× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

তার চলে যাওয়া

ইমরান হোসাইন

প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৩ ২০:০০ পিএম

তার চলে যাওয়া

আমাদের সবার জীবনেই ভালোবাসা আসে। একটি নির্দিষ্ট সময়ে আসে। আমার জীবনেও এসেছিল। সে আমার ভালোবাসা, জুঁই। তাকে আমি প্রথম দেখেছিলাম আজ থেকে সাত বছর আগে। ফাগুন মাসের শুরুতে আমাদের পরিচয়।

সেবার বষন্ত আমার মনে ভালোবাসার ফুল ফুটিয়েছিল। আমি ও জুঁই একই স্কুলে পড়াশোনা করতাম। সে অষ্টম আর আমি নবম শ্রেণিতে। আমাদের প্রেমের শুরুটা হয় আচমকা। একদিন আমি স্কুলমাঠে বসে আছি। হঠাৎ শুনতে পেলাম কে যেন আমার নাম ধরে ডাকছে। পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি অদ্ভুত সুন্দর, মায়াভরা চোখের একটি মেয়ে। আমি হাতে ইঙ্গিত দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আমাকে ডাকছেন? কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম, অন্য একটি ছেলে তার দিকে ছুটে যাচ্ছে। তখন বুঝতে পারলাম ছেলেটির নাম হয়তো আমার নামেই। 

তখন থেকেই শুরু ভালো লাগা। সারাক্ষণই যেন তার পাশে ঘুরঘুর করতাম। পেছন পেছন অনুসরণ করতাম। বিষয়টি আমার বন্ধুরা বুঝতে পারল। আমাকে দেখলেই ওকে নির্দেশ করে বন্ধুরা আমার নাম ধরে ডাকত। কিন্তু এই ব্যাপারটা তার মোটেও পছন্দের ছিল না। তবে আমি তাকে পছন্দ করি ও পেছন পেছন ঘুরি তাতে সে বিরক্ত হতো না। ভালোবাসি কথাটি বলার সাহসও পাচ্ছিলাম না। 

সেই সময় আমার একটি এনালগ মোবাইল ফোন ছিল। একদিন স্কুল থেকে ফিরে দেখি অপরিচিত নম্বর থেকে মেসেজ। লেখা ছিলÑ আপনি এত বোকা কেন! আমি উত্তর দিয়েছিলাম- কে আপনি? কিছুক্ষণ পর আবার মেসেজ এলো আপনি আসলেই বোকা, আমি জুঁই। আর মেসেজ দেবেন না, এটা আব্বুর ফোন। সে দিনের সেই মেসেজ আমার মনে অন্যরকম এক অনুভূতির সৃষ্টি করেছিল। সেই থেকেই আমাদের পথচলা, প্রেম। 

ক্লাসের ফাঁকে কিংবা স্কুল শেষে একসঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমরা আড্ডা দিতাম। তখন আমার পৃথিবী বলতেই শুধু জুঁই। এভাবে দেখতে দেখতে আমি এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে স্কুল থেকে বের হলাম। জুঁই তখন দশম শ্রেণিতে। আমার কলেজ শেষে চলে যেতাম স্কুলে তাকে দেখার জন্য। এক বছর পর আমরা দুজন কলেজে। তবে কলেজ ছিল আলাদা। জুঁই আমাকে ভীষণ ভালোবাসত। কিন্তু কখনও মুখ ফুটে বলত না। হঠাৎ একদিন হাউমাউ করে কান্না করতে লাগল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী হয়েছে, কান্না করছ কেন? তার উত্তর, বাসা থেকে বিয়ের কথা চলছে। কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না। 

জুঁই তার বাবাকে খুব ভালোবাসত। বাবা ছিলেন এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি। তাদের সম্পদের অভাব ছিল না। তিনি যাই বলতেন তাই হতো। একদিন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম সম্পর্কের কথা বাসায় জানাব। জুঁইয়ের বিশ্বাস ছিল তার বাবা সবকিছু মেনে নেবেন। কিন্তু আমাদের কোনো পরিবারই সম্পর্ক মেনে নেয়নি। এই কথা শোনার পর থেকে জুঁইের পরিবার বিয়ের জন্য আরও বেশি জোর করল। তাদের এক কথা, কোনো কিছু সম্ভব নয়। 

হঠাৎ একদিন আমরা পালিয়ে যাই বাসা থেকে। ঢাকায় গিয়ে আমরা এক বন্ধুর বাসায় উঠি। আমাদের কোনো পরিবারই আর খোঁজ নেয়নি। সব সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছিল তারা। কিছুদিন পর দারাজে আমার একটা চাকরি হয়। শুরু হয় আমাদের ছোট সংসার। জুঁই সারা দিন বাসায় থাকত, রান্না করত। আর আমি চাকরি করে দিন শেষে বাসায় ফিরতাম। 

কিছুদিন পর জুঁই প্রেগন্যান্ট হয়। এই খবর শুনে আমার মা-বাবা অভিমান ভুলে ঢাকায় আসে আমাদের নেওয়ার জন্য। আমি ঢাকায় থাকি, জুঁই চলে যায় তাদের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে। জুঁই খুব ভয় পেত প্রেগন্যান্সি নিয়ে। কিছুদিন পর আমিও চলে যাই গ্রামে। এক রাতে হঠাৎ জুঁইয়ের তীব্র ব্যথা ওঠে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তার বললেন, ‘অপারেশন করতে হবে। অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার সময় জুঁই আমার হাতটি ধরে অজোরে কান্না করছিল। আমি তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলাম, ভয় পেয়ো না, আমি আছি। অপারেশন শেষে ডাক্তার জানালো, মেয়ে হয়েছে। মা ও মেয়ে সুস্থ আছে।’ 

কিন্তু কিছুদিন পর সিজার স্থানে ইনফেকশন হয়। আবার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আস্তে আস্তে জুঁইয়ের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। একদিকে ছোট বাচ্চা, অন্যদিকে তার অবস্থা। আম্মু ও আমি হাসপাতালে থাকতাম। একদিন সকালে আম্মু খেয়াল করল, জুঁই নড়াচড়া করছে না। হাত-পা প্রচণ্ড ঠান্ডা হয়ে আছে। ডাক্তার এসে জানালো জুঁই আর নেই। অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে মেয়েটা চলেই গেল। ততদিনেও জুঁইয়ের পরিবার তার কোনো খোঁজ নেয়নি। 

শেষবার জুঁই আমার হাত ধরে বলেছিল, আমার যদি কিছু হয়ে যায় তুমি মেয়েটাকে দেখে রেখ। আর আব্বুকে বলবে আমাকে যেন ক্ষমা করে দেয়। আমি শুধু ভাবছিলাম যে মেয়েটা ভালোবেসে নিজের জীবন দিয়ে দিল, তাকে আমি কিছুই দিতে পারিনি। তবে জুঁই আজও বেঁচে আছে আমাদের মাঝে। তার ভালোবাসার উপহার নিয়ে আমি বেঁচে আছি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা