সোহেল চৌধুরী
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৩ ০৯:১০ এএম
আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৩ ১৩:০০ পিএম
রমজান এলেই ভোক্তারা শঙ্কায় থাকেন নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী দফায় দফায় পণ্যের দাম বাড়িয়ে থাকেন। বিগত বছরের এমন অভিজ্ঞতা থেকে এবারের রমজানে আগে থেকেই সতর্ক অবস্থানে সরকার।
পণ্যের দাম ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কয়েক মাস আগে থেকেই মজুদ ও আমদানি প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। এতে রমজানে পণ্যের সংকট তৈরি হবে না বলে আশা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরাও বলছেন রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না। এদিকে মূল্যস্পীতির কারণে কমেছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। তাই এবার নিত্যপণ্যের চাহিদা গত রমজানের তুলনায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কম থাকবে বলে আভাস দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্স।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, রমজানে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে প্রায় তিন লাখ টন। বিপরীতে মজুদ আছে তিন লাখ দুই হাজার ১৬৩ টন। এ ছাড়া আমদানির পাইপলাইনে আছে দুই লাখ ৭৫ হাজার ৮৪৫ টন। অর্থাৎ পাইপলাইন বাদ দিলেও চাহিদার তুলনায় মজুদের পরিমাণ কিছুটা বেশি রয়েছে। একই অবস্থা চিনির ক্ষেত্রেও। যেখানে রমজানে চিনির চাহিদা থাকে প্রায় তিন লাখ টন, সেখানে বর্তমানে মজুদ আছে দুই লাখ ২৫ হাজার ৫৬৩ টন। আমদানির পাইপলাইনে আছে পাঁচ লাখ ৯৯ হাজার ৫০ টন। সব মিলিয়ে চিনির জোগানও পর্যাপ্ত। সে হিসাবে ভোজ্যতেল ও চিনির দাম বাড়ারও যৌক্তিক কোনো কারণ নেই।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে রমজানে খেজুরের চাহিদা থাকে প্রায় ৫০ হাজার টন। অন্যান্য মাসিক চাহিদা প্রায় পাঁচ হাজার টন। আর বছরে এক লাখ টন। খেজুর আমদানিকারকরা বলছেন, রমজানে চাহিদার চেয়ে খেজুরের মজুদ বেশি রয়েছে। তাই খেজুরের দাম বাড়ারও কোনো কারণ নেই।
রমজানে ছোলার চাহিদা এক লাখ টন। স্থানীয় পর্যায়ে ছোলা উৎপাদন শূন্য দশমিক ৪৬ টন। আমদানি হয় প্রায় দুই লাখ টন। দেশে ছোলার মাসিক চাহিদা শূন্য দশমিক শূন্য ৫ লাখ টন। বছরে যার চাহিদা রয়েছে দেড় লাখ টন।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রমজানের চাহিদার তুলনায় ছোলা আমদানি হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ, যার প্রভাবে ইতোমধ্যেই বাজারে কমছে ছোলার দাম। তবে পেঁয়াজ ও মসুর ডালের মজুদ নিয়ে কোনো তথ্য দেয়নি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে রয়েছে প্রায় ২৫ লাখ টন।
স্থানীয়ভাবে পেঁয়াজের উৎপাদন হয় ২৭ লাখ টনের বেশি। আর পেঁয়াজ আমদানি হয় ছয় থেকে সাত লাখ টন। প্রতি মাসে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে দুই লাখ টন, যেখানে রমজানে পেঁয়াজের চাহিদা গিয়ে দাঁড়ায় চার লাখ টনে। দেশে মসুর ডালের চাহিদা রয়েছে প্রায় ছয় লাখ টন, যার মাসিক চাহিদা প্রায় ৪০ হাজার টন। রমজানে মসুর ডালের চাহিদা থাকে প্রায় এক লাখ টন। মসুর ডাল স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন হয় দুই লাখ ২০ হাজার টন। বছরে আমদানি হয় প্রায় চার লাখ টন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, রমজান উপলক্ষে পণ্যের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় বেশিই রয়েছে। এক্ষেত্রে বাজারে অসাধুদের কারসাজি না থাকলে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এবারের রমজান বেশ ভালোভাবেই কাটবে। পণ্যের মজুদ যথেষ্ট রয়েছে। আমরা ভোক্তা অধিকার মাঠে থাকব, নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করব। কেউ অনিয়ম বা কৃত্রিম সংকট তৈরি করলেই ব্যবস্থা।’
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘দৈব কিছু না ঘটলে এবারের রমজান ভালো যাবে। আমরা এই রমজানকে ভালোভাবে কাটাতে চাই। যারাই অনিয়ম করবে তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।’