আনিছুর রহমান
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:৫৪ পিএম
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৬:২৬ পিএম
ফাইল ফটো
অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডের (এটিবি) শর্ত ভঙ্গ করছে লংকাবাংলা সিকিউটিরিজ লিমিটেড। ৩০ কার্যদিবসে ১০ শতাংশ শেয়ার ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি করেননি প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা পরিচালকরা।
এটিবির শর্ত অনুযায়ী, ২ কোটি ৬৯ লাখ ৩ হাজার ৩৩টি শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রির কথা ছিল। তবে তারা বিক্রি করেছে ২ কোটি ৬১ লাখ ৫৭ হাজার ৪৬৩টি। অর্থাৎ, শর্তের চেয়ে ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৫৭০টি শেয়ার কম বিক্রি করা হয়েছে।
গত ৪ জানুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এটিবি প্ল্যাটফর্মে প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে লেনদেন শুরু হয় লংকাবাংলা সিকিউটিরিজ লিমিটেডের। সেই হিসেবে ৩০ দিন শেষ হয় গত মঙ্গলবার। এর মধ্যে ৮ জানুয়ারি ‘সেটেলমেন্ট ডেট’ থাকায় সেদিন লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের শেয়ার লেনদেন বন্ধ ছিল। ওই এক দিন বাদ দিলে ৩০ কার্যদিবস শেষ হয় গতকাল বুধবার।
প্রতিষ্ঠানটির পরিশোধিত মূলধন ২৬৯ কোটি ৩ লাখ ৩ হাজার ৩২০ টাকা। সেই হিসাবে তাদের শেয়ারসংখ্যা ২৬ কোটি ৯০ লাখ ৩০ হাজার ৩৩২টি।
লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার সাফাত রেজা জানান, যে পরিমাণ শেয়ার ছাড়ার কথা ছিল তার বড় অংশটি এরই মধ্যে এটিবি মার্কেটে বিক্রি করা হয়েছে। তবে ক্রেতা-সংকটে কিছু শেয়ার ছাড়া যায়নি। সময় বাড়ালে সেগুলোও ছেড়ে দেওয়া হবে।
ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, ‘লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ কতগুলো শেয়ার অফলোড করেছে, শর্ত অনুযায়ী কতগুলো শেয়ার অফলোড করার কথা ছিল, তা বিশ্লেষণ করে দেখা হবে। যদি শর্ত ভঙ্গ করে থাকে, তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম বলেন, ’এটি ডিএসইর রেগুলেশন। রেগুলেশন ভঙ্গের বিষয়টি ডিএসই বিএসইসির কাছে পাঠালে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেবে কমিশন।’
‘ডিএসই অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড রেগুলেশন-২০২২’-এর লেনদেন ট্রেডিং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, এটিবিতে তালিকাভুক্তির ৩০ দিনের মধ্যে কমপক্ষে ১০ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করতে হবে। তবে উদ্যোক্তা পরিচালকরা কোনোভাবেই ৪৯ শতাংশের বেশি শেয়ার বাজারে ছাড়তে পারবেন না। কারণ, তাদের কমপক্ষে ৫১ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ডিএসইর এটিবি বোর্ডে তালিকাভুক্তির জন্য লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের ফেয়ার ভ্যালু ছিল ১৪ টাকা ৯০ পয়সা। প্রথম দিন সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ বেড়ে লেনদেন হয় ১৫ টাকা ৪০ পয়সায়। সেদিন ৫০০ শেয়ার বিক্রি করেন প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা পরিচালকরা। পরের ছয় দিনে আরও ৪ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়। এতে সাত দিনে মোট শেয়ার লেনদেন দাঁড়ায় সাড়ে ৪ হাজারে।
এই সাত দিনের প্রতিদিনই ৫ শতাংশ হারে শেয়ার দর বেড়েছে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের। এরপর ১৬ থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ২ কোটি ৩৭ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৩টি শেয়ার লেনদেন হয়।
অর্থাৎ, লেনদেন শুরুর প্রথম ১৫ কার্যদিবসে ২ কোটি ৩৭ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩টি শেয়ার বিক্রি করেন উদ্যোক্তা পরিচালকরা। এটি নির্ধারিত শর্তের ৮৮ শতাংশ। বাকি ১৫ দিনে আরও ১২ শতাংশ শেয়ার বা ৩১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৫০টি শেয়ার বিক্রির শর্ত ছিল। কিন্তু সেই শর্ত পূরণ করেননি উদ্যোক্তা পরিচালকরা।
গত ৩০ কার্যদিবসের লেনদেন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ৩০ টাকা দরে। এর মধ্যে কোনো দিনই ক্রেতা-সংকট দেখা যায়নি। অর্থাৎ, উদ্যোক্তা পরিচালকরা ইচ্ছে করলে শেয়ার বিক্রি করতে পারতেন।
উদ্যোক্তা ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মেলবন্ধন স্থাপনের জন্য এটিবি বোর্ড চালু করে ডিএসই। পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা কোম্পানির শেয়ারের পাশাপাশি বে-মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড এবং বিভিন্ন ধরনের বন্ডের লেনদেন হবে এটিবি বোর্ডে। মূলত দীর্ঘমেয়াদি বিনিযোগকারীদের জন্যই এই ব্যবস্থা করার কথা জানিয়েছে ডিএসই।
যেকোনো সচল কোম্পানি শেষ তিন বছরের আর্থিক প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজ যুক্ত করে মাত্র ১০ হাজার টাকা দিয়ে তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন করতে পারবে। এটিবিতে তালিকাভুক্তির জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিএসইসি) কোনো অনুমোদন লাগবে না। ২০২২ সালের আগস্টে ‘ডিএসই অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড রেগুলেশন-২০২২’ অনুমোদন দেয় বিএসইসি। যা পরের মাসে গেজেট আকারে প্রকাশ করে ডিএসই।