প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:২৫ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে রেকর্ড বাণিজ্য হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্যমতে, গত বছর দুই দেশের মধ্যে ৬৯ হাজার ৬০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়েছে। তবে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে চীনা বেলুন ওড়ায় দুটি দেশেই উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ২০১৮ সাল থেকে তিক্ত বাণিজ্য যুদ্ধে নেমে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর শুল্ক আরোপ করায় এই বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। তবে নতুন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা চীনের তৈরি খেলনা, মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য পণ্য কিনতে অনেক বেশি অর্থ খরচ করছেন। গত বছর চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্র ৫৩ হাজার ৬৮০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। একই সময়ে চীনে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১৫ হাজার ৩৮০ কোটি ডলারের।
দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকার পরও এ বিশাল অঙ্কের বাণিজ্য থেকে এটা প্রমাণ করে যে, দেশ দুটি একে অপরের প্রতি কতটা নির্ভরশীল।
এ বিষয়ে এশিয়ান ট্রেড সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ডেবোরা এলমস বিবিসিকে বলেন, ‘দেশ দুটির দ্বন্দ্বের ফলে বিশ্ব বাণিজ্য অসুবিধার মধ্যে পড়ে। যদি তাদের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক না থাকত তাহলে বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি আরও বেশি হতো। এখনও যদি দেশ দুটির সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং ভোক্তারা নিজেদের আলাদা করতে চায় তাহলে বিশ্বে পণ্য সরবরাহ কঠিন হয়ে যাবে। ফলে ভোক্তাদের বাড়তি দামে পণ্য কিনতে হবে।’
এর আগে ২০১৮ সালে চীনের পণ্য বাণিজ্য কড়াকড়ি আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন। সে সময় দেশটির ৩০ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্য আমদানিতে শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রে। ট্রাম্প প্রশাসনের এমন পদক্ষেপের জবাবে ১০ হাজার ডলার মূল্যের আমেরিকান পণ্য আমদানিতে শুল্ক আরোপ করে চীন।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পরও এ অবস্থার উন্নতি হয়নি। তবে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য চলতি মাসে চীন সফরে যাওয়ার কথা ছিল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে একটি চীনা বেলুন যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে উড়ে বেড়ানোয় ওয়াশিংটন এবং বেইজিংয়ের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। ফলে স্থগিত হয়েছে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের চীন সফর।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আকাশে চীনা নজরদারি বেলুন আবিষ্কারের পর থেকে দেশজুড়ে সন্দেহ বিরাজ করছে।’
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে চীনা বেলুন প্রবেশ করাকে দুর্ঘটনা বলে দাবি করেছে চীন। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘এয়ারশিপটি বেসামরিক ব্যবহারের জন্য। তবে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ফলে এটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে। এটি নিছক একটি দুর্ঘটনা।’
তবে, স্টেট অব দ্য ইউনিয়নের ভাষণে জো বাইডেন চীনা বেলুন সম্পর্কে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। কিন্তু তার প্রশাসন সর্বদা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি চীনের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ এগিয়ে নিতে পারে এবং বিশ্বের উপকার করতে পারে। কিন্তু কোনো ভুল করবেন না, যেমনটি আমরা গত সপ্তাহে স্পষ্ট করে দিয়েছি। চীন যদি আমাদের সার্বভৌমত্বকে হুমকি দেয়, তাহলে আমরা আমাদের দেশকে রক্ষা করার জন্য কাজ করব।’
এদিকে চার দশকের মধ্যে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে কম হয়েছে। করোনা মহামারি এবং অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ২০২২ সালে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) গড় দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। একই সঙ্গে অর্থনীতির গতি ফিরিয়ে আনতে ব্যাংক ঋণে সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি রোধের চেষ্টা করছে মার্কিন ফেডারেল রিফার্ভ (ফেড)। গত বছরের ডিসেম্বরে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশে।
যদিও মূল্যস্ফীতির চাপ আরও ২ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ফেডের। ফলে ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা। মূল্যস্ফীতি রোধে গত বছর আটবার সুদের হার বাড়াতে বাধ্য হয়েছে ফেড।সূত্র: বিবিসি