× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অগ্নিপুরুষ

আহরাফ রবিন

প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:২৮ এএম

আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:৩১ এএম

অলংকরণ : বিপ্লব সরকার

অলংকরণ : বিপ্লব সরকার

ফুটপাতের চায়ের দোকানে বসে আছে আলতাফ উদ্দিন। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তার চোখেমুখে দুশ্চিন্তার প্রগাঢ় ছাপ। চোখের নিচে কালো দাগ। ইদানীং রাতে ঘুম হয় না। পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে চায়ের কাপটি হাতে নেওয়ার সময় জহিরকে বলল‚ ‘তাহলে ওটাই হবে।’ জহির বলল‚ ‘ছাত্রসমাজ ক্ষেপে উঠেছে। আমাদেরও যোগ দিতে হবে। প্রয়োজনে প্রাণ যাবে যাক!’

পাকিস্তান সরকার উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা দিয়েছে। ওরা এ দেশের মানুষের মুখের ভাষা ও সংস্কৃতি বিলুপ্ত করে দিতে চায়। ব্রিটিশের হাত থেকে এ দেশের মানুষ মুক্ত হলেও পশ্চিম পাকিস্তানিরা পরাধীনতার শেকলে বেঁধে রেখেছে‚ আলতাফের ধারণা। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। মেসবাড়ির ফ্লোরে বসে বইপত্র ঘাঁটছিল আলতাফ। এ অবস্থায় তার বাবা এলেন। বাবাকে দেখে খানিকটা অবাক হলো। আলতাফ বলল‚ বাবা তুমি!

‘এই মাসে তোর কোনো চিঠি নেই, তাই চলে এলাম। তোর শরীর ঠিক আছে তো?’ বাবা উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন।

‘ছাত্রসমাজ ক্ষেপে গেছে; রাষ্ট্রভাষা বাংলাই বহাল রাখবে তারা...। ঢাকার অবস্থা ভালো না। মন খারাপ ছিল, তাই চিঠি লিখিনি।’

‘তাহলে গ্রামে চল। ঢাকার অবস্থা ভালো হলে চলে আসবি।’

‘না বাবা। এটা অসম্ভব! আমাদের ওপর অনেক দায়িত্ব।’

আলতাফের বাবা ব্যাগের ভেতর থেকে নতুন ধানের মুড়ি এবং খেজুরের গুড় বের করে বললেন‚ ‘তোর মা পাঠিয়েছে।’

সকালবেলা ভাঙা জানালার ময়লা পর্দা ভেদ করে সূর্যের আলো স্পর্শ করল আলতাফের শরীর। এতক্ষণ বাইরে জহির অপেক্ষা করছে ওর জন্য। আজ মিছিল হবে। রাষ্ট্রভাষার দাবিতে।

১৪৪ ধারা চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অগণিত মানুষের সঙ্গে আলতাফ ও জহির এসে যোগ দিল। সবার ভেতরেই উত্তেজনা ক্রমে ঘনীভূত হচ্ছে। ঢাকার বাতাসে গুমোট। এতক্ষণে পুলিশবাহিনী ঘেরাও করে ফেলেছে ক্যাম্পাস! ছাত্রদের বের হতে দিচ্ছে না বাইরে।

মিছিলের সামনের সারির ছাত্ররা আর বাধা মানল না। ওরা ঝড়ের বেগে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই/আমাদের দাবি মানতে হবে...’ এ স্লোগান দিয়ে সামনে অগ্রসর হলো। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করল। সেই সঙ্গে বেশ কয়েকজনকে আটক করেও নিয়ে গেল।

বিকালবেলা ছাত্ররা দ্বিগুণভাবে ফুঁসে উঠল। গ্রেফতারের প্রতিবাদে ছাত্রসমাজ পুনরায় মিছিল বের করল। সেই মিছিলেও কাঁদানে গ্যাস, গুলিও চালাল পুলিশ। সবাই দিগবিদিক ছুটতে লাগল। তারা মিছিলের অগ্রভাগেই ছিল। এত মানুষের ভিড়ে জহির কোথায় যে হারিয়ে গেল, আলতাফ তা লক্ষ করেনি। মিছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে আসতেই বিদ্যুদ্বেগে একটি গুলি এসে লাগল আলতাফের বুকে। মুহূর্তেই সে মুখ থুবড়ে লুটিয়ে পড়ল রাজপথে। তার পরও সেই অগ্নিঝরা স্লোগান থামছে না- ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।’

মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছে। যে যেদিক পারছে ছুটছে। বাতাসে কাঁদানে গ্যাসের গন্ধ। গুলিবিদ্ধ কয়েকটি লাশ পড়ে আছে। টকটকে লাল রক্তে ভেসে যাচ্ছে রাজপথ!

আলতাফের বুকের রক্ত এঁকেবেঁকে ছুটছে স্রোতস্বিনী নদীর মতো। তার বুক যেন বাংলাদেশের একটি নদীর উৎস! যে নদীতে মাঝি তার নৌকা বেয়ে যেতে যেতে ভাটিয়ালি গান গাচ্ছে গলা ছেড়ে। ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পরও বাঁচানো গেল না তাকে। কয়েকদিন পর খবর পেয়েই আলতাফের মা-বাবা ঢাকায় এলেন। তার বাবা শহীদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদলেন। মা শোকে পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। জহির তার চোখের জল ধরে রাখতে পারছিল না। বারবার হাত দিয়ে চোখ মুছছিল তাদের পাশে দাঁড়িয়ে।

দেশ স্বাধীন হয়েছে। আলতাফের বাবা এখন ভীষণ অসুস্থ। হাঁটতে পারেন না। তবু তিনি ঢাকায় এসেছেন। হুইলচেয়ারে খালি পায়ে প্রভাতফেরিতে চলেছেন। হাতে একগুচ্ছ ফুল। তার সঙ্গে আরও অনেকেই চলেছেন। মাইকে বাজছে আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর সেই গান- আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি... 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা