আনিছুর রহমান
প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২২ ১৭:২৫ পিএম
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২২ ১৮:১৮ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইতে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড-এটিবি চালুর কার্যক্রম চলছে। চলতি বছর কয়েক দফায় এই প্লাটফর্মটি চালুর কথা শোনা গেলেও এখনও চালু করতে পারেনি ডিএসই কর্তৃপক্ষ। যদিও আরও ৬ মাস আগে ডিএসইর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূইয়া সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এটিবির কার্যক্রম চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার পদত্যাগের পর এ কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। তবে সম্প্রতি এ কাজে কিছুটা গতি এসেছে। এরই মধ্যে তালিকাভুক্তির জন্য অনুমোদন পেয়েছে লংকা বাংলা সিকিউরিটিজ লিমিটেড। এ ছাড়া বেঙ্গল মিট ও এএফসি হেলথের মতো প্রতিষ্ঠান এটিবিতে তালিকাভুক্তির আবেদন করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অলটারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডকে একটি গতিশীল এবং পরিচ্ছন্ন প্লাটফরম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় ডিএসই। এজন্য উৎপাদনে আছে এমন যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানকেই তালিকাভুক্ত করতে চায় ডিএসই কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের পার্পেচ্যুয়াল বন্ড তালিকাভুক্ত করা হবে। এসব বন্ড অনুমোদনের সময় এটিবিতে লেনদেনের শর্ত দেওয়া হয়েছিল।
এ তো গেল নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির চিত্র। কিন্তু ডিএসইতে তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানি ওভার দ্য কাউন্টার-ওটিসি প্লাটফর্মে স্থানান্তরিত হয়েছিল, সেগুলো এটিবিতে তালিকাভুক্তির ইচ্ছা নেই ডিএসই কর্তৃপক্ষের। যদিও গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর এক নির্দেশনায় ওটিসিতে থাকা ১৮টি কোম্পানিকে এটিবিতে স্থানান্তরের নির্দেশনা দিয়েছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি। সে অনুযায়ী গত আগস্টে ডিএসই অলটারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড রেগুলেশন ২০২২-এর অনুমোদনও দেয় বিএসইসি।
ওটিসিতে থাকা কোম্পানিগুলোকে এটিবিতে স্থানান্তরে বিএসইসির নির্দেশনায় আশাবাদী হয়েছিলেন আটকে যাওয়া বিনিয়োগকারীরা। আশায় ছিলেন এটিবি প্লাটফর্ম চালু হলে তাদের বিনিয়োগ ফেরত পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।
এ বিষয়ে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, ‘উৎপাদন বা কার্যক্রমে না থাকায় ওটিসির কোম্পানিগুলো এটিবিতে আপাতত তালিকাভুক্ত করা হবে না। সম্প্রতি কয়েকটি কোম্পানির উদ্যোক্তারা এটিবিতে তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন করেছে। এটিবিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা দুইয়ের অধিক হলেই এটিবি প্লাটফর্মে লেনদেন শুরু হবে। আর পুঁজিবাজারে ব্যাংকের এক্সপোজার সমস্যা সমাধান হলেই বন্ডের লেনদেন শুরু করা সম্ভব হবে।’
কিন্তু ওটিসির কোম্পানিগুলো এটিবিতে তালিকাভুক্ত না হলে কীভাবে লগ্নিকৃত অর্থ ফেরত পাবেন বিনিয়োগকারীরা—এমন প্রশ্নের জবাবে বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, ‘যেসব কোম্পানি এটিবিতে তালিকাভুক্তির শর্ত পূরণ করবে, তাদেরকে ওই বোর্ডে তালিকাভুক্তি করতে হবে। আর যেসব কোম্পানি এটিবির তালিকাভুক্তির শর্ত পূরণ করবে না, সেসব কোম্পানির জন্য বিএসইসি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে, যেন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা হয়।’
গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর ওটিসির ১৮টি কোম্পানিকে এটিবিতে তালিকাভুক্তির নির্দেশনা দিয়েছিল বিএসইসি। প্রয়োজনীয় শর্ত পালন করে নির্দেশনা অনুযায়ী এটিবিতে যাবে নিচের ১৮টি কোম্পানি। সেগুলো হলো—বাংলা প্রসেস ইন্ডাস্ট্রিজ, ড্যান্ডি ডায়িং, ডায়নামিক টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ, মেটালেক্স করপোরেশন, মিতা টেক্সটাইলস, মডার্ন সিমেন্ট, মডার্ন ইন্ডাস্ট্রিজ, মোনা ফুড প্রোডাক্টস, পারফিউমস কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, পেট্রো সিনথেটিকস প্রোডাক্টস, ফার্মাকো ইন্টারন্যাশনাল, কাসেম সিল্ক মিলস, কাসেম টেক্সটাইলস মিলস, রাসপিট ইনস বিডি, রোজ হ্যাভেন বলপেন, সালেহ কার্পেট মিলস, শেরপুর টেক্সটাইল মিলস, থেরাপিউটিকস বাংলাদেশ, জাগো করপোরেশন ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। রেগুলেশন অনুযায়ী ওটিসিতে থাকা কোম্পানিগুলোর মোট শেয়ারের ৫০ শতাংশ শেয়ার ডিমেট বা ইলেক্ট্রনিক আকারে থাকলেও এটিবিতে তালিকাভুক্ত হতে পারবে। সেই হিসেবে ওটিসিতে পাঠানো ইউনাইটেড এয়ার লিমিটেডের এটিবি তালিকাভুক্তির যোগ্য হলেও তা হচ্ছে না। কারণ ডিএসই কর্তৃপক্ষ উৎপাদন বন্ধ বা কার্যক্রমে নেই এমন কোম্পানিকে এটিবিতে তালিকাভুক্ত করবে না। তবে মিতা টেক্সটাইলসহ কয়েকটি কোম্পানি উৎপাদনে থাকলেও শেয়ার ডিমেট আকারে না থাকায় এটিবিতে তালিকাভুক্ত হতে পারছে না।