× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আজও মনে পড়ে আম কুড়ানোর খেলা

রেজাউল আলম

প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৩ ১৩:৩৭ পিএম

আজও মনে পড়ে আম কুড়ানোর খেলা

শেষ রাতের দিকে পাপিয়ার পাখির ডাকে ঘুম ভেঙে যায়। পাখিটা প্রতিদিন প্রায় একই সময় ডাকে। ঘুম ভেঙে গেলে জানালা খুলে বাহির পানে চোখ মেলে একটু দেখার চেষ্টা করি। হালকা মৃদু বাতাসের সঙ্গে কচিপাতা ও পাকা ফলের ঘ্রাণ। সহসা মনে পড়ে যায় প্রকৃতিতে চলছে মধুমাস। 

আজকাল প্রায়ই চোখে পড়ে ফুলফোটা গাছে মধু খেতে আসা মুনিয়া, বুলবুলির খুনসুটি। বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ মাস এলেই বারবার মনে পড়ে যায় শৈশবের নানা স্মৃতি। একটু বাতাস বইলেই হাজির থাকতাম বাড়ি কিংবা রাস্তার পাশের আমগাছতলায়। বাতাসে গাছের আম নিচে পড়ত, আর তা কুড়িয়ে বাড়ি নিয়ে এসে আচারসহ নানারকমের খাবার তৈরি করতাম। কখনও কখনও গাছের নিচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পার করে দিতাম আস্ত একটা দিন। 

জ্যৈষ্ঠ মাসে গাছে গাছে নতুন পাতার সঙ্গে ফুল-ফলে ভরে থাকে শাখা-প্রশাখা। রাতে বাদুড়ের উপদ্রব থেকে ফল রক্ষা করতে গাছে বাঁধা ‘দাদুর ঘণ্টা’ বাজত রোজ। স্কুল একদিন ছুটি মানেই নানা গাছের ফল দিয়ে ভর্তা বানানোর আয়োজন। যার মধ্যে থাকত আম, তেুঁতল, কলা ইত্যাদি। ভর্তা খাওয়া শেষে রোদের প্রচণ্ড তাপ থেকে বাঁচতে ঝাঁপিয়ে পড়তাম পুকুরে। ডুবে থাকতাম ঘণ্টার পর ঘণ্টাÑ যেন শান্তির পরশ। পানিতে চলত চোর-পুলিশসহ কতক্ষণ ডুবে থাকা যায় সেই খেলা। পানিতে অনেকক্ষণ থাকার ফলে শরীরে শেওলা জমে যেত। চোখ লাল হয়ে যেত। বাড়িতে ফেরার আগে মায়ের উত্তম-মধ্যম থেকে বাঁচতে পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে সবাই মন্ত্র পড়তাম, ‘বকের চোখ লাল, আমার চোখ সাদা।’ অনেক সময় মন্ত্রও কাজে দিত না, বাড়ি ফিরে মায়ের উত্তম-মধ্যম ছিল পাওনা। 

বাংলা সনের মধুমাসে, বাংলার প্রাণ-প্রকৃতিতে নবপ্রাণের সঞ্চার হয়। প্রকৃতি সাজে নতুন রূপে। তবে কবি-সাহিত্যিকসহ পণ্ডিতরা বসন্তের মাস চৈত্রকে বলেছেন মধুমাস। কবি কঙ্কণ চণ্ডীদাস তার কাব্য লেখেন, ‘মধুমাস আপায় মাধব পরশে।’ এখানে আপায় মানে গত হওয়া। তিনি চৈত্র মাস বা বসন্তকাল অর্থে মধুমাস শব্দটি ব্যবহার করেছেন। লোকমুখে চলিত খনার বচনেও মধুমাস বলতে চৈত্র মাসকে বোঝানো হয়েছে। যেমনÑ ‘মধুমাসের প্রথম দিনে হয় যেবার রবি শেষে মঙ্গল বয়ে, দুর্ভিক্ষ বুধবার। সোম শুক্র শুরু আর পৃথ্বী সয় না শস্যের ভার। পাঁচ শনি পায় মীনেশ কুনি মাংস না খায় ঘুণে।’ অর্থাৎ চৈত্র মাসের প্রথম দিন রবিবার হলে অনাবৃষ্টি, মঙ্গলবার হলে বৃষ্টি, বুধবার হলে দুর্ভিক্ষ হয়। সোম, শুক্র আর বৃহস্পতিবার হলে প্রচুর শস্য এবং চৈত্র মাসে পাঁচ শনিবার হলে মড়ক হয়। শনির অবস্থাভেদে চৈত্র মাসের ফল সম্বন্ধে খনার বচন থেকে আরও জানা যায়, ‘মধুমাসের ত্রয়োদশ দিনে যদি রয় শনি। খনা বলে সে বৎসর হবে শস্যহানি।’ 

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার গানে লেখেন, ‘আজি মধু সমীরণে নিশীথে কুসুম বনে তাহারে পড়িছে মনে। বকুল তরল।’ অথবা ‘আজি উন্মাদ মধুনিশি ওগো চৈত্রনিশীথশশী। তুমি এ বিপুল ধরণীর পানে কী দেখিছ একা বসি চৈত্রনিশীথশশী।’ মধু শব্দের অর্থ যে বসন্তকাল, উল্লিখিত গানেই তার প্রমাণ মেলে। ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ আর জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের ‘বাঙ্গালা ভাষার অভিধান’ বইয়ে মধুমাস বলতে চৈত্র মাসকে বলা হয়েছে। আশির দশকের পর কিছু পত্রপত্রিকা ও সংগঠন জ্যৈষ্ঠ মাসকেই মধুমাস হিসেবে উল্লেখ করে ফল উৎসব করেছিল। 

তবে পণ্ডিত এবং বাংলা সাহিত্যে চৈত্র মাসকে মধুমাস বলা হলেও, মূলত বাতাসে ঘ্রাণ পেয়ে সব ফলের নাম আন্দাজ করা যায় জ্যৈষ্ঠ মাসে। এই সময় আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, তরমুজ, বাঙ্গি, বেল, ডেউয়া, লটকন, গোলাপজাম, বেতফল, গাব, জামরুল, কাঁচা তাল, জাম্বুরা, শরিফা, করমচা, ফুটি, কামরাঙা প্রভৃতি দেশীয় ফলের সমাহার দেখা যায়। পাশাপাশি শহরের দোকানগুলোতে সারা বছর দখল করে আসা বিদেশি ফলের স্থানে জায়গা করে নেয় দেশীয় এসব ফল। 

একটা সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গ্রামের বাড়ির আশপাশে দেশীয় এসব ফলের গাছ ছিল। এসব ফল পরিপক্ব হলে প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের মাঝে বিতরণ করা হতো। সেই সময়টাকে আমরা ফল উৎসব হিসেবে উদযাপন করেছি। বাড়ির পাশের গাছের পাকা রসালো, পরিপক্ব এসব ফল উপহার হিসেবে আম্মা পাঠাতেন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। বাড়িতে বাড়িতে ফল উৎসবে মেতে উঠত সবাই। আত্মীয়তার সম্পর্ক আর সুদৃঢ় হতো। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা