প্রাচীন স্থাপত্য
তানভীর হাসান
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৩ ১৩:২০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
দেশের প্রাচীনতম মসজিদের অন্যতম মুন্সীগঞ্জের বাবা আদমের মসজিদ। প্রায় সাড়ে পাঁচশ বছর ১৪৮৩ সালে বাংলার সুলতান জালাল উদ্দিন ফতেহ শাহের শাসনামলে নির্মিত হয় মসজিদটি। এর অবস্থান মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভার দরগাবাড়ি এলাকায়। মসজিদের পাশেই রয়েছে বাবা আদমের মাজার। জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, বাবা আদম মক্কার অদূরে তায়েফে ১০৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তী কালে বাবা আদম আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনের জন্য বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানির (রহ.)-এর সহচার্যে ইরাকের বাগদাদে আসেন। সেখানে তাসাউফের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ভারতবর্ষে আসেন ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য। সেন আমলে ১১৭৮ সালে তিনি ধলেশ্বরী নদীর তীরে মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমে পৌঁছেন। তখন বিক্রমপুর তথা মুন্সীগঞ্জ ছিল বল্লাল সেনের রাজত্ব। কথিত আছে ওই সালেই বল্লাল সেনের সঙ্গে যুদ্ধে শহীদ হন বাবা আদম। মিরকাদিমের দরগাবাড়ি স্থানে তাকে দাফন করা হয়। মাজারের পাশেই তার মৃত্যুর ৩১৯ বছর পরে ১৪৮৩ সালে বাংলার সুলতান জালাল উদ্দিন ফতেহ শাহের অনুরোধে নির্মাণ করা হয় বাবা আদমের নামে মসজিদটি।
ছয় গম্বুজবিশিষ্ট বাবা আদমের মসজিদের নির্মাণশৈলী মনমুগ্ধকর।
এর নির্মাণকাজ করেন মালিক কাফুর। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪৩ ফুট ও প্রস্থ ৩৬ ফুট। দেয়ালগুলো
প্রায় ৪ ফুট চওড়া। সুরকি ও ইট দিয়ে ভেতরে ওপরের অংশ গাঁথা। নির্মাণ নকশা বা স্থাপত্যকলা
অনুযায়ী মসজিদের ভবনটি উত্তর দক্ষিণে লম্বা। সম্মুখের দিকে খিলান আকৃতি প্রবেশ পথ রয়েছে।
দুই পাশে রয়েছে একই আকারের দুটি জানালা। মসজিদের সম্মুখে ওপরের দিকে খোদাই করে ফরাসি
ভাষায় কালো পাথরের ফলক রয়েছে। মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করে সামনের দিকে অগ্রসর হলে চোখে
পড়ে চার কোনায় চারটি ত্রিভুজ আকৃতির স্তম্ভ। মসজিদের খিলান, দরজা, স্তম্ভের পাদদেশে,
মেঝে এবং ছাদের কার্নিশের তলা দিয়ে পাতলা ইট কেটে মুসলিম স্থাপত্যকলার নকশা লক্ষ করা
যায়।
১৯৯১ সালে ডাক বিভাগ বাবা আদমের মসজিদের ছবি দিয়ে ডাকটিকিট
প্রকাশ করে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এর বাইরে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে মসজিদটি এবং
স্থানীয় ইদ্রাকপুর দুর্গ সংরক্ষণে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। পরিচর্চার অভাবে মসজিদের দেয়ালে
শ্যাওলা পড়েছে। মসজিদ ও মাজার কমিটির সভাপতি খন্দকার মোহাম্মদ হোসেন রেনু জানান, ১৪/১৫
বছর আগে একবার প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ থেকে মসজিদটি সংস্কার ও রঙ করা হলেও এরপর আর কোনো
উদ্যোগ নেই। মসজিদের ইমাম মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান সালেহি মসজিদের ভেতরে ফাটল তৈরির
কথা জানিয়ে বলেন, বেশি বৃষ্টিতে পানি গড়িয়ে পড়ে। মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীন,
তাই চাইলেও মসজিদ কমিটি সংস্কার কাজ করতে পারেন না।