জাহিদুল ইসলাম
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৩ ১০:১০ এএম
সুগন্ধি চিনিগুড়া চাল। ফাইল ফটো
২০২২ সালের জুলাই থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সুগন্ধি চিনিগুড়া চালের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে। এই নিষেধাজ্ঞা এখনও বলবৎ আছে। তবে নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করেই রপ্তানি করছে নারায়ণগঞ্জের নওশীন অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফ্রোজেন ফুড প্রসেসর।
সম্প্রতি স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল যাবেদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এমনই অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের চাষী ব্র্যান্ডের সুগন্ধি চিনিগুড়ার প্যাকেট হুবহু নকল করে নিম্নমানের চাল বাজারজাতকরণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বড় ব্যবসায়ীরা, ক্ষুণ্ন হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি।
তবে নওশীন অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফ্রোজেন ফুড প্রসেসরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নূর এ আলম দেওয়ানের কাছে এ প্রসঙ্গে প্রতিদিনের বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে একে ষড়যন্ত্র বলেও মনে করেন তিনি।
স্কয়ারের পক্ষ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে পাঠানো এক চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে সুগন্ধি চাল রপ্তানিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার পর থেকে চাল রপ্তানি বন্ধ আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় নওশীন অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফ্রোজেন ফুড প্রসেসর নামক প্রতিষ্ঠানটি অসৎভাবে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে স্কয়ার ফুডের চাষী ব্র্যান্ডের সুগন্ধি চিনিগুড়ার প্যাকেট হুবহু নকল করে নিম্নমানের চাল প্যাকেটজাত করছে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্যটি রপ্তানি করছে। ফলে একদিকে যেমন সরকারের সিদ্ধান্তকে অবজ্ঞা করছে অন্যদিকে রপ্তানির বিপরীতে প্রতারণার মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা হাতিয়ে নিচ্ছে। পাশাপাশি স্কয়ারের চাষী ব্র্যান্ডের নামে নিম্নমানের নকল পণ্যের কারণে ব্যাপক সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ পণ্যসামগ্রী মোড়কজাতকরণ বিধিমালা-২০২১ অমান্য করে পণ্যসামগ্রী রপ্তানি করছে, যা বাংলাদেশ ওজন ও পরিমাপ মানদণ্ড আইন-২০১৮ আইনের ৪১ ধারার বিধান অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তারা কীভাবে রপ্তানি করে, সেটা তারা বলতে পারবে। রপ্তানি হওয়া দেশে আমাদের যে পার্টি (ব্যবসায়িক অংশীদার) আছে তারা আমাদের কাছে ডকুমেন্ট পাঠিয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে আমরা যথাযথ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জানিয়েছি এবং সেটার একটা কপি এনবিআরকে দিয়েছি। রপ্তানির সঙ্গে যারা জড়িত এবং কাস্টমস তারা জানাতে পারবে কীভাবে রপ্তানি হচ্ছে। এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ সূত্র জানায়, স্কয়ার গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০০০ সাল থেকে দেশের প্রচলিত আইন মেনে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। স্কয়ার গ্রুপ দেশের অন্যতম কর প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। পণ্যের গুণাগুণ, আন্তর্জাতিক মান এবং যুক্তিসঙ্গত মূল্যের কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে বিশ্বের ৪২টি দেশে উক্ত পণ্যসামগ্রী রপ্তানি করে। ২০১০-১১ সালে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি (ব্রোঞ্জ) ও ২০১৫-১৬ সালে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি (সিলভার) অর্জন করেছে। এ ছাড়াও অত্র প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী বাংলাদেশে একাধিকবার সেরা ব্র্যান্ড হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।
চিঠিতে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সুনাম রক্ষায় বেআইনিভাবে চাল রপ্তানি প্রতিরোধ করতে সব সংস্থাকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার নির্দেশ প্রদানে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশীয় শিল্প বিকাশে ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়ক হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও রপ্তানি হওয়া সম্ভব নয়। যদি রপ্তানি হয়ে থাকে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষকে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি। এরপর মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ বকসীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, চাল রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও রপ্তানি করলে সেটা চোরাচালানি। সেটাকে রপ্তানি বলা যাবে না। বিষয়টা তো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের না। এটা একটা ক্রিমিনাল অফেন্স। এটা আদৌ সত্য বলে আমার মনে হয় না। যদি এটা সত্য হয়, তাহলে যে বর্ডার দিয়ে মালটা যাবে সেই কাস্টমসের অপরাধ।