প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৩ ১৮:২০ পিএম
আপডেট : ০৩ মে ২০২৩ ২১:৪৬ পিএম
তরুণরাই বাংলাদেশের আগামীর গতিপথ নির্ধারণে কর্মকৌশল নির্ধারণ করবে বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
তিনি বলেন, ‘শিল্পপ্রযুক্তির উৎকর্ষতায় আগামীর পৃথিবী তারা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে, তা কেবল তারাই ঠিক করবে।’
বুধবার (৩ মে) বিকালে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৯৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
‘জাহানারা ইমামের আন্দোলন : তরুণদের করণীয়’ শিরোনামের ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
অনুষ্ঠানে ‘জাহানারা ইমামের আন্দোলন : তরুণদের করণীয়’ শিরোনামে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক মারুফ রসূল।
আলোচনায় অংশ নেন শহীদসন্তান নুজহাত চৌধুরী, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী, সমাজকর্মী হাসান আব্দুল্লাহ বিপ্লব, লেখক-সাংবাদিক সুশীল মালাকার প্রমুখ।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ’আরও অনেকের মতো আমিও মনে করতাম এ দেশের তরুণরা প্রতিবাদ করতে পারে না। তবে গণজাগরণ মঞ্চের সময় দেখলাম তারা দলে দলে পথে নেমে এসেছে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ছেড়ে। তারা প্রতিবাদ জানিয়েছে। সেই থেকে আমি তরুণদের নিয়ে ভীষণ আশাবাদী। কোনো ভয় নেই, কারণ তারা রেডি আছে।’
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ’মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে থেকে তরুণরা তাদের জগৎকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে, কীভাবে দেশকে সে জায়গায় পৌঁছে দেবে, সেই কৌশল তারাই ঠিক করবে। তারা প্রয়োজনে আমাদের ডেকে নেবে।’
মোস্তাফা জব্বার অনুষ্ঠানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে বলেন, ’এখন শারীরিক নিরাপত্তার চেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা। কেউ যদি মানহানির মিথ্যা মামলা দিয়ে কাউকে অপদস্থ করে, তবে সেই দোষ কি আইনের?’
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ’আমাদের যে কারিগরি সক্ষমতা রয়েছে, তাতে আমরা ফেসবুক, ইউটিউব বা টিকটকের নির্দিষ্ট কোনো কনটেন্ট বন্ধ করতে পারি না। ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়ার কথা ওঠে। তবে আমাদের দেশের তিন লাখ ছেলেমেয়ের আয়ের সরাসরি উৎস ফেসবুক। ইচ্ছে করলেই কি আমরা সে ঘরে তালা মেরে দিতে পারি?’
তিনি বলেন, ’দেশে এখন সাংস্কৃতিক সংকট বিরাজ করছে। সংস্কৃতিচর্চার সবটা কেবল উদীচীর কাঁধে চাপিয়ে দিলে চলবে না। বাঙালির পরিচয়ই তো সংস্কৃতির শক্তি। সেখানে আরও কাজ করতে হবে।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ’আজকে দেশের অনেক মানুষের মনোজগতে সাম্প্রদায়িকতার আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। সেখানে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নাগরিকদের আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। জাহানারা ইমামের আন্দোলন আমাদের সেই পথ দেখায়।’
সকালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সদস্যরা।
বাংলা একাডেমিতে স্মরণসভা
বুধবার সকালে জাহানারা ইমাম স্মরণে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
‘জাহানারা ইমামের প্রবহমান লড়াই : যুদ্ধস্মৃতির উদ্ভাসন ও গণহত্যাকারীদের বিচার’ শীর্ষক একক বক্তৃতা প্রদান করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক বাচিকশিল্পী রূপা চক্রবর্তী।
সম্মানিত অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নাফরিজা শ্যামা। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
মফিদুল হক বলেন, ‘জাহানারা ইমাম মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি নিজ পুত্রকে এগিয়ে দিয়েছেন যুদ্ধের পথে, মৃত্যুর ঝুঁকিময় অভিযাত্রায়। যুদ্ধে শহীদ পুত্রের হারিয়ে যাওয়ার দুর্ভার বেদনা বহন করে লিখেছেন যুদ্ধদিনের অভিজ্ঞতার অসাধারণ বয়ান ‘একাত্তরের দিনগুলি’, যে-গ্রন্থ তাকে এমন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে, যা একান্ত তুলনাহীন।’