× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মৌসুমেও অস্বাভাবিক লবণের দাম

এস এম রানা, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:৩৭ পিএম

আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:৪৮ পিএম

মৌসুমেও অস্বাভাবিক লবণের দাম

লবণ উৎপাদনের ভর মৌসুম চলছে। শুষ্ক মৌসুমে দেশে প্রতিমাসে দুই লাখ টনের বেশি লবণ উৎপাদন হয়। কিন্তু গত দুই মাসে লবণ উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৭০ হাজার টন। ফলে উৎপাদন মৌসুমেও কমছে না পণ্যটির দাম। আবার ১ ফেব্রুয়ারি থেকে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কথা রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে আয়োডিন যুক্ত প্রতিকেজি ভ্যাকুয়াম লবণ দাম কেজি প্রতি ২-৩ টাকা বাড়তে পারে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। 

ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ে বর্তমানে প্রতিবস্তা (২৫ কেজি) আয়োডিনযুক্ত ভ্যাকুয়াম লবণ বিক্রি হচ্ছে ৮৯০-৯১০ টাকার মধ্যে। যা সাধারণত মৌসুমের সময় ৫৫০-৬২০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। 

একইভাবে শিল্পের কাঁচামালের জন্য ব্যবহৃত প্রতিবস্তা (৭৪ কেজি) আয়োডিনবিহীন লবণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা দামে। যা মৌসুমের সময় সর্বোচ্চ ৭০০-৭৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। এমনকি গত মে পর্যন্ত প্রতিবস্তা আয়োডিনবিহীন লবণের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা। 

দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে চাক্তাই এলাকার হাজি আহমদ লাল মিয়া সল্ট ইন্ড্রাষ্ট্রিজের সত্তাধিকারি মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, গত বছর চার লাখ টন লবণ সংকট ছিল। চাহিদা পূরণ করতে লবণ আমদানির কথা ছিল। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে লবণ আমদানি হয়নি। এ কারণে দাম বেড়েছে। আবার মহেশখালী ও বাঁশখালীসহ বিভিন্ন উপজেলায় এখন লবণের মাঠ কমেছে। ফলে উৎপাদনও কমেছে। তার ওপর বৈরি আবহাওয়ার কারণেও লবণ উৎপাদন কমে গেছে। সবমিলিয়ে চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। এখন প্রতিদিন ৯ হাজার মে. টন লবণের চাহিদা আছে। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে চার হাজার মে. টন। চাহিদা ও জোগানের সামঞ্জ্য না থাকায় সংকট হচ্ছে।

কোহিনূর সল্টের স্বত্বাধিকারী মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, চাহিদার তুলনায় লবণের উৎপাদন ঘাটতি রয়েছে। উৎপাদন মৌসুম হিসেবে এই সময়ে সাধারণত লবণের দাম থাকে সর্বনিম্ন। কিন্তু গত মে মাস থেকে পণ্যটির দাম টানা বেড়েই চলেছে। এমনকি উৎপাদন মৌসুমে কমছে না পণ্যটির দাম। 

তিনি আরো বলেন, আগের চেয়ে উৎপাদন বাড়লেও বছর বছর চাহিদাও বেড়ে চলেছে। উৎপাদিত লবণের চেয়ে প্রায় ৫ লাখ লবণের ঘাটতি ছিল গত বছর। যা প্রতিবছর আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে চলতি বছরে এই পর্যন্ত লবণ আমদানি হয়েছে মাত্র দেড় লাখ টন। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ ঘাটতি থাকায় মূলত পণ্যটির দাম না কমে উল্টো বেড়ে চলেছে। 

উৎপাদন কম হওয়ার বিষয়ে কক্সবাজার টেকনাফ এলাকার লবণচাষী রবিউল আলম বলেন, লবণ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য রাতে শীত আবার দিনে কড়া রোদ দরকার। কিন্তু বৈরি আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন খুব কম হচ্ছে। 

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্যমতে, দেশে নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত সাত মাস লবণ উৎপাদনের মৌসুম। চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) দেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন। সেই হিসেবে প্রতিমাসে সাড়ে তিন লাখ টন লবণ উৎপাদন প্রয়োজন। কিন্তু গত দুই মাসে উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৭০ হাজার টন।  

গত মৌসুমে (২০২১-২২) সারা দেশে মোট ১৮ লাখ ৩২ হাজার টন লবণ উৎপাদন হয়। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড। আগের বছর (২০২০-২১) লবণ উৎপাদনের পরিমান ছিল ১৬ লাখ ৫১ হাজার টন। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৫ লাখ ৭০ হাজার টন, ২০১৮-১৭ অর্থবছরে ১৫ লাখ ৭০ হাজার টন ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৮ লাখ ২৪ হাজার টন লবণ উৎপাদন হয়েছিলো।

বিসিক চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক (শিল্প উন্নয়ন ও সম্প্রসারন) মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, বছর বছর উৎপাদন বাড়লেও সেই সাথে চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে লবণের। ফলে প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট পরিমান লবণ আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হয়। কিন্তু গত ছয় মাসে ৫ লাখ টন লবণ আমদানির কথা থাকলেও আমদানি হয়েছে মাত্র দেড় লাখ টন। ফলে সরবরাহ ঘাটতি রয়েছে। পাশাপাশি গত দুই মাস ধরে নতুন মৌসুমের উৎপাদন শুরু হলেও লক্ষমাত্রা থেকে উৎপাদনের পরিমান খুবই কম। যার ফলে বাজারে পণ্যটির দাম এখনো উর্ধ্বমুখী।

বিসিকের তথ্যমতে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৪ লাখ ৮৬ হাজার টন লবণের চাহিদাকে ঘিরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে লবণের চাহিদা ছিল ২৩ লাখ ৩৫ হাজার টন। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২২ লাখ ৫৬ হাজার টন, ২০১৯-২০ সালে ১৮ লাখ ৪৯ হাজার টন এবং ২০১৮-১৯ সালে ছিল ১৬ লাখ ৫৭ হাজার টন।

একই বিষয়ে চট্টগ্রাম লবণ মিল মালিক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. বখতেয়ার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘লবণের উৎপাদন ও চাহিদার সামঞ্জ্যতা না থাকায় দাম বাড়ছে। এই সংকট দূরীভূত করা না গেলে ভবিষ্যতে দাম আরো বাড়তে পারে।’ 

তিনি বলেন, ‘দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ৯০ শতাংশ লবণ হয় কক্সবাজার জেলায়। বাকি ১০ শতাংশ হয় চট্টগ্রামের বাঁশখালীসহ দেশের অন্যান্য উপকলীয় এলাকায়।’  

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়নের লবণচাষী রমজান আলী বলেন, ‘গত বছর মৌসুমে সময় প্রতিমণ লবণ বিক্রি হয়েছে ১৮০-২০০ টাকায়। যা এবছর বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। তবে গত বছরের তুলনায় উৎপাদন খুবই কম।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা