প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৩ ১৯:৩০ পিএম
আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৩ ১৯:৪৮ পিএম
অনুষ্ঠানে ৫০ জন গারো নৃত্যশিল্পী তুলে ধরেন উৎসবের গল্প। প্রবা ফটো
নতুন ফসল উঠলে উৎসবের ধুম পড়ে গারোদের গ্রামে গ্রামে। দূর পাহাড়ের উপত্যকায় দেবতা তাতারা রাবুগার উদ্দেশে নিবেদন করা হয় সোনালি ফসল। আগামী বছর যেন ফসল ভালো হয়, পরিবার-পরিজন যেন ভালো থাকে, দেশের যেন মঙ্গল হয়—এই কামনায় গারো সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব এই ওয়ানগালা অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে প্রশিক্ষণ বিভাগের ব্যবস্থাপনায় ক্ষুদ্র জাতিসত্তা গারোদের ওয়ানগালা নৃত্য কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে ৫০ জন নৃত্যশিল্পী তুলে ধরেন সেই চিরায়ত উৎসবের গল্প।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় ওই আয়োজনে অতিথি ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, প্রশিক্ষণ কর্মসূচির দুই প্রশিক্ষক হালুয়াঘাটের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ইনস্টিটিউটের মালা মার্থা আরেং ও প্রভাতী রাংসা। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক রেজাউল হাশিম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির সচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ৫০টি সম্প্রদায়ের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের জীবন নিয়ে আঁকা ১৫০টি চিত্রকর্মের একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘২০১০ সালের সরকারি হিসেবে ২৭টি সম্প্রদায় রয়েছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের যে বর্ণিল সংস্কৃতি রয়েছে তার মাঝে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সংস্কৃতি অন্যতম। বিশ্বের বহু দেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী হারিয়ে গেছে। এসব জাতি সম্পর্কে তারা জাদুঘরে গিয়ে জানতে পারছে। এ সম্প্রদায়ের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা করার চেষ্টা সরকার করছে। আমাদের অভিধান থেকে লুপ্তপায় সংস্কৃতি কথাটি মুছে ফেলতে হবে। শিল্পকলা একাডেমির পক্ষে দেশের ৫০টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর গান ও নৃত্য সংরক্ষণের চেষ্টা চলছে। এগুলোকে আমরা লুপ্ত হতে দেব না।’
প্রশিক্ষক মালা মার্থা আরেং বলেন, ‘চার দিনের এ কর্মশালায় শুধু গারোরা নয়, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ অংশ নিয়েছেন। আমাদের এমন প্রশিক্ষণের সুযোগ খুব নেই। এ প্রশিক্ষণে আমাদের সংস্কৃতি কতটা সমৃদ্ধ, তা জেনে অনেকে অবাক হয়েছে। আমাদের ৪৬টি নৃত্য ছিল। এখন পঁচিশ থেকে ত্রিশটি নৃত্য আমরা করতে পারছি। বাকিগুলো হারিয়ে গেছে। গারোদের এই নবান্ন উৎসবে নৃত্যের মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতি আদরে টিকে থাকুক।’
তিনি বলেন, ‘সারা পৃথিবী মারাত্মক লড়াইয়ে লিপ্ত। কে শ্রেষ্ঠ তা প্রতিষ্ঠার জন্য মরিয়া হয়ে লড়ছে সবাই। বিশ্ব সভ্যতা ও মানবতা রক্ষা করতে প্রাচ্যকে ভূমিকা রাখতে হবে। এসব কথা মাথায় রেখেই আমাদের শিল্পচর্চা করতে হবে। সৃজনশীল মানুষকে শ্রদ্ধা জানালে, তার পাশে দাঁড়ালে ভারসাম্যহীনতা থাকবে না।’ নৃত্য পরিবেশনার আগে নৃত্যশিল্পীদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।