আলমগীর হোসেন, কালিয়াকৈর (গাজীপুর)
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:৪১ পিএম
গাজীপুরে তীব্র গ্যাস সংকটের পাশাপাশি নিয়মিত হচ্ছে লোডশেডিং। প্রবা ফটো
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে স্থাপিত বিভিন্ন এলাকায় বাসা-বাড়িসহ শিল্পকারখানায় গত কয়েকমাস ধরে তীব্র গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে ব্যাহত হচ্ছে তৈরি পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার উৎপাদন। বিশেষ করে তীব্র গ্যাস সংকটে অর্ধেকে নেমে এসেছে রফতানিমুখী কারখানাগুলোর পণ্য উৎপাদন।
দিনের বেশির ভাগ সময় লোডশেডিং আর গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। এমনিতে বর্তমানে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে রফতানিমুখী পোশাক খাত। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এ খাতের রপ্তানি লক্ষ্য। গ্যাস সংকট ছাড়াও বর্তমানে বিদেশ থেকে রফতানিমুখী পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। দেশে ব্যাপক হারে কমেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। চাপে পড়েছে দেশের বাণিজ্যিক পরিস্থিতি। এ অবস্থায় দেশের বাজারে সৃষ্টি হয়েছে মার্কিন ডলারের সংকট। এমন সময়েও আমদানির দায় পরিশোধে বাড়তি মূল্যে কিনতে হচ্ছে ডলার। এতে একদিকে আগের খোলা এলসির (ঋণপত্র) দায় পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো, অন্যদিকে নতুন এলসি খুলতেও পড়তে হচ্ছে নানামুখী জটিলতায়।
ফলে রফতানিমুখী পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। অনেক প্রতিষ্ঠান খরচের লাগাম টানতে শ্রমিক ছাঁটাই শুরু করেছে। সব মিলিয়ে বিরাট হুমকির মুখে রয়েছে রফতানিমুখী পোশাক খাত। তাই এমন পরিস্থিতি হতে দ্রুত পরিত্রান চাইছেন কারখানার মালিকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গত বছরের জুলাই থেকে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। কারখানায় উৎপাদনের জন্য যেখানে প্রতি বর্গফুটে ১৫ পিএসআই গ্যাসের চাপ থাকার কথা, সেখানে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র দুই-তিন। এছাড়া দিনের বেশির ভাগ সময় লোডশেডিং থাকায় বেশি দামে ডিজেল কিনে জেনারেটর চালু রাখতে হচ্ছে। তাই কারখানা সচল রাখতে প্রতিদিন বাড়তি খরচ হচ্ছে।
কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, কারখানায় অনেক দিন ধরেই গ্যাস সংকট রয়েছে। এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে ঘন ঘন লোডশেডিং। এতে কারখানা উৎপাদন ৪০-৫০ ভাগ কমে গেছে। জ্বালানির জন্য অতিরিক্ত ডিজেল কিনতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে অনেক। গ্যাস-সংকটে ইতিমধ্যে চাহিদা মত উৎপাদনে ঝামেলা শুরু হয়ে গেছে। সময়মতো উৎপাদন করতে না পারায় অনেকেই নিজ খরচে উড়োজাহাজে পণ্য পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন।
পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার ইকোটেক্স লিমিটেড কারখানার পরিচালক মোহাম্মদ আলম খান বলেন, গত কয়েক মাস ধরেই গ্যাসের চাপ (পেশার) নাই বললেই চলে। আমাদের চাহিদা গড়ে ১০-১২ পিএসআই কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১-২ পিএসআই। এদিকে আবার বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডসেডিং। যার ফলে আমাদেরকে ডিজেল চালিত জেনেরেটর এবং এলপি গ্যাস ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে করে প্রতিমাসে আমাদেরকে সাড়ে ৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। সবমিলিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের কারণে আমাদের উৎপাদন ৩০ শতাংশ কমে গেছে। তাই সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস আমদানি করতে হবে। এক্ষেত্রে কোন খাতে গ্যাস বেশি দরকার সেটি নির্ধারণ জরুরি। যেমন, আমাদের ডাইয়িং, নিট এবং ওভেন কারখানায় বেশি গ্যাস দরকার। এখানে গ্যাস ঠিকমত সরবরাহ করতে হবে। এব্যাপারে সরকারকে দ্রুত পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে যাতে আমরা এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারি।
মৌচাক এলাকার নিট এশিয়া লিমিটেড কারখানার জেনারেল ম্যানেজার মোঃ কামাল হোসেন বলেন, ‘গত কয়েক মাস থেকে বিদ্যুতের অবস্থা ভয়াবহ খারাপ। প্রায় লোডশেডিং হচ্ছে। আমাদের কারখানা চালাতে ডিজেল ব্যবহার করতে হচ্ছে। আর ডিজেল কিনতে গিয়ে প্রতি মাসে আড়াইকোটি টাকা বেশি বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। এছাড়া গ্যাসের প্রেশার একবারেই কম। আমাদের চাহিদা ১০ পিএসআই কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে এক- দুই পিএসআই। আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা প্রতিদিন ৩৫ টন কিন্তু উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে ১৭-১৮ টন। সে কারণে আমরা বায়ারদের ঠিক সময়ে শিপম্যান্ট করতে পারছি না। বায়ারদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে, ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সব মিলিয়ে আমরা একটা ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে আছি।’
পল্লীবিদ্যুৎ হরিনহাটি এলাকার এপেক্স ফুটওয়ার লিমিটেড কারখানার ডিজিএম এইচ আর এ্যাডমিন মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, চলমান গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে আমাদের শিল্পকারখানাগুলো। আমাদের চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট অনেকবেশি। বর্তমানে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে আমাদেরকে বেশির ভাগ সময় নিজেস্ব জেনেরেটর চালিয়েই কারখানার উৎপাদন কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এতে করে প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি খরচ করতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশংকা করা যাচ্ছে। এছাড়া আমাদের এ শিল্পবেল্টের প্রায় সবারই একই অবস্থা। সব মিলিয়ে শিল্পকারখানাগুলো একটা ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে আছে।