প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৩ ১৯:৩৩ পিএম
আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৩ ১৯:৪৪ পিএম
‘ঠার : বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা’ গবেষণাগ্রন্থের জন্য লেখক, গবেষক ও অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমানকে সংবর্ধনা দেয় পাঞ্জেরি পাবলিকেশন। প্রবা ফটো
বেদে জনগোষ্ঠীর নিজস্ব একটি ভাষা থাকলেও তা অনেকের কাছে অজানা। বেদেরা অবহেলিত ও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত থাকায় ভাষাটি রক্ষার কোনো উদ্যোগ নিতে পারছে না। গবেষণা কিংবা তথ্যবহুল লেখা না থাকায় ভাষাটি হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে লেখক, গবেষক ও অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান ভাষাটি নিয়ে গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশ করায় ভাষাটি রক্ষা পাবে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা।
শুক্রবার (৩ মার্চ) বিকালে রাজধানীর শান্তিনগরে পাঞ্জেরি পাবলিকেশনস মিলনায়তনে ‘ঠার : বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা’ গবেষণাগ্রন্থ রচনার মধ্য দিয়ে বেদেভাষা সংগ্রহ ও সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের জন্য ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক প্রাপ্তি উপলক্ষে লেখক, গবেষক ও অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমানকে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বইটির প্রকাশক পাঞ্জেরি পাবলিকেশন।
পাঞ্জেরি পাবলিকেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল হাসান শায়কের সভাপতিত্বে আবৃত্তি শিল্পী মজুমদার বিপ্লবের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও নাট্যজন ড. অনীত রায়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক কবি ও প্রাবন্ধিক মিনার মনসুর, বিশিষ্ট নাট্যজন ও শিক্ষাবিদ ড. রতন সিদ্দিকী, স্থপতি ও নাট্যকার শাকুর মজিদ, ডিআইজি মোশতাক আহমেদ প্রমুখ।
মোশতাক আহমেদ বলেন, ’স্যার শুধু পুলিশ নয় একজন মানবিক মানুষও। একটা রিস্ক কীভাবে নিতে হয় তিনি জানেন। পেশার বাইরেও দেশ-জাতি ও মানুষের জন্য অনেক কিছু করেছেন। তিনি চান পুলিশ-সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা সম্পর্ক থাকুক।’
শাকুর মজিদ বলেন, ’বেদে সম্প্রদায়ের যে একটা ভাষা আছে তা কেউ প্রকাশ করেনি। বেদেদের সক্ষমতা না থাকায় তারাও ভাষাটি সংগ্রহ করতে পরেনি। এই ভাষা নিয়ে লেখার কেউ আগ্রহও দেখায়নি। অবশেষে একটি কেসকে তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের চাকরি করা অনুসন্ধানী এই লেখক অসাধ্যকে সাধন করে দীর্ঘ গবেষণা করে বইটি লিখে একটি ভাষাকে টিকিয়ে রাখলেন।’
রতন সিদ্দিকী বলেন, ’অবহেলিত, অনাদৃত বেদেদের ঠার ভাষাকে তিনি রক্ষা করেছেন। পুলিশের পেশায় থেকেও হাবিবের অনেক লেখা তাক লাগিয়ে দিয়েছে।’
মিনার মনসুর বলেন, ’এখন মেলায় যে বই বের হয় তার অর্ধেক কবিতা। কারণ কবিতা লেখা সহজ। কেউ গবেষণা করে ভালো কিছু লিখতে চায় না। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরাও গবেষণাকাজ করেন না। আমরা দেখি প্রতিবছর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার বরাদ্দ খরচ করতে পারেনি। কিন্তু একজন পুলিশ অফিসার এমন একটি কঠিন গবেষণা করে আমাদের তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।’
হাবিবুর রহমান বলেন, ’আমাদের চোখের সামনে থেকে একটি ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। সেই আক্ষেপ থেকে আমি ভাষাটি নিয়ে গবেষণা শুরু করি এবং শত বিপত্তি পেরিয়ে ভাষাটি রক্ষার জন্য বইটি প্রকাশ করি।’
ড. অনিত রায় বলেন, ’লেখক তার সহজ লেখনীর মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় ভাষাটি ফুটিয়ে তুলেছেন। তুলে এনেছেন সম্প্রদায়ের আদ্যোপান্ত। এই বই পড়লে সম্প্রদায়টি সম্পর্কে অজানা সব কথা জানা যাবে।’
কবি নূরুল হুদা বলেন, ’আমাদে চোখের সামনে ঘুরে বেড়ায় এই সম্প্রদায়। অথচ তাদের সম্পর্কে অনেক তথ্যই আমরা জানি না। এই সম্প্রদায় নিয়ে খুব একটা গবেষণায়ও হয়নি। ফলে সম্প্রদায়ের ভাষাটি বিলুপ্ত হতে চলছিল। নিজ উদ্যোগে লেখক জটিল এই গবেষণা করে একটি সম্প্রদায়ের ভাষাকে রক্ষা করে দিলেন।’