছালো জীবনকে শৃঙ্খলায় আনা, হতাশ মনকে প্রবোধ দেওয়া, শিক্ষা, বিনোদন, নিঃসঙ্গতায় সঙ্গী হওয়াসহ সব বিষয়ে শ্রেষ্ঠ অবলম্বন হতে পারে বই। বইয়ের চিরায়ত আবেদনের প্রসঙ্গে মনে পড়ে পারস্য কবি ওমর খৈয়ামের সেই অমর বাণী, ‘রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে যাবে, কিন্তু বই- সে তো অনন্ত যৌবনা।’

অমর একুশে বইমেলা এখন কোটি বাঙালির হৃদয়ে স্বর্ণাক্ষরে অঙ্কিত এক নাম। বাংলাদেশে হাজারো মেলার মাঝে বইমেলার গুরুত্বই বোধকরি সবচেয়ে বেশি। বইমেলা বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে আজ। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে অবদান রয়েছে এই বইমেলার। আর, লেখক, পাঠক, প্রকাশকের কাছে অমর একুশে বইমেলা বছরের সেরা উৎসব।

এই বইমেলা আমাদের মনে করিয়ে দেয় বাঙালির ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাসকে। ভাষা আন্দোলন বাঙালির সংস্কৃতিকে একটা শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আমরা সাহসী হয়েছি, পেরিয়ে গিয়েছি ধারাবাহিকভাবে নানা রক্তাক্ত ধাপের স্বাধিকারের সিঁড়ি এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে অর্জন করেছি স্বাধীনতা।

বইমেলাতে আত্মিক টানে নিজের অজান্তেই ছুটে আসেন বইপ্রেমীরা। প্রতিটি স্টল হয়ে ওঠে একেকটি মুখর আঙিনা, যে আঙিনায় পাঠকরা যেন আমন্ত্রিত অতিথি। কেউ বইয়ের প্রচ্ছদে মুখ ডুবিয়ে বিষয়বস্তুর গভীরতা খুঁজে ফেরেন, কেউ আবার দু-চার পাতায় দৃষ্টি দিয়ে নিজেকে নিয়ে যান স্বর্ণালি অতীতে, কেউবা আবার সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য বহু কাঙ্ক্ষিত বইটি খুঁজতে থাকেন ডুবুরিদের মতো। প্রতিটি স্টলই লেখক, পাঠক আর প্রকাশকদের উচ্ছ্বাস, আনন্দ, প্রেম-ভালোবাসায় হয়ে ওঠে মনোরম মুখর রাজ্য। পাঠকের একটা বড় সুবিধা হচ্ছে- সব প্রধান লেখক-প্রকাশকদের বইগুলো বইমেলাতে পাওয়া যায়। এমনকি তাদের সাক্ষাৎ বা অটোগ্রাফও পাওয়া যায়, যা অন্য সময় পাওয়া দুষ্কর।

বইমেলায় আমরা যে শুধু বইয়ের খোঁজেই যাই তা নয়। প্রশান্তির পরশে প্রিয়জনদের সঙ্গে ভাবনার বিনিময়ও ঘটে এখানে। নতুন প্রজন্মের মননে জাগ্রত হয় জ্ঞান আহরণের স্পৃহা, বইয়ের প্রতি মমত্ববোধ। খুদে পাঠক থেকে শুরু করে তরুণ, প্রবীণ সব বয়সের পাঠকের উপস্থিতি এক অন্যরকম সম্প্রীতির সম্ভারে গেঁথে দেয় বাঙালি জাতিসত্তাকে। বান্ধবের বন্ধন দৃঢ় করার উৎসও এই বইমেলা। যে বন্ধু বা আত্মীয়ের সঙ্গে কালে-ভদ্রে দেখা বা কথা হয়, বইমেলায় তাকেও হয়তো নির্মল পরিবেশে পাওয়া যায়। মজবুত হয় হৃদয়ের বন্ধন। এ জন্যই বইমেলাকে মিলনমেলাও বলা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের প্রকাশনাশিল্প প্রধানত বইমেলাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে। বইমেলার অনুপ্রেরণাতেই অনেক নতুন লেখকদের আবির্ভাব ঘটছে। অনেক লেখার মাঝে নবীন লেখক খুঁজে নেয় লেখার নতুন বিষয়বস্তু, প্রকরণগত নতুনত্ব। পাঠক পায় নতুন স্বাদ, নতুন ভাবনা। আনন্দ খেলে যায় মনজগতে। তাইতো প্রত্যাশা পৃথিবী বইয়ের হোক, বই হোক সুন্দর জীবনের সঙ্গী। 


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা