লেখকের চোখে
ইকরাম কবীর
প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৯:৪৩ পিএম
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:৩৭ পিএম
ইকরাম কবীর। ফাইল ফটো
যেকোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করলেই কার্বন নিঃসরিত হয় এবং তা আমাদের পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ঢাকায় অমর একুশে বইমেলা এর ব্যতিক্রম নয়। আমাদের বইমেলা যত বড় পরিসরে আয়োজিত হয় এবং যত মানুষ এখানে আসেন, তা দেখে বিষয়টি আমাদের মনে আসতেই পারে। এই মেলায় যে কার্বন ফুটপ্রিন্ট তৈরি হচ্ছে, তার পরিমাপ আমরা করছি কি না তা ভেবে দেখার সময় বোধহয় এসেছে।
বই ছাপানো, বিদ্যুতের ব্যবহার, প্যাভিলিয়ন ও স্টলগুলোর কাঠামো নির্মাণ, খাবারের স্টল, ক্রেতা-দর্শকের যাতায়াত, বর্জ্য—সব মিলিয়েই প্রচুর পরিমাণে কার্বন নিঃসরিত হয়। আমাদের দেশে সার্বিক উৎপাদন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টি এখনও ভাবা হচ্ছে না। আমরা সবাই মিলে কতটা কার্বন উৎপন্ন করছি, তা আমরা জানিই না।
আমাদের বইমেলা শেষ হলে, বাংলা একাডেমি এই কাজ করে এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারে। তাহলে আমাদের টেকসই উন্নয়নের যাত্রায় আরেকটি মাত্রা যোগ হবে। মেলার কার্বন ফুটপ্রিন্ট মাপার পর আমরা বুঝতে পারব এ বিষয়ে আমাদের আর কী কী করণীয় আছে।
প্রথমেই মনে আসে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ব্যবহার করার কথা। সন্ধ্যা হলেই বাতি জ্বলবে; সেই বাতি যদি আমরা সৌরবিদ্যুতের সাহায্যে জ্বালাতে পারি তার ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। প্রশ্ন উঠতে পারে এই মেলা তো বছরে একবারই আয়োজিত হয়, মেলা শেষে ওই সৌর প্যানেলগুলো নিয়ে কী করা হবে? সৌর প্যানেলগুলো আমাদের মন্ত্রণালয় ধার দেবে কিংবা ভাড়া দেবে; মেলা শেষে অন্য কোনো অনুষ্ঠানে নিয়ে যাবে। এখানে কিছু বিনিয়োগ তো করতেই হবে। এ ছাড়া সব স্টলে যেন বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী এলইডি বাল্ব ব্যবহার করা হয়, তা নিশ্চিত করতে পারলে কার্বন নিঃসরণ অনেক কমবে।
স্টল তৈরি করার সময় অনেক প্লাস্টিকের পণ্য ব্যবহার করা হয়, যা মেলা শেষে ভেঙে ফেলার সময় বর্জ্যে পরিণত হয়। মেলার পুরো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভাবা যেতে পারে। আমাদের প্রকাশকদের জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নির্দেশনা থাকতে পারে। খাবারের স্টলগুলোতে প্লাস্টিকের বাসন নিষিদ্ধ করার কথা ভাবা যেতে পারে। বর্জ্য কমানোর অনেক পদ্ধতি আছে। পুনর্ব্যবহার করা যায় এমন অনেক সামগ্রী যেন আসলেই আবার ব্যবহার করা হয়, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া যেতে পারে।
মেলার সময় শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাস সার্ভিস চালু করলে মন্দ হয় না। তাহলে ব্যক্তিগত গাড়ি এবং স্কুটারের ভিড় মেলার আশেপাশে কমতে পারে। এই মেলার পাশাপাশি একটা ডিজিটাল মেলার আয়োজনও করা যেতে পারে, যেন যারা শুধু বই কিনতেই মেলায় আসেন তারা তাদের পছন্দের বই কিনে নিতে পারেন। আমাদের প্রকাশকরা আরেকটি কাজ করতে পারেন। যেই বইগুলো ছাপা হচ্ছে, তার ই-বই এবং অডিও-বইও তৈরি করে বিক্রি করবেন। এ কাজ করলে ছাপার বই কমে আসবে এবং কার্বন নিঃসরণও কমে যাবে।
অনেক দেশে দেখা যায়, যেকোনো বড় মেলার পর আয়োজকরা বৃক্ষরোপণ অভিযান করেন। চিন্তা করুন, মেলার আয়োজক, প্রকাশক, ক্রেতা ও দর্শনার্থী সবাই যদি একসঙ্গে নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় নতুন গাছ লাগাতে পারে তাহলেও আমাদের কার্বন ফুটপ্রিন্টের কিছুটা উপকার হয়। এই সময় সারা দেশের মানুষের আবিষ্ট মনোযোগ থাকে অমর একুশে মেলার দিকে। সময়টি কার্বন ফুটপ্রিন্ট নিয়ে সবার সচেতনতা বাড়ানোর একটা ভালো সময়।
যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের বইমেলা স্পন্সর করতে চাইবে, তাদেরকেও নিজেদের কাজে কার্বন ফুটপ্রিন্ট নিয়ে সজাগ থাকতে হবে, এমন নীতিগত সিদ্ধান্ত যদি নেওয়া যায়, তাহলে পুরো মেলার কার্বন ফুটপ্রিন্টের অনেক উন্নতি হবে।