× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মাংসের দাম কমাতে নানামুখী উদ্যোগ

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৩ ০৯:১৩ এএম

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

দাম বাড়তে বাড়তে গত কয়েক বছরে গরু ও খাসির মাংস এখন জনসাধারণের নাগালের বাইরে। স্বল্প আয়ের মানুষের শেষ ভরসা ছিল ব্রয়লার মুরগি। গত এক মাসে অস্বাভাবিক হারে অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির পর সেই ব্রয়লার মুরগিও আর পাতে উঠছে না অনেকের। পবিত্র রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কা-অসন্তোষ থাকে প্রতিবার। তবে এবার তেমনটা হবে না বলে বারবার আশ্বস্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু সেই আশ্বাসে বিশ্বাস করে নিশ্চিন্ত হওয়ার সুযোগ যে কম; মাংসের বাজারের অস্থিরতা যেন সেই আভাস দিচ্ছে রমজানের শুরুতেই।

মাংসের দামের এমন অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি নিয়ে ক্ষোভ-অসন্তোষ শুধু ক্রেতাদের মধ্যে নয়, চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ব্যবসায়ী নেতাদের কপালেও। মাংসের দাম সাধারণের নাগালের মধ্যে আনতে কয়েক দিন ধরে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নেতারা। পাশাপাশি মাংসের দাম ক্রেতাদের নাগালে আনতে তোড়জোড় চালাচ্ছে সরকারের নিয়ন্ত্রক ও তদারককারী বিভিন্ন সংস্থাও।

এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রমজানের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে এক বৈঠকে পোল্ট্রি উৎপাদকদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেছেন, মাংসের দাম নিয়ে তারা শঙ্কিত। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাজার নিয়ন্ত্রণে না এলে সরকারকে মাংস আমদানির সুপারিশ করা হবে বলেও সংশ্লিষ্টদের হুঁশিয়ার করেন তিনি।

এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল দুপুরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ৩০-৪০ টাকা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশে পোল্ট্রি উৎপানদাকারী শীর্ষস্থানীয় চার প্রতিষ্ঠান। তবে খুচরা বাজারে কবে নাগাদ কীভাবে এর কতটুকু প্রভাব পড়বে, তা এখনও নিশ্চিত নয়।

গতকালের বাজার পরিস্থিতি

গতকাল রমজান শুরুর আগের দিন রাজধানীর বাজারগুলোতে ছিল ক্রেতাদের চাপ। মাছ-মাংস ও বেশিরভাগ সবজি বিক্রি হয়েছে এক সপ্তাহ আগের চেয়ে বেশি দামে। বাজারভেদে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২৬০-২৭০ টাকা কেজি। সোনালি মুরগির কেজি ৩৬০-৩৭০ টাকা। ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, গত দিন মাসের মধ্যে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ১২০ টাকা। এক মাস আগেও যে গরুর মাংসের দাম ছিল ৬৭৫-৭০০ টাকা; গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ৭৮০-৮০০ টাকা কেজি। খাসির মাংসের দাম ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকার মধ্যে।

মালিবাগ বাজারে গতকাল ব্রয়লার মুরগির দোকানে এসে দাম শুনে আঁতকে ওঠেন আবুল কালাম নামে এক ব্যাক্তি। মাংস না কিনেই ফিরে যাচ্ছিলেন তিনি। কথা বলতে চাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘কদিন আগে দেড়শ টাকা কেজি যে মুরগি কিনসি এখন সেটা ২৭০ টাকা। গরু-খাসি তো ঈদ ছাড়া চোখে দেখি না, এখন তো মুরগিও কেনার উপায় নাই। দেশে কী দুর্ভিক্ষ লাগছে নাকি? যেভাবে পারতেসে দাম নিতেসে। গরিব মানুষ খাবে কী?’

দাম না কমালে আমদানির সুপারিশ করবে এফবিসিসিআই

মাংসের দাম নিয়ে আবুল কালামের মতো ক্ষোভ ঝরেছে এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিনের কণ্ঠেও। রমজান উপলক্ষে গতকাল নিত্যপণ্যের আমদানি, মজুদ, সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে এফবিসিসিআই। সংগঠনটির কার্যালয়ে গতকাল সকালে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বাজারে মাংসের দাম নিয়ে আমরা শঙ্কিত। দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে ফার্মের মুরগির দাম অত্যধিক বেড়েছে। এক্ষেত্রে বাজার যদি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আসে তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে মাংস বা গরু, মুরগি আমদানির সুপারিশ করা হবে।’

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘মুরগির দাম বাড়লে তার একটা যৌক্তিক কারণ থাকতে হবে। অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়িয়ে ব্যবসা করবে তা হবে না। মুরগির দামের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ীদের ডেকেছিলাম তারা কেউ আসেনি। বাজারে মনিটরিং বা ধরাধরি করলেই দাম কমে আসে। এখন রমজান শুরু হচ্ছে। মুরগির আর গরুর মাংসের দাম তো আগে থেকেই বেড়ে আছে। এভাবে চলতে পারে না। বাজার সঠিকভাবে চলুক তাই চাই।’

জসিম উদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরা চাই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ধ্বংস না হোক। ভালোভাবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করুক ব্যবসায়ীরা। এখন তারা যদি অসাধুভাবে সুযোগ নেয়। ভোক্তাদের পকেট কাটে, তা তো কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাওয়া যায় না। জনগণকে রক্ষা করতে যদি মাংস আমদানির প্রয়োজন হয়, তবে সেটাই করার অনুরোধ জানাব সরকারকে। শিল্পপ্রতিষ্ঠান যদি নিজের ধ্বংস নিজে করতে চায় তবে করার কিছুই নেই।’

ওই বৈঠকে মো. জসিম উদ্দিন আরও বলেন, এবারের রমজানে সরবরাহ পরিস্থিতি বেশ ভালো রয়েছে। চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত পণ্য মজুদ রয়েছে। পাশাপাশি পাইপলাইনেও রয়েছে অনেক পণ্য। বাজার তদারকিতে জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাজার তদারকিতে সরকার নিয়মিত মাঠে থাকবে। এফবিসিসিআই থেকেও অভিযান পরিচালনা করা হবে। কোনো বাজারে অতিরিক্ত দাম রাখা হলে বাজার কমিটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে যে প্রতিষ্ঠান দাম বেশি নেবে তার লাইসেন্সও বাতিল করে দেব। আমরা চাই সবাই শান্তিতে ব্যবসা করুক। অবৈধভাবে কেউ ব্যবসা করুক, তা চাই না। আর কেউ আটক হোক তা-ও চাই না। ব্যবসায়ীদের সমস্যা থাকলে এফবিসিসিআইকে জানানোর অনুরোধ করছি। সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাব।’

সভায় ব্যবসায়ী নেতারা এফবিসিসিআইকে আশ্বস্ত করে বলেন যে, নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। এবারের রমজান ভালোভাবেই কাটবে। তবে বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. মফিজুল হক বলেন, এখনও চিনির বাজার স্বাভাবিক হয়নি। ছয় মাস ধরে যে চিনির সংকট ছিল, তা এখনও কাটেনি। সুতরাং চিনির বাজার স্বাভাবিক হওয়ার বিষয়ে এখনই সবকিছু পরিষ্কার বলা যাবে না। মূল সমস্যা কোথায়, তা খতিয়ে দেখে সমাধান করার প্রয়োজন রয়েছে।

সভায় এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহসভাপতি এম এ মোমেন, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিনসহ রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

মুরগির দাম কমাবে চার প্রতিষ্ঠান

এদিকে ব্রয়লার মুরগির দাম নিয়ে গতকাল দুপুরে শীর্ষস্থানীয় চারটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। কারওয়ান বাজারে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে এ বৈঠকে যোগ দেন কাজী ফার্মস লিমিটেড, আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিমিটেড, সিপি বাংলাদেশ এবং প্যারাগন পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেডের প্রতিনিধিরা।

বৈঠক শেষে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি এই কয়দিন ফার্ম থেকে মুরগি বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। এতে খুচরা বাজারে এসে মুরগির দাম ২৭০ টাকা পর্যন্তও বিক্রি হয়েছে। তবে এখন যেহেতু কাজী ফার্ম ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে এতে খুচরা বাজারে মুরগির দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা কমে আসবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কাজী ফার্ম যেহেতু এই দামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেহেতু অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও এই দামে বিক্রি করবে। কেননা কাজী ফার্ম বৃহৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। ফার্ম থেকে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায় বিক্রি হলে পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মূল্য যেন না নিতে পারে, সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি করে যেতে হবে। আশা করছি ফার্মের মুরগির দাম ধাপে ধাপে কমে আসবে।’

করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে মোট মুরগির চাহিদার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত সরবরাহ করে। বৈঠকে কাজী ফার্মস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল হাসান বলেন, ‘বর্তমানে মুরগির খাবারের দাম অত্যধিক। তাই মুরগির দাম বাড়ছে। তবে রমজানে ভোক্তাদের কথা চিন্তা করে মুরগি এই দামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মুরগির খাবারের দাম কমলে আমরা ফার্ম থেকে আরও কম দামে মুরগি বিক্রি করতে পারব।’


মানসম্মত খাবার বিক্রির আহ্বান

মাংসের দাম নাগালে আনার পাশাপাশি রমজানে ভোক্তা যেন স্বাস্থ্যসম্মত ইফতারসামগ্রী কিনতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে রাজধানীর হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী ও চকবাজারের ইফতারসামগ্রী বিক্রয়কারী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গতকাল বিকালে পৃথক মতবিনিময় করেছে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

কারওয়ান বাজারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান রমজানে ইফতারসামগ্রী স্বাস্থ্যসম্মত প্রক্রিয়ায় তৈরি ও বিক্রির আহ্বান জানান। 

তিনি বলেন, ‘খাবার খোলা না রেখে স্বাস্থ্যসম্মত প্রক্রিয়ায় তৈরি এবং বিক্রি করতে হবে। ধুলা বা ময়লা যেন খাবারে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কোনো অনিয়ম পেলেই আমরা ব্যবস্থা নেব।’

সভায় অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার জানান, ইফতারি তৈরিতে পোড়া তেল, বিষাক্ত রং ও রাসায়নিক কোনোভাবেই ব্যবহার করা যাবে না। ভেজাল জিনিস বিক্রি করলে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ সময় বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, যারা ভেজাল খাদ্য বিক্রি করে তাদের ফাঁসি দেওয়া উচিত। অনৈতিকভাবে যারা ভেজাল খাদ্য বিক্রি করে, তারা দেশের ও জাতির শত্রু। তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া উচিত নয়।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা নিয়ম মেনেই ব্যবসা করবে। ভেজাল খাদ্য যারা বিক্রি করে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হোক, তা আমরাও চাই। তবে রেস্তোরাঁ নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা