× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ ছাড়ে ধস

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৩ ১৪:০৫ পিএম

উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ ছাড়ে ধস

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় দেশের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। সংকটের কারণে উন্নয়ন প্রকল্পে কমেছে অর্থছাড়। আর সেই প্রভাব পড়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপি বাস্তবায়নে। 

স্বাভাবিক সময়ে যেখানে জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে ৩৭ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়ন হয়, সেখানে চলতি অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৩২ শতাংশ। শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

গতকাল বুধবার পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ-আইএমইডির জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসের এডিপি বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়। 

আইএমইডির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি আট মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৮২ হাজার ১৬৯ কোটি টাকার। এ বছর এডিপিতে বরাদ্দ ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বরাদ্দের তুলনায় বাস্তবায়ন মাত্র ৩২ দশমিক ১০ শতাংশ। 

গত পাঁচ অর্থবছরে আট মাসের হিসাবে এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ৩৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। খরচ হয়েছিল ৮৪ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন ছিল সবচেয়ে কম, ৩৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, খরচ হয়েছিল ৭২ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে বাস্তবায়নের হার ছিল ৩৭ দশমিক ২৬ শতাংশ। আর সবচেয়ে বেশি বাস্তবায়ন হয়েছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে, সেই অর্থবছরে প্রথম আট মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ৩৯ দশমিক ১৩ শতাংশ।

এ ছাড়া একক মাস হিসেবে শুধু ফেব্রুয়ারিতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ করেছে ১০ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা, বাস্তবায়নের হার ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এর আগের বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাস্তবায়ন ছিল ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ, খরচ হয়েছিল ১৩ হাজার ২৩২ কোটি টাকা।

এ বছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মোট প্রকল্পসংখ্যা ১ হাজার ৪৯৬টি। এর মধ্যে মূল প্রকল্প ১ হাজার ৪৪১টি, উপ-প্রকল্প ৪৬টি এবং উন্নয়ন সহায়তা থোক ৯টি। এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১০৬টি, বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ২৯৬টি।

মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এক টাকাও খরচ করতে পারেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়টির আওতায় চলতি অর্থবছরে ১০১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এরপর মাত্র শূন্য দশমিক ৯৯ শতাংশ বাস্তবায়ন করে পিছিয়ে আছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। 

চলতি অর্থবছরে তাদের ৩৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও খরচ করতে পেরেছে মাত্র ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ বা ৮২ কোটি ৬২ লাখ টাকার এডিবি বাস্তবায়ন করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। তাদের ৮২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ এডিবি বাস্তবায়ন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। খরচ করেছে ৬৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ১৫ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। তারা ৪২টি প্রকল্পের বিপরীতে খরচ করেছে মাত্র ২ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। তাদের চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ দেওয়া ছিল ১৫ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা।

এদিকে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৯৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। খরচ করেছে ১৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এরপর সর্বোচ্চ ৫৯ দশমিক ৬২ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। খরচ করেছে ১ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ ৫৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে। খরচ করেছে ১ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা। ৫১ দশমিক ৮৪ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। তারা খরচ করেছে ৭৮ কোটি টাকা।

এছাড়া বেশি এডিপি বাস্তবায়ন করা মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বাস্তবায়ন করেছে ৪৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। খরচ করেছে ৬৩২ কোটি টাকা। তাদের চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ-আইএমইডি বাস্তবায়ন করেছে ৪৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। তারা খরচ করেছে ৯৪ কোটি টাকা। সংস্থাটির এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ২০৩ কোটি টাকা।

এদিকে চলতি অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তারা বাস্তবায়ন করেছে ৪৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। খরচ করেছে ১৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। তাদের বরাদ্দ ছিল ২৭ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। এরপর সর্বোচ্চ খরচ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। তাদের চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৩৫ হাজার ৩০ কোটি টাকা। তারা আট মাসে খরচ করেছে ১৩ হাজার ২ কোটি টাকা। এডিপি বাস্তবায়ন করেছে ৩৭ দশমিক ১২ শতাংশ। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৩০ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। তারা খরচ করেছে ১১ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। এডিপি বাস্তবায়ন করেছে ৩৫ দশমিক ৮২ শতাংশ।

এদিকে খরচ কম হওয়ার পেছনে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ব্যয়সাশ্রয়ী নীতিকে দায়ী করছেন অনেকে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন, জরুরি না হলে বিদেশ সফর ও গাড়ি কেনা বন্ধ, আসবাব কেনায় আরও সাশ্রয়ী হওয়াসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর প্রতিফলন পড়েছে এডিপি বাস্তবায়নে।

দেশের অর্থনীতিতে চাপের পরিস্থিতিতে সরকার সম্প্রতি প্রকল্পগুলোকে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ শ্রেণিতে ভাগ করেছে। ‘এ’ শ্রেণির প্রকল্পকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। এর মানে চলতি এডিপিতে যা বরাদ্দ আছে, তা পুরোটাই খরচ করতে হবে। ‘বি’ শ্রেণিতে থাকা প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ (দেশজ উৎসের অর্থ) ২৫ শতাংশ কমানো হয়েছে।

‘সি’ শ্রেণির প্রকল্পকে নামমাত্র বরাদ্দ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘এ’ শ্রেণিতে ৬৪৬টি প্রকল্প, ‘বি’ শ্রেণিতে ৬৩৬টি প্রকল্প এবং ‘সি’ শ্রেণিতে ৮১টি প্রকল্প রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ৯টি প্রকল্প কোনো শ্রেণিতে রাখা হয়নি।

এডিপি বাস্তবায়ন কম হওয়ার বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সাধারণত অর্থবছরের শেষদিকে এডিপি বাস্তবায়ন হার বাড়ে। এছাড়া প্রকল্পে ধীরগতি থাকে, অনেক সময় ঠিকমতো রিপোর্ট করে না- এসব কারণে প্রথম দিকে বাস্তবায়ন হার কম থাকে। যদিও এই ট্রেন্ড মোটামুটি প্রতিবছরই একই থাকে। তবে এবার বাস্তবায়ন একটু কম হয়েছে। এটা বিবেচনা করার বিষয়। এটা বাড়ানো দরকার। তবে বাস্তবায়ন হার বাড়ানোর জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা