আবদুল্লাহ সরদার
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:২০ পিএম
সুনয়না,
জানেন তো, কবিতাদের গল্প হয়ে উঠতে হয় না। কবিতার রূপেই তাকে বেশ মানায়। আপনি কবিতা হয়ে কেন থাকতে চান না? কেন নিজেকে দাঁড় করাতে চান গল্পের আদলে! আপনার সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল তেমন করে। যেমন করে অজান্তেই ছুঁয়েছিলাম কুমড়ো ফুলের হলদে রঙ। নিয়েছিলাম মাঘের শেষরাতের অচেনা ঘ্রাণ! যেখানে বাস করে সৌন্দর্যের প্রতিমা কিন্তু কী বিষণ্ণ ভীষণ!
আমি বলছি না, আপনাকে নিয়ে গল্প লেখা বারণ। একটি নামের পিঠে কিছু বৈশিষ্ট্যের ছাপ দিয়ে দায়সারা কিছু কাজ করে ফেলা যায়। সে আমি ঢের পারি। কিন্তু আপনি যে একান্ত একজন; খুব কাছের কেউ আমার। ওই যে, যতটা কাছে এলে নিঃশ্বাস ঘন হয়ে ওঠে। ‘অপূর্ণতা’ শব্দ মুছে যায় পৃথিবীর বুক থেকে।
আপনাকে যেমনটা বলি, হুমায়ুনের কোনো বইয়ের চরিত্র কিংবা আপনার প্রিয় লেখক সুনীলের। আদতে এই অল্পতে আপনাকে সীমাবদ্ধ করি না। আপনাকে একটা আস্ত আকাশ কিনে দিতে ইচ্ছে হয়। কিছু ভেজা মেঘ নিয়ে দাঁড়াতে ইচ্ছে হয় আপনার সামনে। আপনার কাজলমাখা চোখে লেপ্টে থাকবে সূর্যাস্তের একফালি সোনালু রোদ। সেই চোখের দিকে তাকিয়ে একটা জনম পার করে দেওয়ার স্বপ্নে বিভোর হব আমি। আপনার যাবতীয় বিষণ্নতা কুড়িয়ে নেব। একটুখানি ভালোবাসা পাওয়ার ইচ্ছেই কিংবা সংকল্পে!
কত কথা আপনাকে বলা হয়নি, বলাও হবে না। আপনার সামনে দাঁড়ালে বৃষ্টিভেজা পানকৌড়ি হয়ে উঠি, ডুবতে থাকি একান্তে। আমি কথা হারাতে থাকি। ডুবতে থাকি, হয়তো ডুবে ডুবে ভালোবাসি। আপনারও তো কত অদ্ভুত ইচ্ছে জাগে। ওই যে মনে পড়ে, সেদিন আপনি কেমন সুরে বললেন, আসেন, আমরা একসঙ্গে গান শুনি। আমার ভেতরে খুব তাড়া অনুভব হয়। তবু এক পা এগোতে গিয়ে দুই পা পিছিয়ে পড়ি। রেখে দিই ভয় কিংবা ব্যস্ততার ছিন্নপত্র।
আপনার সঙ্গে কথা হলেই মায়া বাড়ে। বুকের ভেতর তীব্র ব্যথা হয়। বোধহয় কেউ বলছে আমার হয়ে, আপনি কেন আমার হলেন না। কেন হবেন না? মাঝেমধ্যে আপনি উপদেশের ঝাঁপি খুলে বসেন। শাসনের সুরে বলেন, মায়া বড় খারাপ জিনিস! এসব মায়ায় জড়াবেন না। অথচ দূর থেকে টের পাই আপনার মায়াভরা ভেজা কণ্ঠ।
যেদিন আপনার বেদনার্ত কণ্ঠ শুনলাম, বিশ্বাস করুন, সে রাতে আমার ঘুম হয়নি। সবার আড়ালে গিয়ে কেঁদেছি। আপনার সেই কণ্ঠ শুষে নিয়েছে আমার চোখের সমস্ত জল।
সুনয়না, আপনাকে সত্যিই গল্পে মানায় না। আপনি একটা কবিতা হয়ে থাকুন। প্রতিটি সেকেন্ড বাতাসের গায়ে অথবা কল্পনার শরীরে এঁকে যাব অনন্তকাল। একটা সমুদ্রের বিশালতা যার কাছে ঢেলে দেব হৃদয়ের সমস্ত দহনকথন। এনে দেব দুর্বোধ্য সেই জোছনার ফুল!