প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৩ ২০:৫৪ পিএম
আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২৩ ২১:২১ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
চট্টগ্রামের আশিকুর রহমান লস্করকে ঋণ দিয়ে আদায় করতে পারছে না ন্যাশনাল ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা। ফলে অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করে ব্যাংক। রবিবার (৫ মার্চ) আশিকুর রহামানসহ তিন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পাসপোর্ট জব্দ করার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের যুগ্ম জেলা জজ মুজাহিদুর রহমান।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ১৭৫ কোটি ২৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের দাবিতে ন্যাশনাল ব্যাংক মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাদিকা আফরিন দীপ্তি ও আশিকুর রহমান লস্করের বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলাটি দায়ের করা হয় ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর। মামলা দায়ের করার এক দিন পরেই কোনো রকম ব্যবসায়িক সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই নতুন করে ১০০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দেয় ন্যাশনাল ব্যাংক।
আদালতের রায়ে জানানো হয়, আশিকুর রহমান লস্কর কর্তৃক রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে ১ একর ভূমিসহায়ক জামানত এবং মেঘনা ব্যাংক লিমিটেডের ২০ কোটি টাকার শেয়ার লিয়েন (শেয়ার বন্ধক) করার শর্ত থাকলেও তা বন্ধক এবং লিয়েন না করেই ন্যাশনাল ব্যাংক ঋণ মঞ্জুরিপত্র প্রদানের ১০ দিনের মধ্যেই ১০০ কোটি টাকা বিবাদীগণের হিসাবে বিতরণ করে। ১০০ কোটি টাকা বিতরণের পর মঞ্জুরিপত্রের শর্ত অনুযায়ী বিবাদীগণ কোনো টাকা পরিশোধ না করলেও ২ মাসের মধ্যে আরও ১৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা বিতরণ করে। মঞ্জুরিপত্রের শর্ত মোতাবেক ৬০ দিনের মধ্যে বিবাদীগণ প্রস্তাবিত রাজউকের প্লট এবং মেঘনা ব্যাংকের ২০ কোটি টাকার শেয়ার গৃহীত ঋণের বিপরীতে দায়বদ্ধ করেনি। তা সত্ত্বেও ন্যাশনাল ব্যাংক বিবাদীদের ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ আবেদন মঞ্জুর করে ২০ মার্চ ১০ কোটি টাকার অতিরিক্ত ঋণ ছাড় করে। ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে সুদসহ ঋণ পরিশোধের শর্ত থাকলেও বিবাদীগণ কোনো টাকা পরিশোধ করেননি। সুদে আসলে সেই ঋণ এখন ১৭৫ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ঋণের বিপরীতে কোনো জামানতও প্রদান করেননি আশিকুর রহমান।
তারপরও বাদী ব্যাংক ২০২২ সালের মে মাসের ১১ তারিখের পূর্ব পর্যন্ত বিবাদীদের কাছ থেকে ঋণের টাকা দাবি করে কোনো নোটিস দেয়নি। মেয়াদ উত্তীর্ণের দীর্ঘ আড়াই বছর পর ঋণটি খেলাপি করা হয়েছে। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে বাদী ব্যাংক প্রচলিত ব্যাংকিং নিয়ম-কানুন লঙ্ঘন করে বিপুল পরিমাণ ঋণ বিতরণ করেছে এবং বিতরণকৃত ঋণ আদায়ে যথেষ্ট অনীহা প্রদর্শন করেছে। বিপুল পরিমাণ ঋণের কোএনা টাকাই আদায় না হওয়া এবং বাদী ব্যাংকের নির্লিপ্ততার কারণে বাদী ব্যাংকের নিকট আমানতকারীদের অর্থ নিরাপদ কি না, সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে। বিপুল পরিমাণ ঋণের টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে কি না এবং এক্ষেত্রে বাদী ব্যাংকের কোনো যোগসাজশ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিৎ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটি ইউনিটের (বিএফআইইউ) দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। নাগরিকদের আমানতের সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবিড় তত্ত্বাবধান আবশ্যক।
আসামি যেন দেশত্যাগ করতে না পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদেশের কপি স্পেশাল পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বিশেষ শাখা, বাংলাদেশ পুলিশ, ঢাকা ও বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর পাঠানো হয়েছে।
শুধু ন্যাশনাল ব্যাংক নয় এর বাইরে এবি ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক থেকে ৫০০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।