‘বিশ্বের সব মাতৃভাষা রক্ষা করবে বাংলাদেশ’

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রায় ১০০ বিদেশি শিল্পীদের অংশগ্রহণে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। 

বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানান প্রায় ১০০ বিদেশি অতিথি ও শিল্পী। বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি দূতাবাসের সমন্বয়ে বিভিন্ন দেশের শিল্পীরা সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন। বিশ্ব মায়ের সুর-সংগীত-বাণী শিরোনামে প্রতি বছরের মতো এবারও শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে পালিত হয় অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের নানা কর্মসূচি। 

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভাষাভাষিদের শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়।

আয়োজন শুরু হয় বেলা ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহান ভাষা শহীদদের প্রতি  শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে। একাডেমির আয়োজনে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানান বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষাভাষির আমন্ত্রিত বিদেশি অতিথি, রাষ্ট্রদূত ও শিল্পীরা। এরপর মহান ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সম্মিলিতভাবে দেশি-বিদেশি শিল্পীদের অংশগ্রহণে পরিবেশিত হয় জাতীয় সংগীত ও অমর একুশের গান। আমন্ত্রিত বিদেশি অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সম্মানিত মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এরপর উদ্বোধনী বক্তব্যে মহাপরিচালক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলা ভাষার সঙ্গে আমরা বিশ্বের সব মাতৃভাষাকেই সম্মান জানাতে চাই। সব বিদেশি দূতাবাসকে আমরা ধন্যবাদ জানাতে চাই যারা আমাদের এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য শিল্পীদের পাঠিয়েছেন এবং সহযোগিতা করেছেন।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বের কোথাও কোনো দেশে যুদ্ধ হোক, সংঘাত হোক আমরা তা চাই না, আমরা শান্তি চাই, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এটিই আমাদের মূল বার্তা।’

সাংস্কৃতিক পর্বে সব দেশি-বিদেশি শিল্পীরা শহীদদের স্মরণে সমবেত সংগীত পরিবেশন করেন। এরপর ইন্দোনেশিয়ার ভাষায় ‘ওয়ান্ডারল্যান্ড ইন্দোনেশিয়া ডান্স’ পরিবেশিত হয়। নেপাল দূতাবাসের পরিবেশনায় নৃত্য পরিবেশন করেন নেপালি শিল্পী নিতা খাদকা, রিতু চালিসে, সাদিকচিয়া সিনজালি মাগার। এরপর হিন্দি কবিতা আবৃত্তি করেন ভারতের ড. পুনম গুপ্তা। ধারাবাহিক আয়োজনে রাশিয়ান কালচারাল সেন্টারের পরিবেশনায় বাংলা এবং রাশিয়ান ভাষায় ছিল কবিতা, আবৃত্তি করেন আলগা রয়। এরপর জার্মানের পরিবেশনা উপস্থাপন করেন এলিসা ওয়ার্নার। তিনি আবৃত্তি করেন ইংরেজি কবিতা। এরপর চীনের নৃত্যশিল্পীবৃন্দ উপস্থাপন করেন মার্শাল আর্ট নৃত্য। নেপালের শিল্পী আর্জুন ক্যাফল আবৃত্তি করেন কবিতা ‘প্রতিবিম্ব’। অমর একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে গান ‘একুশের ফেব্রুয়ারি’ ও ‘আমি বাংলার গান গাই’ জাপানিজ ও বাংলা ভাষায় পরিবেশন করেন সুনসুকে মিজুতানি এবং মায়ে ওয়াতানাবে। এরপর সোমালিয়ার সংগীত শিল্পীরা সোমালি ভাষায় সংগীত পরিবেশন করবেন।

এরপর কোরিয়ার ভাষায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি থেকে কবিতা পাঠ করেন কোরিয়ান শিল্পী। এরপর ঘানার স্থানীয় ভাষায় কবিতা আবৃত্তি করেন সেদেশের শিল্পী। সবশেষে বাংলাদেশের ঢাকা সংস্কৃতিক দল পরিবেশন করে সমবেত সংগীত ‘ভাষার জন্য যারা দিয়ে গেছে প্রাণ, ও আমার গানের ভাষা, ভেবো না গো মা, ইতিহাস জানো তুমি আমরা।’ এর মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা শেষ হয়।

দ্বিতীয় পর্বে জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয় সন্ধ্যা ৬টায়। সন্ধ্যার এ আয়োজনে অংশ নেন বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিল্পীরা। এ পর্বের শুরুতেই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যদল পরিবেশন করে ‘আমি দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা।’ এরপর রাশিয়া কালচারাল সেন্টারের পরিবেশনায় রাশিয়ান ভাষার গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে সেদেশের শিল্পীরা। ইরান দূতাবাসের পরিবেশনায় ছিল আবৃত্তি। ইন্দোনেশিয়ার শিল্পীরা পরিবেশন করেন ওয়ান্ডারল্যান্ড ইন্দোনেশিয়া নৃত্য। নেদারল্যান্ডের পরিবেশনায় ছিল আবৃত্তি।

এ ছাড়াও পরিবেশনা উপস্থাপন করবেন, নেপাল, জাপান, জার্মান, রাশিয়ার শিল্পীরা। সবশেষে মালালায়াম কবিতা, নৃত্য এবং সংগীত পরিবেশন করেন ভারতের ২২ জন শিল্পী।