আসমাউল হুসনা
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৩ ১২:৪৯ পিএম
প্রচ্ছদ : আজহারুল ইসলাম চঞ্চল
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে ঈদুল ফিতর। মুসলিম জাতির বৃহৎ উৎসবের মধ্যে অন্যতম। অনাবিল শান্তি ও আনন্দের বার্তা নিয়ে ঈদের এক ফালি চাঁদ যখন পশ্চিম দিগন্তে ভেসে ওঠে, তখন হৃদয় গহিনে বয়ে যায় আনন্দ-উচ্ছ্বাসের দোলা।
ঈদ মানেই আনন্দঘন উৎসব। উত্তম পোশাক পরিধান করা, মিষ্টিমুখ করা, সদকাতুল ফিতর আদায়, গরিব-দুঃস্থ ও অসহায়ের সহযোগিতা-সেবা করে মুখে হাসি ফোটানো এবং ঈদের নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে পালন করা হয় ঈদ উৎসব। সমাজের ধনী-দরিদ্রের মধ্যে ভেদাভেদ দূর করে সবার জন্য সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে আসে এই দিনটি। যার প্রভাবে মানুষ এক অনাবিল প্রশান্তি অনুভব করে। ঈদের এই সময় বেশিরভাগ মানুষ জাকাত আদায় করে। যার ফলে দুঃস্থ-অসহায় মানুষ সুযোগ পায় সুন্দর ও সচ্ছল ঈদ পালনের। ঈদের নির্মল আনন্দে ভেসে যায় মনের সব হিংসা-বিদ্বেষ, পরিচ্ছন্ন হয় অন্তরাত্মা।
আমাদের এ দেশ বাংলাদেশ। এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ নানা সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে বাস করে। তাই এ দেশে উৎসব পালনও হয় ভিন্ন আঙ্গিকে। আমাদের জাতীয় জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ঈদ উৎসব, যা মানুষকে কাছে টানে। বৈষম্য ভুলে আনন্দে উদগ্রীব হয় সবাই। সমাজ বাস্তবতার যেন আরেক ধরনের চিত্র। তাই ঈদ শুধু মুসলিম ধর্মের উৎসবই নয়, বরং তা সবার জন্য সম্প্রীতি-সৌভ্রাতৃত্বের প্রতীক।
উৎসবের দিনগুলোতে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে আমাদের সবার উচিত একসঙ্গে মিলিত হওয়া। ধর্ম যার যার উৎসব সবার, এমন শান্তির বার্তা সর্বস্তরে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই সব উৎসব পালন হয়। ঈদও যেন ঠিক তাই। একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি ও হাত মেলানো ঈদের অন্যতম একটি ঐতিহ্য। যার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায় সম্প্রীতির। অর্থাৎ ঈদ উৎসবে নেই কোনো ভেদাভেদ। আমরা সব মানুষ সমান। ধনী-গরিব, কৃষক-শ্রমিক, কুলি-মজুর সবাই যেন একই সুতায় বাঁধা। তাই আনন্দ করার অধিকার সবারই এক। মনের হিংসা, ঘৃণা, লোভ, অহমিকা, রাগ-ক্রোধ, বিদ্বেষসহ যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার শিক্ষা দেয় ঈদ।
অতীত জীবনের গ্লানি ভুলে ঈদ আমাদের শেখায় শুদ্ধতার বাণী। ঈদ আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবসহ সবার সঙ্গে তৈরি করে সম্পর্কের মেলবন্ধন। ঈদ আমাদের জীবনে জাতিগত ঐক্যের চেতনা সৃষ্টি করে। ভ্রাতৃত্ব, অসাম্প্রদায়িক চেতনা জাগ্রত করে সম্মিলিত আনন্দ উদযাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ঈদ। কেবল নিজের একচ্ছত্র ভোগ ও আনন্দে নেই কোনো মহত্ব। সবাইকে নিয়ে আনন্দিত ও সুখী হতে পারার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সুখ। সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও আনন্দের অবারিত ফল্গুধারা সঞ্চারিত করার চেয়ে মহৎ আর কিছুই হতে পারে না। এমন শিক্ষা দিতেই বছর ঘুরে আসে ঈদুল ফিতর।