× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা

তন্ময় রহমান

প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৩ ১৩:৩৫ পিএম

লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা

অগ্নিঝরা মার্চের রৌদ্রোজ্জ্বল এক দিনে দৃপ্ত পায়ে হেঁটে এলেন তিনি। তিনি আমাদের মুক্তির কবি। পরাধীনতার শিকল ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্যই যেন তাঁর আগমন। তিনি আসলেন, বজ্রকণ্ঠে ধ্বনিত হলো মুক্তির ডাক, দিলেন সংগ্রামের নির্দেশ। তাঁর ডাকেই বাঙালি জাতি হয়ে উঠল অদম্য। 

বাংলার মানুষকে দমিয়ে রাখতে ওরা রচনা করল ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়। অপারেশন সার্চলাইটের নামে তৈরি করল মানুষ হত্যার নীলনকশা। বর্বরতার গণ্ডি পেরিয়ে, লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্ত ঝরাল হানাদাররা। বাংলার রাজপথ রঞ্জিত হলো শহীদের রক্তে। নিথর দেহগুলো পড়ে রয়েছে রাস্তায়, এলোমেলো। যেদিকে তাকানো হয় সেদিকেই শুধু লাশ আর লাশ, শোনা যায় কান্নার আওয়াজ। 

স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে সেদিন একত্রিত হয়েছিল ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের সর্বস্তরের মানুষ। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর, রাতেরবেলা অস্ত্রসজ্জিত কয়েকটি ট্যাংক গর্জন করতে করতে ধেয়ে এলো। পাঁচপাড়া, দরিরামপুর, হরিরামপুরসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে ঢুকে পড়ল পাকিস্তানি আর্মিরা। গ্রাম থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় অসংখ্য নারী-পুরুষকে। হরিরামপুর ইউনিয়নের রায়ের গ্রাম সরকারি বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের খোলা ময়দানে সারি করে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় সবাইকে। হঠাৎ যেন আকাশ ভেদ করে গর্জে উঠল হানাদারদের রাইফেল। রক্তের বন্যায় ভেসে গেল চারদিক। শত শত নিথর দেহ পড়ে রইল মাঠে। সেদিন দুই শতাধিক মানুষ হত্যা করে চলে যায় তারা। সেই খোলা ময়দান হয়ে উঠল ওদের বর্বরতার সাক্ষী। ফসলি জমি হয়ে উঠল বধ্যভূমি।

হরিরামপুর ইউনিয়নের রায়েরগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ, পৌরসভার দরিরামপুর মৌজায় মহাসড়কের পাশে এবং সদর ইউনিয়নের পাঁচপাড়া গ্রাম- মোট তিনটি বধ্যভূমি রয়েছে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায়। 

পাঁচপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী। সেদিনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘৮ ডিসেম্বর আমাদের গ্রাম থেকে দলবেঁধে নারী-পুরুষদের নিয়ে যাওয়া হয় খোলা মাঠে। পাকিস্তানি আর্মিরা গুলি করে হত্যা করে অনেক মানুষ। তাদের রক্তে লাল হয়েছিল বাংলার মাটি। রাইফেলের তীব্র শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল গ্রামের সবাই। একই দিনে দরিরামপুরেও হত্যাযজ্ঞ চালায় আর্মিরা। এভাবে ত্রিশালে তৈরি হয় তিনটি বধ্যভূমি।’

পাকিস্তানি সৈন্যদের আক্রমণ রুখে দাঁড়ান বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর ত্রিশালের মুক্তিকামী জনতা পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে। আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। ৮ ডিসেম্বর মেজর আফসার বাহিনীর যুদ্ধকালীন কমান্ডার শাহ্ আনছার উদ্দিন মাস্টারের নির্দেশে কোম্পানি কমান্ডার আব্দুল বারী মাস্টার একদল গেরিলা যোদ্ধা নিয়ে সূতীয়া নদীর তীর থেকে চারশ গজ দক্ষিণে জড়ো হন। রাত আনুমানিক ১টার দিকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আক্রমণ শুরু করলে হানাদাররা ভীত হয়ে পড়ে। কূল-কিনারা না পেয়ে ভোর হওয়ার আগেই জেলা সদরের দিকে পালিয়ে যায় তারা। এ যুদ্ধে গিয়াস উদ্দিন নামের এক মুক্তিযোদ্ধা নিজেদের গুলিতেই নিহত হন। মুক্তিযোদ্ধারা ও এলাকাবাসী ত্রিশাল থানা দখল করে নেয়। পরের দিন সকাল ৭টায় কোম্পানি কমান্ডার আব্দুল বারী মাস্টার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে থানা প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। 

এ দেশে কতগুলো বধ্যভূমি আছে? মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় কিংবা সরকারের কাছেও এর সঠিক তথ্য বা পরিসংখ্যান নেই। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের কাছে রয়েছে ২৮০টি বধ্যভূমির নাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও নির্যাতন নিয়ে গবেষণা করছে দুটি বেসরকারি সংস্থা ‘ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি’ এবং ‘গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র’। এ দুটি সংস্থার তথ্য মতে, সারা দেশে চিহ্নিত বধ্যভূমির সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি। কিন্তু বছর দশেক আগে জরিপ শেষে তারা জানিয়েছিল, দেশজুড়ে পাঁচ হাজারের মতো বধ্যভূমি রয়েছে। যদিও সেই সময়ে তারা মোট ৯৪২টি বধ্যভূমি শনাক্ত করতে পেরেছিল। 

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় কর্তৃক চিহ্নিত বধ্যভূমিগুলোয় সরকারিভাবে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। যদিও এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দ্বিতীয় পর্যায়ের মেয়াদও শেষ হয়েছে অনেক আগে। নতুন করে মেয়াদ বৃদ্ধি হয়েছে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। তবুও বেশ কিছু বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ এখনও শুরুই হয়নি। আমাদের চাওয়া, বধ্যভূমিগুলোয় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার কাজ যেন দ্রুততার সঙ্গে শেষ হয়। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা