× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিভাগীয় বৈঠক আজ শুরু

নিত্যপণ্যের দাম কমাতে নানা উদ্যোগ

আসিফ শওকত কল্লোল

প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৩ ০৮:২৬ এএম

আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৩ ১৫:০০ পিএম

নিত্যপণ্যের দাম কমাতে নানা উদ্যোগ

রমজান মাস সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের দাম কমানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে ক্যাবিনেট সচিব ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহসহ আট বিভাগীয় কমিশনের সঙ্গে আজ (১৯ মার্চ) বৈঠকে বসবেন। 

এ ছাড়া দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের ষষ্ঠ সভাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হওয়ার একমাত্র কারণ হলো রোজার মাসে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা।

এ ব্যাপারে সিনিয়র বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘রোজাকে সামনে রেখে যে সব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কমিশনারদের বৈঠকে তা নিয়ে পর্ষালোচনা এবং বিভাগীয় কমিশনারদের দিক নিদের্শনা দেওয়া হবে। আর টাস্কফোর্সের মিটিং মোট আটটি নিত্যপণ্যের চাহিদা যোগান এবং এলসি নিস্পত্তির ব্যাপারটা পর্ষালোচনা করা হবে।’

আটটি পণ্য হচ্ছে পেয়াঁজ, রসুন, আদা, মসুর ডাল, চাল, গম/ আটা, চিনি এবং ভোজ্য তেল।

তিনি বলেন, ‘নিত্যপণ্যের কোন ধরনের ঘাটতি যেন না হয় এজন্য সরকার ভারতের সঙ্গে আমরা খাদ্য আমদানি কোটা ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছি। গত বৃহস্পতিবার এ নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের সচিব পর্যায়ে বৈঠক এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারত থেকে পেঁয়াজের সরবরাহ কোন কারণে কমে গেলে আমরা কোটা অনুসারে পেঁয়াজ পাবো।’ 

এদিকে ভারত থেকে পেয়াঁজ আমদানি নিয়ে গত বুধবার কিছুটা জটিলতা দেখা দিয়েছে। সরকার নতুন করে অনুমতি না দেওয়ায় সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি। গত বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হচ্ছে সরকারের এ নির্দেশনা। প্রতি বছর পেয়াজ আমদানির জন্য মার্চের ১৫ তারিখ পর্যন্ত আমদানির অনুমতি (আইপি) মেয়াদ থাকে। সরকার নতুন করে আইপি দিলে তারপর আমদানি করা যাবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানা যায়, এ নিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে কোনধরনের জটিলতা হবে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, স্বল্পআয়ের কোটি পরিবারকে রমজানের আগে দুইবার পণ্য দেওয়া শুরু করেছে। এ নিয়ে কোন ধরনের সমস্যা নেই। এক্ষেত্রে সরকার কোন অনিয়ম বরদাশত করবে না। যার আলোকে দিক নির্দেশনা থাকবে আট বিভাগীয় কমিশনারের বৈঠকে। 

ঢাকা মহানগরীতে ২০০টি ট্রাকের মাধ্যমে টিসিবির খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করবে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যারা অনিয়ম করে টিসিবির ভর্তুকি মূল্যের খাদ্য সহায়তা গ্রহণ করবে, তাদের জেল-জরিমানার মতো শান্তির বিধান রয়েছে। এছাড়া নিত্যপণ্যের বাজার মনিটরিং টিম আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে।

দামের কারসাজি করে অতিমুনাফা করার লোভে ‘গুটিকয়েক’ ব্যবসায়ীর কারণে পণ্যমূল্যের বাজার অস্থির হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান।

তিনি বলেন, রমজানের আগেই সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। সরকারের পক্ষে সব বাজার মনিটরিং করা সম্ভব নয়। এজন্য এগিয়ে আসতে হবে ব্যবসায়ী নেতাদের। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার সমিতির নেতাদের সঙ্গে সচেতনতামূলক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। 

রোজার মাস শুরু হওয়া বিবেচনায় রেখে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কথা জানানো হচ্ছে। সেজন্য বাজার মনিটরিং থেকে নানা ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।

সফিকুজ্জামান বলেন, ‘শুধু নিম্নবিত্ত শ্রেণীই নয়, মধ্যবিত্তরাও এখন চাপে আছে। রোজার আগেই বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে বেশিরভাগ পণ্য। কঠিন সময়ে আছে মধ্যবিত্ত শ্রেণী। এজন্য পণ্যের যৌক্তিক দাম নিতে হবে।’

কয়েকদিন আগে মানুষের কষ্ট বিবেচনায় নিয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানান উৎসবে বিভিন্ন ছাড়ের ব্যবস্থা থাকে। তারা অল্প লাভ করে। আমাদের অবস্থা ভিন্ন। সামনে পবিত্র রমজান মাস। আপনারাও একটু সংযমী হোন। এ মাসে যৌক্তিক দাম রাখুন। লাভ কম করুন।’

বাংলাদেশের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলালউদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়ালে সরকার শুধু দেশের ব্যবসায়ীদের দোষ দিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, সারা বিশ্বের ইহুদিরা খাদ্য পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। এরা তো আর রোজা আসলে দাম কমায় না। ইসলামী দেশগুলোতে সরকার ব্যবসায়ীদের ভর্তুকি দেয়, তাই তারা রোজার সময় পণ্যের দাম কমিয়ে রাখে। আমাদের দেশে কি এই ব্যবস্থা আছে?

খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রমজান সামনে রেখে ইতোমধ্যে অস্থির হয়ে ওঠেছে ভোগ্যপণ্যের বাজার। সরকার নির্ধারিত দামেও ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়ছে চিনির দাম। এর পাশাপাশি ব্রয়লার মুরগি, মাছ-মাংস এবং শাকসবজির মতো পণ্যেরও দাম বেশি। এ অবস্থায় রমজানে পণ্যমূল্য কোথায় গিয়ে থামবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নগরবাসী। মধ্যবিত্তের প্রটিন ব্রয়লার মুরগীর দাম বেড়েছে দ্বিগুণ।

গত সপ্তাহে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক মতবিনিময় সভায় রাজধানীতে ব্রয়লার মুরগির বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়। কিন্তু উৎপাদন খরচের চেয়ে দ্বিগুন দামে বিক্রি হচ্ছে বয়লার মুরগী । প্রতি ব্রয়লার মুরগীর করপোরেট পর্যায়ে খরচ পড়ে ১৩০-১৪০ টাকা, তবে খুচরা খামারি পর্যায়ে এই খরচ হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকা ।

এদিকে বিশেষ করে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট বেড়েছে। রমজান সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম আরও বাড়লে চাপে পড়বে দেশের মধ্যবিত্তরা আর নিম্ন বিত্তরা তো বেহাল অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশে। গত জানুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

বিষয়টি সরকারের নজরে আসায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বৈঠক করছেন মূখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। বৈঠকে দ্রব্যমূল্য নিয়ে গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিদিন নিত্যপণ্যের দরদাম সম্পর্কে খোঁজখবর রাখছেন। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কিভাবে দেশে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা যায় সেই কৌশল নির্ধারণেরও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

টাস্ক ফোর্সের বৈঠকের কার্যপত্রে পেয়াঁজ আমদানি নিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী পর্ষন্ত এলসি (ঋণপত্র) নিষ্পত্তি হয়েছে ৪ লাখ ৪৭ হাজার ১৫৪ মে টন। একই সময় ২০২১-২২ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারী পর্ষন্ত এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল ৪ লাখ ৭ হাজার ২৯ মে টন।

ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুসারে, আন্তর্জাতিক বাজারে এক কেজি পেয়াজের দাম এখন ৩২ টাকা ৮২ পয়সা। এক মাস আগেও সেই দামই ছিল। টিসিবির তথ্য মতে, বর্তমানে বাজারে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৩৫-৪০ টাকা। এক মাস আগে সেই দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা ।

ট্যাস্ক ফোর্সের সুপারিশ অনুসারে বলা হয়েছে, পেয়াজের সংকট সৃষ্টি না হয় সেজন্য কৃষি মন্ত্রনালয়কে পেয়াঁজের চাষ আরো বাড়ানো উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশেষ করে দেশে জ্বালানি তেল ও ডলারের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি চিনির দাম আকাশচুম্বী বেড়ে গেছে। যদিও বিষয়টি শিল্প মন্ত্রণালয় টাস্ক ফোর্সের মিটিংয়ে আলোচনা হবে। তবে টাস্ক ফোর্সের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে দেশে চিনির সংকট দেখা দিয়েছে। এ দাম বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে নানা কারণ। এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধির 

এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি চিনি ১০ থেকে ১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। মাস খানেক আগেই সরকার ঘোষিত প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। সরকারি সংস্থা টিসিবি হিসাবে, বাজারে এখন চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় প্রতি কেজি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। খুচরা বিক্রেতাদের দোকানে প্রতি কেজিতে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা করে বিক্রি করাহচ্ছে। যা সাধারণ জনগণের জন্য নেকটাই অস্বস্তিকর।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা