× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

‘কুইক গ্রোথ’ হলে দুর্যোগের আশঙ্কা বাড়ে

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৩ ১১:৪৮ এএম

আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২৩ ১২:০৭ পিএম

মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন।

মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন।

মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন। গত আগস্ট থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি ব্যাংকিং পেশাকে দেখেন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ হিসেবে। ৩৬ বছরের কর্মজীবনে ‘কুইক গ্রোথ’ নয়, প্রাধান্য দিয়েছেন টেকসই উন্নয়নে।

প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, তিনি সিএমএসএমইতে গুরুত্ব দিচ্ছেন, এতে জীবনমুখী সেবার পাশাপাশি তারল্যের চাপও কমছে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মজুমদার বাবু।

ইসলামিক ফাইন্যান্স ও গতানুগতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য কী?

মোশারফ হোসেন : অন্যান্য ফাইন্যান্স কোম্পানির সঙ্গে আমাদের পার্থক্যটা হলো আমরা পুরোপুরি শরিয়াহভিত্তিক। আমাদের প্রতিষ্ঠানে শরিয়াহর যেসব বিধিবিধান আছে, তার ব্যত্যয় যাতে না ঘটে, তার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিই। আর মুনাফা অর্জন আমাদের দ্বিতীয় লক্ষ্য। সুদভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একটি নির্দিষ্ট রেটের ওপর তাদের বিনিয়োগ ও আমানত নির্ধারণ করে। আর আমরা বছর শেষে মুনাফার ওপর ভিত্তি করে লাভক্ষতির যে হার আছে, তা পুনর্নির্ধারণ করি। যদিও শুরুতে আমরা একটি সম্ভাব্য হার নির্ধারণ করে দিই।

কী ধরনের পণ্যের ওপর এখন গুরুত্ব দিচ্ছেন?

মোশারফ হোসেন : ইসলামিক ফাইন্যান্সের এখন অগ্রাধিকার খাত হচ্ছে সিএমএসএমই। অর্থাৎ কটেজ, মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজেস। এখানে সুবিধা হলো বর্তমানে তারল্যের যে চাপ আছে, তা মোকাবিলায় এটা বড় ভূমিকা রাখছে। এ খাতে বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্কিম আছে। আমি যদি ভালো গ্রাহক জোগাড় করতে পারি, তাহলে ফাইন্যান্স দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখানে রি-ফাইন্যান্স ও প্রি-ফাইন্যান্সের যে সুযোগগুলো আছে, আমরা এই সুযোগগুলো নিচ্ছি।

নতুন আরেকটি সুযোগ যুক্ত হয়েছে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম। আগে বন্ধকি সম্পত্তির অভাবে যারা ঋণ নিতে পারত না, তাদের আমরা এই স্কিমের আওতায় ঋণ দিতে পারছি। এ ক্ষেত্রে নীতিমালার আলোকে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে যদি প্রস্তাবনা পাঠাই, তাহলে ওই ঋণগুলোর বিপরীতে গ্যারান্টি মিলছে। সুতরাং সিএমএসএমইতে তহবিল পাচ্ছি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে, আবার বন্ধকির বিকল্প হিসেবে নিশ্চয়তা পাচ্ছি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। 

বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এসব সুবিধায় ইচ্ছাকৃত খেলাপি বাড়ছে। আপনি কী মনে করেন?

মোশারফ হোসেন : অনেকাংশে সঠিক। ঋণগ্রহীতাদের কেউ কেউ মনে করেন এই সুবিধাগুলো অনেক দিন থাকবে। আসলে এই সুযোগগুলো সাময়িক। এই পরিস্থিতি কেটে গেলে যার ঋণ তাকেই সুদাসলে পরিশোধ করতে হবে- এই মানসিকতা আমাদের তৈরি করতে হবে।

প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের আরও বিশেষ কিছু সুবিধা দেওয়া উচিত। কিন্তু করোনা ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। বরং সুযোগ পেয়ে তারাও টাকা পরিশোধে গড়িমসি করছেন। এজন্য নীতিনির্ধারকদের আসলে আরও গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত, কারা সুযোগ পাবেন-কারা নয়। এখানে ব্যাংকারদেরও দায় আছে। একটি বিষয় মাথায় রাখা উচিত, ফাইন্যান্সটা কে করল দ্যাট ইজ নট ইম্পরট্যান্ট, হোয়াট ইজ ইম্পরট্যান্ট- আমি যাকে ঋণ দিচ্ছি, সে আসলে কতটা ঋণ পাওয়ার যোগ্য।

সিলেকশনটা আমাকে পদ্ধতি অনুসরণ করেই করতে হয়, এখানে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের বিষয়গুলোকে যদি আমরা গুরুত্ব যেন না দিই, সঠিকভাবে যদি নির্বাচন করি, তাহলে টাকা ফেরত পাওয়ার ঝুকিঁ অনেকাংশে কমে যায়। এখানে ফান্ডের সোর্স বাংলাদেশ ব্যাংক বলে আমি যেনতেনভাবে ঋণ দেব, এ সুযোগটা কিন্তু নেই। অনেকে ভুল করি, আমার অনেক কলিগই করেন। আমি বলব পদ্ধতি মেনেই সব করতে হবে। কারণ, দিন শেষে পেশার প্রতি আমার দায়বদ্ধতা আছে।

সাম্প্রতিক সময়ে অনাস্থাজনিত কারণে টাকা উত্তোলনের কেমন চাপ অনুভব করছেন?

মোশারফ হোসেন : টাকা উত্তোলনের চাপ আছে। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যত শক্তিশালীই হোক না কেন, একই সময়ে সব গ্রাহকের আমানত পরিশোধের সামর্থ্য কিন্তু কারও নাই। কিন্তু সামগ্রিকভাবে প্রতিটা টাকা পরিশোধের সক্ষমতা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আছে।

আমি বলব, জনগণের আস্থা বাড়াতে এখানে আমাদের আরেকটু প্রচার-প্রচারণা দরকার। রেগুলেটর তার পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব করছে। ব্যাংকারদের পক্ষ থেকেও এক্ষেত্রে প্রচারণা বাড়ানো উচিত। আমার পরামর্শ হলো, যারা প্রকৃতপক্ষে প্রয়োজনে টাকা তুলতে আসছেন, তাদের সঙ্গে  সঙ্গে  টাকা দিয়ে দেওয়া উচিত। যখন আমরা পরিশোধে অনীহা প্রকাশ করি বা আজ না কাল, কাল না পরশু বলে কালক্ষেপণ করি, তাহলে অনাস্থা আরও বাড়বে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে যে সাপোর্টটা বিবেচনা করতে পারে তা হলো, সাময়িক অসুবিধা কাটানোর জন্য যে প্রণোদনা বা সাপোর্ট আমরা ব্যবসায়ীদের দিয়েছি, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিপদে পড়লে সে রকম কোনো তহবিল গঠন করে, তা থেকে গ্রাহকের আস্থা ধরে রাখার জন্য সাময়িক সাপোর্টের ব্যবস্থা করা। যাতে করে, কোনো আমানতকারী যেন খালি হাতে ফেরত না যায়। এ জায়গাটা নিশ্চিত করা গেলে আস্থা দ্রুত বাড়বে।

ইসলামিক ফাইন্যান্সকে কোথায় দেখতে চান?

মোশারফ হোসেন : আমি কুইক গ্রোথে বিশ্বাস করি না। যখনই যেকোনো প্রতিষ্ঠানে কুইক গ্রোথ হবে, তখন সেখানে দুর্যোগের আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। আগামী তিন বছরে কোথায় যাব, এর শর্ট টার্ম, মিডটার্ম এবং লংটার্ম প্ল্যান থাকতে হবে। আমার অগ্রাধিকার হলো, তারল্যের যে সংকট তা কাটিয়ে গ্রাহকদের আস্থা তৈরি করা। এ মূহূর্তে গ্রাহকের দায় পরিশোধের পর যদি অতিরিক্ত অর্থ থাকে, তখন আমি নতুন বিনিয়োগে যাওয়ার বিষয়ে বিবেচনা করছি।

সে সঙ্গে  নতুন নতুন আমানতের স্কিম করে তহবিলের সোর্স বাড়ানোতে জোর দিচ্ছি। সহকর্মীদের বলেছি, অতীতে যে ভুল ছিল সেগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন বিনিয়োগ করতে। যেন আদায় করতে অসুবিধা না হয়। এক্ষেত্রে আমি সিএমএসএমইইতে গুরুত্ব দিতে চাই, আবাসনে বিনিয়োগ করতে চাই।

বিভিন্ন প্রোডাক্টের একটা মিক্সড গ্রাহক গোষ্ঠী তৈরি করতে চাই, যাতে একক কোনো খাতে আমাদের বিনিয়োগ কেন্দ্রীভূত হয়ে না যায়। যাই ঘটুক না কেন প্রতিষ্ঠান যাতে টিকে থাকতে পারে, এমন একটা পরিকল্পনা করে এগোতে চাচ্ছি। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা