সাব্বির ফকির
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৩ ১১:৪১ এএম
ঈদের চাঁদ দেখা অত্যন্ত আনন্দের মুহূর্তের একটি। কারণ চাঁদের হিসাবেই ঈদপর্ব শুরু হয়। রমজান মাসের শেষদিন চাঁদ দেখা বা চাঁদের খবর নিতে উৎসুক দেখা যায় শিশু-কিশোর, যুবক কিংবা বয়স্ক মানুষদের।
ঈদ মানে শুধু আনন্দ নয়, যেন মহা-আনন্দ। রমজান মাসের রোজা শেষে চাঁদ দেখার অপেক্ষা যেন মধুময়। সবাই চাঁদ দেখার মুহূর্তটা উপভোগ করলেও শাহাদত করে চাঁদ না দেখেই। তার জন্ম শহরে হলেও থাকতে হয় গ্রামের বাড়িতে। শাহাদতের বয়স যখন ১০ বছর, তখন তার সমবয়সি বন্ধুরা চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। কিন্তু সে পড়াশোনা একদমই পারত না। সারা দিন কাটে শুধু ঘোরাফেরা, খেলাধুলা করে। শুধু পড়তে বসলেই তার নানা সমস্যা।
শাহাদতের বাবা থাকেন শহরে। মা, বড় ভাই আর ছোট বোনের সঙ্গে সে থাকে গ্রামে। আর গ্রামের ঈদ মানে একটু বেশিই আনন্দ। রোজা রাখুক আর নাই রাখুক দল বেঁধে ইফতার করতে মসজিদে যেতেই হবে। ইফতার শেষে দুষ্টামির দায়িত্বটা পালন করত শাহাদত ও তার বন্ধুরা। রোজা না রেখেও বুক ফুলিয়ে অন্যকে বলা, কিরে রোজা না ভোজা।
শেষ রোজায় গ্রামে চাঁদ দেখার বিরাট আয়োজন। ছেলেমেয়েরা মিলে বুড়ির ঘর বানাতো আর চাঁদ দেখার পর তাতে আগুন দিয়ে পুরিয়ে ফেলত। এটা কোনো প্রথা নয়, শুধু আনন্দ করার জন্যই এমনটা করা হতো। শাহাদত ও তার বন্ধুরা মিলে বুড়ির ঘর বানানোর জন্য শুকনো কাঠ, পাটের দড়ি ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত। গাছের শুকনো ডাল দিয়ে খুঁটি আর কলাগাছের শুকনো পাতা দিয়ে তৈরি করা হলো দেয়াল। আর ভেতরের অংশে কিছু পুরোনো কাপড়। কেরোসিন তেল দিয়ে পুরো ঘরটা হালকা ভিজিয়ে নেওয়া হলো, যাতে করে ভালোভাবে আগুন লাগে। ঘর তৈরির কাজ শেষ। এবার চাঁদ দেখার অপেক্ষায় সবাই। চাঁদ উঠবে উঠবে করতে করতে শাহাদতের বন্ধু রাসেল হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠে বলল, ওই যে, দেখা যাচ্ছে চাঁদ। তারপর একে একে সবাই চেঁচিয়ে উঠতে লাগল।
সুমন : হ্যা, আমিও চাঁদ দেখছি।
রাকিব : কী বলিস! আমি দেখছি না তো। (রাসেল এবার রাকিবকে দেখিয়ে দিল)
রাসেল : ওই যে খেজুরগাছের মাথার ওপর দেখা যাচ্ছে।
রাকিব : কোথায়? আমি দেখছি না তো।
সুমন : এদিকে দেখ (হাত দিয়ে দেখিয়ে দিল) চাম্বলগাছের দুই ডালের মাঝেখানে দেখ।
রাকিব : হ্যাঁ হ্যাঁ, এবার দেখছি।
কিন্তু সবাই চাঁদ দেখতে পেলেও শাহাদত দেখতে পায়নি। অনেকবার চেষ্টা করেও সে চাঁদ দেখতে পাচ্ছে না। বন্ধুরাও চেষ্টা করল শাহাদতকে চাঁদ দেখাতে। কিন্তু তার আর চাঁদ দেখা হয়নি। শুধু এবারই নয়, আগের ঈদের চাঁদ সে দেখতে পায়নি। চাঁদ না দেখেই সে বন্ধুদের সঙ্গে বলত হ্যাঁ দেখছি। মুখে বললেও সত্যি সত্যি চাঁদ আর দেখা হয় না তার। বিষয়টি নিয়ে তার বড্ড মন খারাপ হয়। চাঁদ না দেখেই ঈদ উদযাপন করত শাহাদত।
শাহাদতের যখন দুই বছর বয়স তখন তার নিউমোনিয়া হয়। তখন থেকেই তার চোখে সমস্যা সৃষ্টি হয়। বাবা-মা বুঝতে না পারায় তার চোখের সমস্যা আরও বিরাট আকার ধারণ করে। শাহাদত সব সময় চিন্তা করত সবাই চাঁদ দেখে, কিন্তু আমি কেন দেখি না?
শাহাদতের এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় রাজধানী ঢাকাতে। সপরিবারে তারা ঢাকা এসে মিরপুর ১৪ নম্বরে ১ নম্বর বিল্ডিং এলাকায় বসবাস শুরু করে। এখানেই শাহাদতের বাবার ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু পরামর্শ দেয় চোখের ডাক্তার দেখাতে। সে বলল, তোমার ছেলে এত বড় হয়ে গেল এখনও পড়াশোনা করছে না। আমার মনে হচ্ছে শাহাদতের চোখে সমস্যা হতে পারে। আমি দেখেছি সে টিভি দেখলে চোখ ছোট করে দেখে। বন্ধুর কথাতে শাহাদতের বাবা চোখের ডাক্তার দেখায় ও চোখে সমস্যা ধরা পড়ে। চিকিৎসা করার পর শাহাদত চোখে দেখতে পায়। কিন্তু যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন তার চোখে চশমা ব্যবহার করতে হবে।
শাহাদত এখন চশমা ব্যবহার করে। ঈদের চাঁদ দেখতে পায় সে। বন্ধুরা কেউ চাঁদ না দেখতে পেলে সে দেখিয়ে দেয়। সে এখন পড়াশোনাও করছে।