প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:৫৯ পিএম
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ০০:৩৪ এএম
ছবি: সংগৃহীত
গত তিন দিনের টানা দরপতনে শেয়ারবাজারে ৬ হাজার ৬০০ কোটি ডলার হারিয়েছে আদানি এন্টারপ্রাইজ। গত বুধবার নিউইয়র্কভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই কমতে শুরু করে ভারতের আদানি গোষ্ঠীর সাতটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির বাজার মূলধন।
এরই ধারাবাহিকতায় আদানি ট্রান্সমিশন এবং আদানি টোটাল গ্যাসের বাজারমূল্য কমেছে ২০ শতাংশ, আদানি গ্রিন এনার্জির ১৮ শতাংশ, আদানি পাওয়ার এবং আদানি উইলমারের যথাক্রমে ৫ শতাংশ, আদানি পোর্টস এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাজারমূল্য কমেছে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। এদিকে আদানি এন্টারপ্রাইজের পক্ষ থেকে হিনডেনবার্গের প্রতিবেদন অস্বীকার করলেও বিনিয়োগকারীদের ধরে রাখতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আদানি এন্টারপ্রাইজের ঋণ জালিয়াতি এবং কর ফাঁকির বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ। প্রতিবেদন প্রকাশের পর আদানির প্রতিষ্ঠানের ফলোঅন পাবলিক অফার-এফপিও কেনা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এবার আদানির প্রতিষ্ঠানগুলো এফপিওতে শেয়ার ছেড়েছে ৪ কোটি ৫৫ লাখ। তবে লেনদেন সময়ে বিনিয়োগকারীরা কিনেছেন মাত্র ৪ লাখ ৭০ হাজার ১৬০টি শেয়ার।
এদিকে ভারতীয় আইনানুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠান যে পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করতে চায় তার ৯০ শতাংশ বিক্রি না হলে ওই শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের পুরো অর্থ ফেরত দিতে হবে।
শুরুতে এফপিওর মূল্যসীমা ৩ হাজার ১১২ রুপি (৩৮ ডলার ২২ সেন্ট) নির্ধারণ করেছিল আদানি গোষ্ঠী। তবে শুক্রবার বাজারে এফপিওর দাম নেমে আসে ২ হাজার ৭৬১ রুপি। এফপিওর দাম কমানো এবং শিডিউল পরিবর্তনের কথা ভাবছে এফপিও ইস্যুকারী ব্যাংকগুলো। কিন্তু আদানি গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৫০ কোটি ডলারের শেয়ার বিক্রি করবে প্রতিষ্ঠানটি। তবে এমন ব্যবসায়িক বিপর্যয়ের ঘটনায় সবাই রীতিমতো স্তম্ভিত বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে গত রবিবার থেকে আদানির প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়েছেন স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে আদানি এন্টারপ্রাইজের যে ঋণের পরিমাণ ও কর ফাঁকির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা উদ্বেগজনক। তবে বিনিয়োগকারীদের এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গৌতম আদানি বলেন, তারা স্থানীয় আইনানুযায়ীই তাদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত আদানির তালিকাভুক্ত সাতটি প্রতিষ্ঠান বাজার মূলধন হারিয়েছে ৬ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। যেখানে টোটাল গ্যাস একাই হারিয়েছে ২ হাজার ১০০ কোটি ডলার। এদিকে হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে আদানির বিরুদ্ধে ‘করপোরেট জগতের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজির’ অভিযোগ করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির ঘাড়ে প্রচুর ঋণ রয়েছে, যা এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তিকে নড়বড়ে করে তুলেছে বলেও উল্লেখ করা হয়। তবে প্রতিবেদন প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় হিনডেনবার্গের বিরুদ্ধে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রে মামলা করার কথা বিবেচনা করছে আদানি এন্টারপ্রাইজ।
আদানি গ্রুপ ভারতের সবচেয়ে বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম। ভোগ্যপণ্য ছাড়াও তাদের ব্যবসা ও বিনিয়োগ রয়েছে জ্বালানি, বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর এবং অবকাঠামো নির্মাণ খাতে। ফোর্বস সাময়িকীর তথ্যমতে, আদানি গ্রুপের কর্ণধার গৌতম আদানি এখন এশিয়ার এক নম্বর ধনী এবং বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের মধ্যে তালিকায় তার অবস্থান চার নম্বরে।