প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:৩৫ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে আসায় যুক্তরাজ্যে বিনিয়োগ কমে ২৯ হাজার কোটি ইউরোতে ঠেকেছে। পরিবার প্রতি উৎপাদন কমে ১ হাজার ইউরো দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের আর্থিক নীতি নির্ধারণী কমিটির বহিরাগত সদস্য জোনাথন হাসকেল। তবে ব্রিটেনের অর্থ বিভাগ এ তথ্য মানতে নারাজ। এ বিষয়ে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে।
তবে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে বেক্সিট থেকে বের হয়ে আসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যুক্তরাজ্য ভোটগ্রহণ হয়। এরপর থেকেই বিনিয়োগ কমতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জোনাথন হাসকেল।
তিনি বলেন, ব্রেক্সিটের কারণে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি অন্যান্য বৃহৎ অর্থনীতির দেশের তুলনায় অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে দেশটির অর্থ বিভাগ বলছে তারা হাসকেলের পরিসংখ্যান বুঝতে পারেনি।
অপর এক গণমাধ্যম দ্য ওভারশুটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হাসকেল বলেছিলেন, যুক্তরাজ্যের উৎপাদন মন্দার মুখোমুখি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর্থিকখাত। এর মূল কারণ ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে আসার সিদ্ধান্ত। যদি ২০১৬ পর্যন্ত সময়ের দিকে তাকানো হয় তাহলে এটা সত্য যে, ২০১৬ পর্যন্ত উৎপাদনশীলতার ক্ষেত্রে বড় মন্দা ছিল কিন্তু প্রচুর বিনিয়োগ ছিল। ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ব্রিটেনে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে। কিন্তু বেক্সিটের সিদ্ধান্তে বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে। যুক্তরাজ্য এখন জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোর তালিকায় নিচে নেমে এসেছে।
২০১৬ সালে ব্রেক্সিট গণভোটের পর বিশ্বব্যাপী মহামারি দেখা দিয়েছে। একইসঙ্গে জ্বালানি সংকট তীব্র হয়েছে। বেক্সিটের কারণেই অনেক সমস্যা সহজে সমাধান করা যাচ্ছে না। ফলে বিনিয়োগ কমছে। এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফসহ অনেক অর্থনীতিবিদ বলছেন, ব্রেক্সিটকে ঘিরে অনিশ্চয়তা, উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রোটোকলের অমীমাংসিত সমস্যাসহ কিছু ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাজ্যে বিনিয়োগ কমেছে।
তবে ব্রেক্সিট গণভোট বাণিজ্য কমিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলেছিল বলে মন্তব্য করেছেন হাসকেল। তিনি বলেন, ‘বেক্সিটের কারণে ব্রিটেনকে ইইউর একচ্ছত্র বাজার ছেড়ে অন্যত্র বাণিজ্য চুক্তির সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমেছে।’
গণভোটের কারণে জিডিপির প্রবৃদ্ধি কম হওয়াকে উৎপাদনশীলতার শাস্তি হিসেবে উল্লেখ করে হাসকেল আরও বলেন, ‘একটি অর্থনীতি কতটা ভালো বা খারাপভাবে কাজ করছে তা দেখার জন্য জিডিপি একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি ১ দশমিক ৩ শতাংশ। ফলে সহজেই দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চিত্র অনুমান করা যায়।’
এদিকে প্রো-ব্রেক্সিট গ্রুপ ব্রিফিংস ফর বিজনেস দাবি করেছে ব্রেক্সিটের কারণে বিনিয়োগ কমার কোনো প্রমাণ নেই। একইসঙ্গে অর্থ বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক বাজার ছাড়ার পর যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি ফ্রান্স এবং জার্মানির চেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ব্রেক্সিটের সর্বাধিক ব্যবহার করছে। আর্থিক পরিষেবা খাতের সংস্কার করা হয়েছে। ফলে ১ লাখ কোটি ইউরোর নতুন বিনিয়োগ হবে। আমরা এই বছর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের ক্ষেত্রে ইইউ থেকে প্রাপ্ত নিয়মগুলো পর্যালোচনা করছি।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত পরিসংখ্যানগুলো থেকে দেখা যায়, যুক্তরাজ্য ২০২২ সালে অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকি এড়াতে পেরেছে। তবে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশঙ্কা করছে চলতি বছরে যুক্তরাজ্য অর্থনৈতিক মন্দার মুখে পড়তে পারে।
তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে জীবনযাপন খরচ। গত বছরের অক্টোবরে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ১ শতাংশ তবে ডিসেম্বরে এসে তা কিছুটা কমে ১০ শতাংশে নেমে আসে। খাদ্য ও জ্বালানির উচ্চ দামে যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতি ১৯৮১ সালের পর অক্টোবরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল।
এ বিষয়ে অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস জানায়, গত বছরের ডিসেম্বরে ভোক্তা মূল্যসূচক ১১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। এ হার সেপ্টেম্বরে ছিল ১০ দশমিক ১ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি বলেন, ‘জ্বালানির দাম কমার পর এ বছর মূল্যস্ফীতি দ্রুত কমতে পারে। তবে শ্রমিক সংকট দেশের অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।’ সূত্র : বিবিসি