প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:০৯ পিএম
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:২৮ পিএম
পার্বত্য চট্টগ্রামের গহীন মিয়ানমার এবং ভারত সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আমাদের দেশের অধিকাংশ বড় বড় পাহাড় চূড়াগুলো অবস্থিত। হিমালয়ের নিরিখে এ চূড়াগুলোর উচ্চতা অনেকটাই কম হলেও ভৌগলিক অবস্থান, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে দুর্গম এসব এলাকা। কখনও কখনও জীবনের ঝুঁকি নিয়েও দীর্ঘ আট বছরের চেষ্টায় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাতটি চূড়ায় অভিযান সম্পন্ন করেছেন সাংবাদিক, অভিযাত্রী রিয়াসাদ সানভী। আর এই অভিযান নিয়ে একুশে বইমেলা ২০২৩-এ প্রকাশিত হয়েছে সানভীর বই ‘বাংলাদেশের সপ্তশৃঙ্গে’।
এসব অভিযানে কখনও প্রাকৃতিক বাঁধা অতিক্রমে তাকে নিতে হয়েছে চরমতম ঝুঁকি। তিনি লিখছেন, ‘সত্যিই তখন মৃত্যু চিন্তা ভালো ভাবে ভয় দেখাচ্ছিল। কিন্তু আমরা নিরুপায়, সামনে এগিয়ে যেতে হলে স্রেফ ঝাঁপ দিতে হবে রেমাক্রির দুরন্ত স্রোতে। আর পেছনে ফেরারও উপায় নেই। প্রায় ১ ঘণ্টা পর আলো অনেক কমে যাবে। যে পথ পেরিয়ে এসেছি সে পথে ফেরা সম্ভব না। নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলাম। তৌহিদের সঙ্গে এসে দাঁড়ালাম নাইক্ষ্যংয়ের একেবারে মুখে। কিন্তু নিচের অবস্থা দেখে কেমন বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল। নাহ, আমি পারব না।’
আবার কখনও অভিযানে গিয়ে গহীন দুর্গম সীমান্ত এলাকায় সন্ত্রাসীদের মুখোমুখি হয়ে যাবার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বেঁচে এসেছেন ভাগ্যগুণে। সেই গল্প আছে বইয়ের পৃষ্ঠাজুড়ে- ‘অনেকক্ষণ ধরে মাথার ওপর টর্চের আলো এদিক থেকে ওদিকে ঘুরতে লাগল। আলো আসছে সেই ক্যাম্পের দিক থেকে। ভয়ে একেবারে যেন অসাড় হয়ে গেলাম। যেকোন মুহূর্তে গুলি করতে পারে।’
পার্বত্য চট্টগ্রামের ভুবন ভোলানো সৌন্দর্যের সোদা গন্ধ লেপ্টে আছে বইয়ের পরতে পরতে। যে সৌন্দর্য দেশের মানুষের কাছে এখনও অজানা। লেখক লিখেছেন, ‘আমরা আর না দাঁড়িয়ে দ্রুত পা চালিয়ে দার্জিলিং আর লুংথন পাড়া যাত্রী ছাউনির চড়াইয়ের নিচে এসে দাঁড়ালাম। চারপাশের আলো দ্রুত কমে আসছে। কিছুক্ষণ পরেই অন্ধকার ঘিরে ধরবে। আস্তে ধীরে চড়াই ধরে ভাঙা ছাউনি ঘরের কাছে এসে বসলাম। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। সূর্য ডুবলেও দীগন্তে হালকা আভা এখনও রয়ে গেছে। টর্চের মৃদু আলোয় চড়াই-উতরাই আর দূরের কোনো পাড়া থেকে ঢোল জাতীয় কোনো বাদ্যযন্ত্রের দ্রিমি দ্রিমি শব্দ ভেসে আসছে। সময় মুহূর্তের জন্য থেমে আছে এখানে।’
মোট পাঁচটি অধ্যায়ে সাজানো আছে মূল লেখাগুলো। দেশের সর্বোচ্চ সাতটি চূড়া জয়ের পথে রোমাঞ্চকর অভিযানের বর্ণনা বইয়ের লেখাগুলো। সাতটি চূড়া এই বইয়ের মূল বিষয় হলেও মূলত দেশের সর্বোচ্চ বারোটি চূড়ার অধিকাংশে অভিযানের কথা রয়েছে এখানে। এছাড়া দেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার তিনটি লেকে (জলাশয়) যাওয়ার অভিজ্ঞতার কথাও আছে। উঠে এসেছে পার্বত্য বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর দুটি জলপ্রপাতের সচিত্র বর্ণনা। পার্বত্য চট্টগ্রামের গহীনে বসবাসকারী কিছু জাতিগোষ্ঠীর জীবন এবং সংস্কৃতির কথাও আছে। এছাড়া কোন পথে অভিযানগুলো পরিচালিত হয়েছে তার বর্ণনা রয়েছে প্রতিটি লেখার শেষে।
বাংলাদেশের সপ্তশৃঙ্গে বইটির প্রকাশক পেন্ডুলাম বুকস। পাওয়া যাচ্ছে বইমেলায় প্রকাশনীর ৫৪২ – ৫৪৩ নম্বর স্টলে।