প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৩ ২০:১৫ পিএম
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৩ ২০:৪০ পিএম
‘ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ; পূর্ববঙ্গে মধ্যবিত্তের বিকাশ’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান। প্রবা ফটো
কৃষিই বাংলাদেশের মূল রক্ষাকবচ। এজন্য কৃষিকে আরও আধুনিকায়ন করতে হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ গবেষণা উন্নয়ন সংস্থার (বিআইডিএস) অডিটরিয়ামে ‘ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ; পূর্ববঙ্গে মধ্যবিত্তের বিকাশ’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়েক সেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতির বড় সহায়ক দেশের কৃষি খাত। এজন্য এ খাতকে আধুনিকায়নসহ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আরও বাড়াতে হবে। এতে করে দেশের অর্থনীতিতে আরও বেশি সক্রিয় অবদান রাখতে পারে কৃষি খাত। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত দেশের কৃষি তথা কৃষকদের অবদান ছিল। ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা মধ্যবিত্তদের গ্রাম ও কৃষক-শ্রমিকদের সঙ্গে গভীর সংযোগ ছিল। আর এসব সংযোগ নিশ্চিতে যারা ভূমিকা রেখেছিলেন, তাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অন্যতম ছিলেন।
আতিউর রহমান বলেন, গত ১৪ বছরে বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই অভাবনীয় উন্নয়ন লক্ষ করা যাচ্ছে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থায়ও বিপ্লব ঘটেছে। তবে শিক্ষার গুণগত মানের দিক থেকে আমরা এখনও পিছিয়ে রয়েছি। এ ছাড়া পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি ২১টি জেলার যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে, যার প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়ছে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগের চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বলেন, বাঙালি জাতির স্বাধীনতা আন্দোলন হয়েছে মূলত বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে। কারণ সে সময় পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর পশ্চিম পাকিস্তান বৈষম্যমূলক আচরণ করত। আর এই বৈষম্য বেশি ছিল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। কিন্তু বৈষম্য দূরীকরণের সেই লক্ষ্য কতটা পূরণ হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এখন রাষ্ট্রকে অভিজাত সমাজ কুক্ষিগত করছে। তারাই সরকারের সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। মধ্যবিত্তের এখানে কোনো সুযোগ নেই। এমনকি পাকিস্তানের শাসকদের সময়ও আমরা দেখিনি।’
রেহমান সোবহান বলেন, ‘বর্তমান সমাজে মধ্যবিত্তরা তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। তারা সমাজে অগ্রণী ভূমিকাও রাখতে পারছে না। শিক্ষাক্ষেত্রে তারা অনেক পিছিয়ে পড়ছে দিনকে দিন। দেশে বেসরকারি শিক্ষা প্রসার লাভ করা সত্ত্বেও তারা সেই সুযোগ-সুবিধা নিতে পারছে না। বরং তারা বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের পরবর্তী প্রজন্ম সেখান থেকে শিক্ষা নিতে পারছে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘ এখন সংসদের ৩০০ সদস্যের মধ্যে যদি জরিপ করা যায়, তাহলে দেখা যাবে তাদের সন্তানদের অনেকে দেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করছে। কেউ কেউ দেশের বাইরে পড়াশোনা করছে।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭৫-এর পরবর্তী সময়ে এ দেশের মধ্যবিত্তরা দ্বিধাদ্বন্দের মধ্যে ভুগছিল। তাদের মধ্যে সঠিক দিকনির্দেশনার অভাব ছিল। শেখ মুজিবও তার নির্বাচনী প্রচারণায় মধ্যবিত্তের কথা মাথায় রেখে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি অন্য রূপ নেয়। মধ্যবিত্তরা তাদের অধিকার হারাতে থাকে এবং একটা বিশেষ শ্রেণির হাতে সমাজের কর্তৃত্ব চলে যায়। তিনি আরো বলেন, ’৭১-এর পূর্ববর্তী সময়ে দেখা যেত, পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে এক ধরনের অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকত। পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করত পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ। সেই বৈষম্য থেকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে মুক্তি পেয়েছি। কিন্তু এখন সমাজে অন্য ধরনের বৈষম্য দেখা যাচ্ছে, যা ক্রমবর্ধমান।’
সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে বিনায়ক সেন বলেন, ৬০-এর দশকে মাত্র ৫ শতাংশ মধ্যবিত্ত ছিল। তারা আন্দোলন-সংগ্রামে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। কিন্তু এখন মধ্যবিত্ত প্রায় ৩০ শতাংশ। এর পরও তখনকার মতো ভূমিকা কেন রাখতে পারছে না- এটা একটা বড় প্রশ্ন। তিনি আরও বলেন, গ্রাম থেকে যখন শহরে মানুষ স্থানান্তরিত হয়, তখন শুধু শ্রমশক্তিই স্থানান্তরিত হয় না। এর মধ্য দিয়ে অনেক কিছুই স্থানান্তরিত হয়। যেমন- শহরে থাকা নিম্ন ও উচ্চ মধ্যবিত্তরা গ্রামের চাষাবাদ, স্বাস্থ্য-শিক্ষা সব বিষয়েই খবর রাখে। আবার শহরে বঞ্চনা সম্পর্কে দ্রুতই গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছিল, যা প্রতিফলন আসে ভাষা আন্দোলন ও পরবর্তী আন্দোলনগুলোতে।