× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মুনাফা ধরে রাখতে পুনঃতফসিলই ভরসা

জয়নাল আবেদীন

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৩ ১২:৪৭ পিএম

আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৩ ১২:৫২ পিএম

মুনাফা ধরে রাখতে পুনঃতফসিলই ভরসা

প্রথমে করোনা, তারপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, সব মিলিয়ে চতুর্মুখী চাপে আছে অর্থনীতি। এ অবস্থায় অনেক ব্যবসায়ীর পক্ষেই ঋণের কিস্তি বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ব্যাংক খাতে। তবে মুনাফা ধরে রাখতে পুনঃতফসিলের ওপরই জোর দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। কারণ খেলাপির বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখলে ব্যাংকের মুনাফায় ধস নামার শঙ্কা রয়েছে। তথ্যমতে, ২০২২ সালে ২৯ হাজার ২৭৯ কোটি ৮২ লাখ টাকার ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। এর বিপরীতে সুদ মওকুফ করা হয়েছে মোট ৫ হাজার ১৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

ঋণ পুনঃতফসিল হলো খেলাপি হয়ে পড়া ঋণের নির্দিষ্ট একটি অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে নিয়মিত করার প্রক্রিয়া। যার মাধ্যমে আটকে থাকা ঋণগুলো পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত সময় পান গ্রাহক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত ২০২২ সালের শেষ তিন মাসেই (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ১৭ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল করেছে ব্যাংকগুলো। এর বিপরীতে সুদ মওকুফ করা হয়েছে ১ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা। বছরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালে এক বছরে ২৯ হাজার ২৭৯ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল করেছে ৬২টি ব্যাংক। আর সুদ মওকুফ করা হয়েছে ৫ হাজার ১৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

২০১৯ সালে ঋণ পুনঃতফসিলের নীতিমালা শিথিল করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যার মধ্যে ছিল ঋণ থেকে দায়মুক্তির এককালীন ব্যবস্থা। এই সুবিধার আওতায় ঋণগ্রহীতারা বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার চেয়ে কম পরিমাণ অর্থ এককালীন পরিশোধ করে তাদের খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারতেন। এই উদ্যোগের ফলে পুনঃতফসিল করা ঋণ বেড়ে যায়। ২০১৯ সালে মোট ৫২ হাজার ৭৭০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়, যা একটি রেকর্ড। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে পুনঃতফসিল করা ঋণের মধ্যে পুনরায় খেলাপি হয়েছিল ১৮ শতাংশ। সে বছর ব্যাংকগুলো সব মিলিয়ে ১৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করে। ২০২১ সালে ব্যাংকগুলো ১২ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করে, যার ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ আবারও খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে।

ব্যাংকাররা জানান, খেলাপি ঋণ কম দেখানোর উপায় হিসেবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন ছাড় দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশেষ করে করোনার প্রভাব শুরুর পর ২০২০ সালে কেউ কোনো টাকা না দিলেও তাকে খেলাপি করা হয়নি। ২০২১ সালে একজন উদ্যোক্তার যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা, কেউ ১৫ শতাংশ দিলে তাকে আর খেলাপি করা হয়নি। এর আগে ২০১৯ সালে বিশেষ ব্যবস্থায় মাত্র ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ১০ বছরের জন্য বিপুল পরিমাণের ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়। এরও আগে ৫০০ কোটি টাকার বড় অঙ্কের ঋণ পুনর্গঠন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিশেষ বিবেচনায় পুনঃতফসিলসহ বিভিন্ন শিথিলতা দেওয়া হয়। বারবার এ রকম শিথিলতার কারণে উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ ঋণ পরিশোধের চেয়ে সুবিধা নেওয়ার পেছনে ছুটছেন বেশি। আর এসব ছাড়ের কারণে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের আসল চিত্র প্রতিফলিত হচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, যখন কোনো গ্রাহক বিপদে পড়ে তখন ব্যাংক কিছুটা ছাড় দেয়। ফলে অল্প কিছু টাকা মওকুফ করে পুরো টাকা ফেরত পাওয়া যায়। এতে করে দুপক্ষই উপকৃত হয়। ব্যাংকের মুনাফা কিছুটা কম হলেও বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে মনে করেন তিনি।

এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান এবং এনসিসি ও মেঘনা ব্যাংকের সাবেক এমডি মোহাম্মদ নূরুল আমিন বলেন, সুদ মওকুফ সুবিধা যদি প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বা রুগ্‌ণ শিল্প গ্রাহকদের দেওয়া হয়, তাহলে ঠিক আছে। এতে করে দুপক্ষই উপকৃত হয়। কিন্তু এটা যদি ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের দেওয়া হয়, তাহলে বিষয়টা বিপজ্জনক। অনেক গ্রাহক এই ছাড়টাকে সুযোগ হিসেবে নিয়েছে। পুনঃতফসিল করার পর লোনটা পরিশোধ করেনি। সুতরাং তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই সুবিধা নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করছে না। ফলে মুনাফা হারাচ্ছে ব্যাংক ও শেয়ারহোল্ডাররা। 

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কয়েকটি কারণে পরিচালন মুনাফা বাড়ে। এরমধ্যে প্রথম হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিয়েছে। এ ছাড়া এখন দেখা যাচ্ছে, ব্যাংকগুলো ঋণ আদায় করেনি কিন্তু ওই ঋণের সুদ আয় খাতে দেখাচ্ছে। এতে করে কাগজে-কলমে ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন ভালো দেখানো হচ্ছে। কিন্তু এটা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের হিসাব ব্যাংকগুলো আন্তর্জাতিক নিয়মে করছে না। তারপরও খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। সঠিক হিসাব করলে খেলাপি ঋণ আরও বেড়ে যাবে। 

এখন যে অবস্থায় চলছে তা সন্তোষজনক নয় উল্লেখ করে মির্জ্জা আজিজ বলেন, ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট ও সদিচ্ছা দরকার।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা