প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৩ ১৫:৪৭ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
জন্মলগ্ন থেকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগে কাজ করে আসছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। মানবতার জন্য কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করতে তাদের জন্য ৪৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে জাতীয় সদর দপ্তর নির্মাণ প্রকল্প প্রস্তাব করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে জুলাই ২০২২ হতে জুন ২০২৫ মেয়াদে বাস্তবায়ন করবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
প্রকল্প প্রস্তাবনা সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি একটি মানবিক সহায়তাধর্মী প্রতিষ্ঠান। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ অনুপ্রেরণায় প্রেসিডেন্ট অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেডক্রস/রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সরকারের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এই সংস্থাটি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রেখে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।
প্রস্তাবনায় বলা হয়, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির জন্মলগ্ন থেকে বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মানবসৃষ্ট দুর্যোগে কাজ করে আসছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় রোল মডেল হিসেবে খ্যাত ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একটি যৌথ কর্মসূচি, যা উপকূলীয় অঞ্চলে দুর্যোগকালীন সময়ে বিপদাপন্ন মানুষের জীবন বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তা ছাড়া, বন্যা, টর্নেডো, খরা, নদীভাঙন ও ভূমিধসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ সোসাইটি কাজ করে আসছে। অধিকন্তু মানবসৃষ্ট দুর্যোগ যেমন- বিভিন্ন দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ড, ভবনধসসহ কক্সবাজারস্থ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের প্রায় ১৩ লাখ নাগরিকের মধ্যে ২ লাখ নাগরিক ও ৬০ হাজার স্থানীয় জনসাধারণকে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি বিভিন্ন প্রকার সহায়তা প্রদান করে থাকে। এসব কর্মকাণ্ড সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য উপযুক্ত জনবল ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রয়োজন, যা বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নেই।
প্রস্তবনায় আরও বলা হয়, বর্তমানে ১৮ দশমিক ৯২ কাঠা নিজস্ব জমিতে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান কার্যালয় অবস্থিত, যার সম্ভাব্য বাজারমূল্য প্রায় ১৯ কোটি টাকা। এখানে ১৯৫০ সালের আগে নির্মিত দুটি জরাজীর্ণ ব্যবহার অযোগ্য ভবনে সোসাইটির দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে। এ ভবন দুটি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা করানো হয়েছে। তাদের প্রদত্ত রিপোর্টে এ ভবন দুটি ব্যবহার অনুপযোগী বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আর কোনো ব্যবস্থা নেই বিধায় এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে। ভবন দুটি অবিলম্বে ভেঙে সেখানে একটি ১০ তলা ভবন স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পরিচালনা পর্ষদ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
জানা যায়, একই জায়গায় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ছাড়াও আরও ১২টি দেশের পার্টনার্স ন্যাশনাল সোসাইটিজও কাজ করছে। চুক্তি অনুযায়ী এসব পার্টনার্স ন্যাশনাল সোসাইটিজের দাপ্তরিক কাজের সংকুলান করার দায়িত্ব বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির। কিন্তু এখানে একটি জাতীয় কেন্দ্রীয় অফিস ভবনের অভাবে কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদর দপ্তর ভবন নির্মাণের জন্য জিওবি অনুদানে ৪৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা খরচে জুলাই ২০২২ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, এ প্রকল্পের মাধ্যমে মানবতার জন্য সোসাইটির কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি, সব দুর্যোগে জনসাধারণের সম্পদ ও জীবন রক্ষার্থে সহায়তা প্রদান, সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম বৃদ্ধি এবং স্বেচ্ছাসেবামূলক সংস্কৃতি, দেশপ্রেম, সামাজিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও মনস্তাত্ত্বিক উৎকর্ষ সাধন হবে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো হলো, ১০ তলাবিশিষ্ট ৭৫ হাজার বর্গফুটের প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, পানি সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য ডিস্ট্রিবিউশন লাইন/পাইপ স্থাপন, কম্পাউন্ড ড্রেন নির্মাণ, সাবস্টেশন স্থাপন, স্যুয়ারেজ লাইন স্থাপন এবং অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা কেনা।