× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অন্তহীন অনিয়ম ওয়ান ব্যাংকে

জয়নাল আবেদীন

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৩ ০৮:১৯ এএম

আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৩ ১১:২৮ এএম

ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড। ফাইল ফটো

ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড। ফাইল ফটো

ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না বেসরকারি ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড। এমনকি বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও ঋণ দেওয়া, নবায়ন এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নিযুক্ত সমন্বয়কের পরামর্শও আমলে নেওয়া হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন সমন্বয়ক ও নির্বাহী পরিচালক মো. নূরুল আমীন। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সুশাসনের ঘাটতিসহ কয়েকটি কারণে গত ডিসেম্বরে ওয়ান ব্যাংককে ‘দুর্বল’ চিহ্নিত করে নিবিড় তদারকির জন্য নির্বাহী পরিচালক মো. নূরুল আমীনকে সমন্বয়ক হিসেবে নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পর্ষদ ও নির্বাহী কমিটির প্রতিটি সভার আগে ব্যাংক থেকে পাঠানো স্মারক পর্যালোচনা করে বেশ কিছু ঋণের বিষয়ে এমডিকে নিজের মতামত ও পরামর্শ দেন তিনি। কিন্তু তার কোনো পরামর্শই আমলে নেয়নি ব্যাংকটির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও পরিচালনা পর্ষদ।

সমন্বয়কের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসিকে ৩২৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল ওয়ান ব্যাংক। নিয়মিত পরিশোধ না হওয়ায় ঋণটি সাব-স্ট্যান্ডার্ড হয়ে পড়ে। বিপুল অঙ্কের এ ঋণের বিপরীতে যথাযথ জামানত সংরক্ষণ এবং ঋণের সর্বশেষ ‘শ্রেণিমান’ নিশ্চিত হওয়ার পরামর্শ দেন সমন্বয়ক। কারণ আইন অনুযায়ী নিয়মিত ঋণেই কেবল নবায়ন করে সময় বাড়ানো যায়। কিন্তু এসব আমলে না নিয়ে শর্ত ছাড়াই ঋণটি নবায়ন করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

ব্যাংকটির প্রিন্সিপাল শাখার আরেক গ্রাহক নোমান টেক্সটাইল মিলস। ৩১৮ কোটি টাকার ঋণ নবায়নেও সমন্বয়কের পরামর্শ উপেক্ষা করা হয়। তার পরামর্শ ছিল, বকেয়া ১৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা আদায় এবং ৭০ কোটি টাকার ওভার ড্রাফট (ওডি) সুবিধা ৫০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনার আগের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে গ্রাহকের ঋণ নবায়ন করতে হবে। এখানেও ব্যাংকটি পরামর্শ আমলে নেয়নি।

ব্যাংকের গুলশান নর্থ শাখার গ্রাহক প্রসাধনী সামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রিমার্ক এইচবি লিমিটেডকে ১৩ কোটি টাকা মূল্যের জামানতের বিপরীতে ৬৭ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে ব্যাংক। বন্ধকি সম্পত্তির অতিরিক্ত ঋণ না দেওয়ার জন্যও পরামর্শ দিয়েছিলেন সমন্বয়ক। তা আমলে না নিয়ে কোনো শর্ত ছাড়াই ঋণটি অনুমোদন করা হয়। 

সমন্বয়কের প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, ওয়ান ব্যাংকের উত্তরা শাখা ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে সিন্ডিকেটেড ঋণ দিয়েছিল কোনো জামানত ছাড়াই। ২০২১ সাল পর্যন্ত ফান্ডেড, নন-ফান্ডেড মিলে ওয়ান ব্যাংকে গ্রুপটির ঋণ ছিল ২৯৩ কোটি টাকা। বিপুল অঙ্কের ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পত্তিতে এখনও ব্যাংকের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি। অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গ্রাহক এর আগে আটবার সময় নিয়েও তা পালন করেননি। সবশেষ প্রতিষ্ঠানটি আরও ছয় মাস সময় চাইলে তাতে আপত্তি জানান সমন্বয়ক। কারণ গ্রুপটির আরেক প্রতিষ্ঠান দীপ্তা অ্যাপারেলসের ৫২ কোটি টাকার ঋণ বকেয়া রয়েছে। খেলাপি আছে ৯টি কিস্তি। বন্ধকি সম্পত্তিতে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গ্রাহকের দিকে তাকিয়ে না থেকে ব্যাংককে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দেন সমন্বয়ক। কিন্তু তার এই পরামর্শ আমলে না নিয়ে গ্রাহককে ৩০ জুলাই পর্যন্ত সময় দিয়েছে ওয়ান ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, ওয়ান ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির ২৮৮তম সভায় কোনো ধরনের জামানত ছাড়াই এডিসন পাওয়ার বাংলাদেশ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে ২৫ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে। স্থাবর সম্পত্তি ছাড়া কেবল করপোরেট গ্যারান্টি ও ব্যক্তিগত গ্যারান্টির বিপরীতে দেওয়া এ ঋণকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মত দেন বাংলাদেশ ব্যাংক নিযুক্ত সমন্বয়ক। 

গুলশান শাখার গ্রাহক মেঘনা এডিবল অয়েল রিফাইনারির অনুকূলে ২৫০ কোটি টাকার ঋণ নবায়নের প্রস্তাব ছিল ওই সভায়। এ প্রস্তাব অনুমোদনের আগে আমদানি-পরবর্তী অর্থায়ন নীতিমালা ঠিকভাবে পরিপালনের পরামর্শ দেন সমন্বয়ক। কিন্তু তা আমলে নেওয়া হয়নি। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ব্যাংকটিতে এমন অনেক ঋণ রয়েছে যেগুলো জামানত দ্বারা সুরক্ষিত নয়। অর্থাৎ ঋণের তুলনায় জামানত নেই বললেই চলে। এমনই একটি গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান গুলশান-১ শাখার গ্রাহক পূর্বাণী সিনথেটিক স্পিনিং ও পূর্বাণী ইয়ার্ন ডায়িং। মাত্র ১ কোটি ১৭ লাখ টাকার সহায়ক জামানতের বিপরীতে ৫৮ কোটি টাকার ঋণ নবায়ন করেছে ওয়ান ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। নারায়ণগঞ্জ শাখার গ্রাহক পিএন এন্টারপ্রাইজের মাত্র ১১ কোটি ১৮ লাখ টাকার জামানতের বিপরীতে ২৫ কোটি টাকা নবায়ন করা হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জামানত নিশ্চিতের পরামর্শ দিয়েছেন সমন্বয়ক। বনানী শাখায় ন্যাশনাল পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজের ঋণ ২৪ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৭ কোটি টাকা করার আবেদন এসেছে। এ প্রতিষ্ঠানের আগের বকেয়া ২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা সমন্বয়ের পর প্রস্তাব অনুমোদনের পরামর্শ দেন সমন্বয়ক। যা বাস্তবায়ন করা হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ওয়ান ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। ‌হিসাব অনুযায়ী ব্যাংকের মোট ঋণের ১২ শতাংশই খেলাপি। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ওয়ান ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। তথ্যমতে ২০১৯ সাল শেষে ওয়ান ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৫৪ কোটি। অর্থাৎ তিন বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৮৩১ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে একাধিকবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ওয়ান ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছে। বৈঠকে প্রতিটি সমস্যার সমাধানে আলাদাভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ব্যাংকটি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কোনো ব্যাংক পরামর্শকের সিদ্ধান্ত না মানলে অথবা অনিয়ম করে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এ বিষয়ে সমন্বয়ক ও নির্বাহী পরিচালক মো. নূরুল আমীন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, পুরো বিষয়টি নিয়ে ওয়ান ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের একাধিক মিটিং হয়েছে। তারা এগুলো সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে সবগুলোর সমাধান আসতে সময় লাগবে।

ওয়ান ব্যাংকের চেয়ারম্যান এএসএম শহিদুল্লাহ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল সেগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। তাদের আপত্তির বিষয়গুলোতে আমরা আমাদের কথা বুঝিয়ে বলেছি এবং সমস্যাগুলো সমাধান করে ফেলেছি। বাংলাদেশ ব্যাংকও আমাদের উত্তরে সন্তুষ্ট বলে আমি মনে করি। এ ছাড়া সমন্বয়কের সঙ্গে কথা বলেই যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ম্যানেজমেন্টকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকটি সঠিক পথেই আছে বলে দাবি করেন চেয়ারম্যান।

এ বিষয়ে ওয়ান ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুর মফিজের মোবাইল ফোনে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি এসএমএসের মাধ্যমে পাঠানো প্রশ্নেরও কোনো জবাব দেননি তিনি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা