বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৪ ১০:০৯ এএম
আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৪ ১০:৪৫ এএম
সম্মিলিত গান পরিবেশন করছেন ছায়ানট শিল্পীরা। ছবি : সংগৃহীত
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সম্মেলক গান ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কর্নেল জামিল উদ্দীন আহমেদকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র ‘কল অব ডিউটি’ দেখানো হয়েছে এ আয়োজনে।
মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) সকালে ছায়ানট অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এ অনুষ্ঠান শুরু হয় সম্মিলিত গান পরিবেশনের মাধ্যমে। এ সময় শিল্পীদের কণ্ঠে ‘ও আমার দেশের মাটি’ উপভোগ করেন দর্শক-শ্রোতা।
আয়োজনের দ্বিতীয় পর্বে দেখানো হয় সেন্টু রায় নির্মিত তথ্যচিত্র ‘কল অব ডিউটি’। এতে দেখানো হয়েছে কর্নেল জামিলের দায়িত্বশীলতা, দেশপ্রেম এবং বঙ্গবন্ধুকে রক্ষার তাড়না।
তথ্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু এবং কর্নেল জামিল হত্যার দিনের বর্ণনা দিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়েছেন কর্নেলের মেয়ে তাহমিনা এনায়েত, আফরোজা জামিল কঙ্কা, কারিশমা জামিল এবং ভাতিজি নাজনীন হক মিমি।
তারা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সামরিক সচিব কর্নেল জামিল উদ্দীনকে শেষবারের মতো কল দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু কর্নেল জামিলকে বলেছিলেন, তাঁকে আক্রমণ করা হয়েছে, ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি ঘেরাও করা হয়েছে। পরে লাইন কেটে যায়।
যে কালরাতে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল, নগরীকে ঘিরে ধরেছিল অনিশ্চয়তা, দেশের নেতৃত্ব অচল হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু কর্নেল জামিল তার দায়িত্ব থেকে সরে আসেননি। তিনি সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউল্লাহসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কল করেন এবং তাদের সেনা পাঠাতে বলেন। প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টকে বঙ্গবন্ধুকে রক্ষার নির্দেশ দেন এবং ৩২ নম্বর রোডের বাড়ির দিকে ছুটে যান।
এর আগে শান্তভাবে নিজের পিস্তল খাপে রেখে আমাদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর বিপদ। কীভাবে আমি না গিয়ে পারি! অন্ধকার ভেদ করে গাড়ি নিয়ে চলে যান ৩২ নম্বর রোডের বাড়ির দিকে।
তবে সোবহানবাগ মসজিদের কাছে পৌঁছালে পিজিআর কনভয় কর্নেল জামিলকে থামায়। তিনি কারণ জানতে চান। তাকে বলা হয়, সামনে সেনা ইউনিট রয়েছে এবং গোলাগুলি চলছে। তিনি সেনাদের সামনে এগোনোর জন্য বোঝাতে চেষ্টা করেন। সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরে তিনি জিপে চেপে বসেন এবং নিজে গাড়ি চালিয়ে ৩২ নম্বর রোডে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় গুলি করা হয় আমাদের পিতাকে। গাড়ির ভেতর লুটিয়ে পড়েন তিনি। যিনি অন্যদের মতো বঙ্গবন্ধুকে রক্ষার শপথ নিয়েছিলেন।
নীতি ও কর্তব্যের প্রতি অবিচল আনুগত্য কর্নেল জামিলকে দেওয়া হয়েছে শহীদের মর্যাদা। যে রাতে অনেক সাহসী মানুষ দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগেছেন, সে রাতে কর্নেল জামিল একচুলও টলেননি তার কর্তব্যবোধ থেকে। সাহসিকতার চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন। জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন কর্তব্যবোধকে।
২০১০ সালে কর্নেল জামিলকে মরণোত্তর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদবি দেওয়া হয় এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই সকালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাঁচানোর জন্য যে অসীম সাহসিকতা দেখিয়েছিলেন, তার স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে বীরউত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
প্রদর্শনী শেষে সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন ছায়ানট শিল্পীরা।