প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৩ ১৪:০০ পিএম
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৩ ১৪:২২ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধ হয়ে গেল দুই ব্যাংক। এর একটি হলো ক্রিপ্টো দুনিয়ার সুপরিচিত সিলভারগেট ব্যাংক আর অপরটি বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি)। এ ব্যাংকটি গত বুধবারও বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে। কিন্তু শুক্রবার ব্যাংকের পরিচালনা কমিটির সদস্যরা এসভিপির সব শাখা বন্ধের নির্দেশ দেন।
ওদিকে মূল কোম্পানি সিলভারগেট ক্যাপিটাল করপোরেশন বলেছে, তারা সাম্প্রতিক আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে নিজেদের কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সঙ্গে ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধের পাশাপাশি গ্রাহকের জমা দেওয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে।
নিজের হাইপ্রোফাইল গ্রাহক এফটিএক্স ও জেনেসিসের মতো সিলভারগেট নিজেও যে আর্থিকভাবে ধুঁকছে, তা বেশ কিছুদিন ধরেই স্পষ্ট হচ্ছিল। জানুয়ারিতে প্রকাশিত কোম্পানির আর্থিক হিসাব অনুযায়ী, কেবল এক প্রান্তিকেই গ্রাহকরা ৮১০ কোটি ডলার তুলে নেওয়ায় কোম্পানির শতকোটি ডলারের বেশি লোকসান হয়েছে।
এদিকে ৪৮ ঘণ্টার নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহের পর সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকটিকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়েছে। এই ব্যাংকের শেয়ারের দাম হু হু করে নেমে গিয়েছিল। প্রযুক্তিভিত্তিক স্টার্টআপগুলোয় বিনিয়োগের মাধ্যমে অল্প সময়ে বিপুল অর্থ সঞ্চয় করেছিল এসভিবি। এই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের বন্ডেই বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু মূল্যস্ফীতির হার কমাতে ফেডারেল রিজার্ভ গত বছর সুদের হার বাড়াতে শুরু করলে বন্ডের দাম কমে যায়। স্টার্টআপগুলোও করোনা মহামারির পর থেকে ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ে। ব্যাংক থেকে গ্রাহকরাও সঞ্চিত অর্থ তুলে নেন।
গ্রাহকদের টাকার জোগান দিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে নিজেদের শেয়ার বিক্রি করতে হয়। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে ব্যাংকের টাকায় টান পড়ে। কিছুদিন আগেই এসভিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ব্যাংকটি গত কয়েক দিনে প্রায় ২০০ কোটি ডলার খুইয়েছে। ওই ব্যাংকে সঞ্চিত গ্রাহকদের অর্থের ভার নিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স করপোরেশন (এফডিআইসি)। এফডিআইসি নতুন একটি ব্যাংকও খুলেছে বলে খবর বেরিয়েছে। সেই ন্যাশানাল ব্যাংক অব সান্টা ক্লারাতে সিলিকন ভ্যালির ব্যাংকের সম্পদ গচ্ছিত রাখা হয়েছে।
এর আগে গত বুধবার হঠাৎ শোনা যায়, গুরুতর আর্থিক ঘাটতিতে ভুগছে এসভিবি। ঘাটতির পরিমাণ এত বেশি যে, ব্যাংকের ব্যালান্স শিটের কিনারা করতেই প্রয়োজন অন্তত ২২৫ কোটি ডলার। এ নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়তেই সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের গ্রাহকদের মধ্যে টাকা তোলার হিড়িক পড়ে যায়। গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার পর্যন্ত হাজার হাজার গ্রাহক অর্থ তুলে নেন ব্যাংকটি থেকে।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার এসভিপির সবগুলো শাখায় মোট চার হাজার ২০০ কোটি ডলারেরও বেশি পরিমাণ অর্থ ছিল। কিন্তু গ্রাহকদের প্রায় সবাই টাকা তুলে নেওয়ার পর এখন অবশিষ্ট আছে মাত্র ৯৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। শুক্রবার কর্তৃপক্ষ ব্যাংকটি বন্ধ ঘোষণার পর অবশ্য গ্রাহকদের অনেকেই এ নিয়ে আফসোস করছেন।
২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক মন্দা শুরু হয়েছিল। সে সময় দেশটির ছোট-বড় অনেক ব্যাংক একের পর এক দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল। সেই মন্দা পরিস্থিতির ১৫ বছর পর এই প্রথম শীর্ষস্থানীয় কোনো ব্যাংকের এমন আকস্মিক পরিস্থিতি ঘটল যুক্তরাষ্ট্রে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে এসভিবির এভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য অশুভ সংকেত। কারণ গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশটিতে লাগামহীনভাবে বাড়ছে ডলারের মান। ফলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যাপক মূল্যস্ফীতি শুরু হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় ঋণের বিপরীতে সুদের হার বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছিল দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম। যদি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে অদূর ভবিষ্যতে রীতিমতো বিশৃঙ্খলা শুরু হওয়ার শঙ্কা আছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেন এই ঘটনা ঘটল, তা জানতে হলে দৃষ্টি ফেরাতে হবে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলা নীতি সুদহার এবং বিনিয়োগকারীদের আর ঝুঁকি না নিতে চাওয়ার ইচ্ছার দিকে।
সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ধসে পড়ার আগে সে দেশে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছিল। এগুলো হলোÑ ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার বৃদ্ধি, নগদ অর্থের সংকট, লোকসানে বন্ড বিক্রি, শেয়ার বিক্রির ঘোষণা, শেয়ার বিক্রিতে ধস, রিসিভারের অধীনে এসভিবি। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, দ্য ভার্জ, দ্য স্ট্রিট