ইসলামী স্থাপত্য
ইসমাইল মাহমুদ
প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৩ ১৩:৪৪ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
মৌলভীবাজারের ঐতিহাসিক গয়ঘর খোজার মসজিদ প্রাচীন স্থাপত্যকলার এক
অনন্য নিদর্শন। মসজিদের নির্মাণ নিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে নানা কাহিনী। মৌলভীবাজার শহর থেকে
প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে মোস্তফাপুর ইউনিয়নের গয়ঘর গ্রামে একটি টিলার মতো স্থানে
খোজার মসজিদের অবস্থান। মূল মসজিদ ভবনের পূর্বপাশের দেয়ালের স্তম্ভে রয়েছে ‘বাঘের পায়ের
ছাপ’। স্থানীয়রা মনে করেন, নির্মাণের সময়ে হয়তো কোনো বাঘ মসজিদের কাঁচা দেয়ালে থাবা
বসিয়েছিল। সেই থাবার চিহ্ন দেয়ালে রয়ে গেছে। বিভিন্ন সময়ে মসজিদটি সংস্কার হলেও বাঘের
থাবার চিহ্নটি রেখেই সংস্কার হয়েছে। প্রচলিত আছে, মানসিংহের কাছ থেকে বিতাড়িত হয়ে
পথে পাঠান বীর খাজা উসমান মসজিদটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। খাজা নামের অপভ্রংশ ‘খোজা’
থেকেই মসজিদের বর্তমান নামকরণ।
সুলতান বরবক শাহের ছেলে সুলতান শামসউদ্দীন ইউছুফ শাহর আমলে নির্মাণ
করা হয় খোজার মসজিদ। ১৪৭৬ সালে এটি নির্মাণ করেন হাজি আমীরের পৌত্র ও সেই সময়ের মন্ত্রী
মজলিস আলম। গবেষকদের মতে, সিলেটে হজরত শাহজালাল (র.) মসজিদ ও খোজার মসজিদের শিলালিপিতে
উল্লেখ থাকা মজলিস আলম একই ব্যক্তি। মসজিদ দুটি নির্মাণের সময়ের ব্যবধান চার বছর। খোজার
মসজিদের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ২৪ হাত। মূল মসজিদটির পাশ্চিম পাশে একটি ও উত্তর পাশে একটি
ছোট পুকুর রয়েছে। উত্তর পাশের পুকুরে প্রাচীনকাল থেকেই আবাস ‘গজার মাছ’-এর। মূল মসজিদে
প্রবেশের জন্য রয়েছে তিনটি বড় দরজা ও ছয়টি ছোট দরজা। দেয়ালের ইটের গাঁথুনি প্রায় ৬
ফুট। আর মূল গম্বুজের উচ্চতা ১৮ ফুট। মসজিদের বর্ধিত অংশে রয়েছে আরও দুটি ছোট গম্বুজ।
পুরো মসজিদ ভবনের মেঝে ও গম্বুজে রয়েছে সাদা রঙের টাইলস।
১৯৪০ সালে মসজিদের গম্বুজ ভেঙে গেলে গ্রামের মানুষের থেকে তহবিল সংগ্রহ
করে আজম শাহ নামের এক কামেল পীর মসজিদটি সংস্কার করান। ১৯৬০ সালে আরও একবার সংস্কার
হয় মসজিদটি। পীর আজম শাহ এরপর মসজিদ ছেড়ে গেলে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে মসজিদটি। ১৯৬৫-৬৬
সালের দিকে পুনরায় মসজিদটি সংস্কার করা হয়। ১৯৮৪ সালে মসজিদটি সংস্কারের সময় স্থান
সংকুলান না হওয়ায় পূর্বদিকে বর্ধিত করা হয়। সেবারে প্রাচীন স্থাপত্যকলার নিদর্শন এ
মসজিদটি সংস্কারের সময় কিছুটা আদল পরিবর্তন করা হয়। ফলে মসজিদের পুরোনো সৌন্দর্যের
অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। ২০০৯ সালে সর্বশেষ বৃহৎ সংস্কার হয় মসজিদটির। ঐতিহ্য বিবেচনায়
এলাকাবাসী মসজিদটি সংরক্ষণে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করলেও, সাড়া মেলেনি।