জয়নাল আবেদীন
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:১৬ পিএম
আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৬:৫৯ পিএম
খেলাপিসহ ঋণমান অনুযায়ী নিরাপত্তা সঞ্চিত বা প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে ৮টি ব্যাংক। চলতি বছরের ডিসেম্বর শেষে এই ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৪৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকে আমানতের নিরাপত্তা কম। তাদের মতে, খেলাপি ঋণ, পুনঃতফসিল, প্রভিশন ঘাটতি সমস্যা সমাধানে একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা উচিত। ব্যাংকিং কমিশনের মাধ্যমে এর আগেও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে সরকারি ৪ বাণিজ্যিক ব্যাংক, ৩টি বেসরকারি ব্যাংক এবং একটি বিশেষায়িত ব্যাংকের সর্বমোট প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৪৬ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে যা ছিল ১৯ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা। কিছু কিছু ব্যাংক প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত প্রভিশন সংরক্ষণ করায় পুরো ব্যাংকিং খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৯ কোটি টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত ৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি ঘাটতি রয়েছে। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৩৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর পরেই রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। ব্যাংকটির ঘাটতি ৪ হাজার ৪২২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। তৃতীয় রূপালী ব্যাংকের ২ হাজার ৮১৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৩৪৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
বেসরকারি ৩টি ব্যাংকের মধ্যে নানা সমস্যায় জর্জরিত ন্যাশনাল ব্যাংকের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। এ ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি ৬ হাজার ৬১৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১৭১ কোটি ১৬ লাখ টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১৩৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এছাড়া বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) এর প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এই প্রভিশন সংরক্ষণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডেফারেল বা সময় নেওয়া আছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এটা আমার দায়িত্ব নেওয়ার আগে থেকেই ছিল। গত কয়েক বছরে আমরা অনেকটা কমিয়ে এনেছি। নতুন করে আমাদের প্রভিশন বাড়েনি। আশা করছি আগামী দু-এক বছরের মধ্যেই আমরা সম্পূর্ণ ঘাটতি পূরণ করতে পারব।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। ব্যাংক যদি প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার শঙ্কা থাকে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ব্যাংকের ওপর। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায় আমানত। ব্যাংক খাতে সমস্যা সমাধানে একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা উচিত। ব্যাংকিং কমিশনের মাধ্যমে এর আগেও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে শ্রেণিকৃত বা খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। মোট ঋণের অনুপাতে ছিল ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আর ২০২১ সাল শেষে ১৩ লাখ এক হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা ঋণ স্থিতির বিপরীতে খেলাপি ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। মোট ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ ছিল খেলাপি।