মিলন ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৩ ০৯:১৭ এএম
নিজের স্ট্রবেরি ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত তরুণ উদ্যোক্তা থৈইহ্লাসাই মারমা। প্রবা ফটো
পাহাড়ি জনপদে স্ট্রবেরির চাহিদা থাকায় দিন দিনই বাড়ছে এর চাষ। খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়ি ইউনিয়নে স্ট্রবেরি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা থৈইহ্লাসাই মারমা নামে এক কৃষক।
থৈইহ্লাসাই মারমা মানিকছড়ি মূখ পসাই কার্বারী পাড়ার গ্রামের বাসিন্দা। প্রথম দিকে স্ট্রবেরি চাষে সুবিধা করতে না পারলেও বছর দুয়েক ধরে লাভের মুখ দেখছেন এই কৃষক। তার এই সফলতা দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন উপজেলার তরুণ কৃষকরা।
জেলায় স্ট্রবেরি চাষি হিসেবে তিনিও বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। তার উৎপাদিত পণ্যের নাম দেওয়া হয়েছে উইন্টার স্ট্রবেরি। মাইসছড়ি এলাকার মাটিতে এ স্ট্রবেরি চাষ করে ভালো ফলনও পাচ্ছেন। এই স্ট্রবেরি স্বাদেও বেশ মিষ্টি।
থৈইহ্লাসাই মারমা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, আট বছর আগে শখের বসে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেছিলেন তিনি। মূলত, কইল্যাছড়ি বেড়াতে গিয়ে স্ট্রবেরি চাষ দেখে তিনি এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ হন। পরে সেখান থেকে স্ট্রবেরি চারা কিনে চাষ করতে শুরু করেন। শুরুতে সঠিক পদ্ধতি জানা না থাকায় চারাগুলো মারা যেত। এরপর ইউটিউব থেকে স্ট্রবেরি চাষের নানা পদ্ধতি শিখে নরসিংদী থেকে ৫০টি স্ট্রবেরি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। চারাগুলো ৫ শতক জমিতে রোপণ করেছিলেন।
প্রথম দুয়েক বছর ভালো ফল না এলেও লোকসান হয়নি। তখন স্ট্রবেরির সঙ্গে পাহাড়ের মানুষরা তেমন পরিচিতও ছিল না। বর্তমানে পাহাড়ি এলাকায় স্ট্রবেরি উৎপাদনের কারণে নতুন করে পরিচিতি পেয়েছে এই ফল। সেই সঙ্গে স্থানীয় বাজারে এর চাহিদাও বাড়ছে। চাহিদা বাড়ায় ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে স্ট্রবেরি।
থৈইহ্লাসাই মারমা জানান, তিনি নানা প্রতিকূলতায়ও হাল ছাড়েননি, নতুন উদ্যমে প্রতিনিয়িত চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। বর্তমানে তিনি একজন সফল চাষি। বর্তমানে তিনি নিজে চারা উৎপাদন ও সংরক্ষণ করে চাষ করার সক্ষমতা অর্জন করেছেন।
বর্তমানে তিনি প্রায় এক বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করেন। অল্পদিনেই জমিতে স্ট্রবেরি গাছ সবুজ হয়ে উঠেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষের থেকে স্ট্রবেরি সংগ্রহ শুরু হয়েছে। ১ম ধাপে কয়েক কেজি ফল সংগ্রহ হলেও এখন দুই দিন পরপর ১০ কেজি করে সংগ্রহ করা যাচ্ছে। এভাবে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে এই ফল। তার ক্ষেতে উৎপাদিত স্ট্রবেরি জেলার চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে পাশের জেলা রাঙামাটিতেও। তা ছাড়া অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায়। সেখানে দামও ভালো পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
প্রতি কেজিতে স্ট্রবেরি ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত পাইকারি দরে বিক্রি করছেন। চলতি মৌসুমে ১ বিঘা জমির জন্য শ্রমিক, কীটনাশক, সেচ ও পানিসহ যাবতীয় খরচ বাবদ প্রায় ১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করেছেন কৃষক।
তা ছাড়া স্ট্রবেরি ফল সংগ্রহের পর তা পরিবারের সদস্যরা মিলে বক্সে প্যাকেটজাত করে খাগড়াছড়ি থেকে দূরপাল্লার বাসে করে চাহিদামতো গ্রাহক বিভিন্ন জায়গায় পাঠাচ্ছেন তারা। এ ছাড়া কাছাকাছি দূরত্বে নিজে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেন।
খাগড়াছড়ি হর্টিকালচারের মুক্তা চাকমা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, স্ট্রবেরি রসালো ফল, স্বাদে অতুলনীয়। খাগড়াছড়িতে এর চাহিদা থাকায় দিন দিন এর চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সুযোগ-সুবিধা পেলে পাহাড়ি কৃষকরা স্ট্রবেরি চাষে উদ্বুদ্ধ হবে। কৃষি বিভাগ থেকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান এই কর্মকর্তা।