জামালপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৩ ১১:২৬ এএম
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৩ ১১:২৮ এএম
জামালপুরে তুলা সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। প্রবা ফটো
জামালপুরে স্বল্প খরচে বেশি মুনাফা হওয়ায় দিন দিন তুলা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। তুলা বিক্রিতে কোনো ঝামেলা না থাকায় প্রতিবছরই বাড়ছে চাষের পরিধি। অপেক্ষাকৃত পতিত জমি বা যেসব জমিতে ফসলের চাষাবাদ হয় না, সেসব জমিতে তুলা চাষ বেড়েছে।
তুলা উন্নয়ন বোর্ড চাষিদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে বলে জানা গেছে। চাষের শুরু থেকে সংগ্রহ ও বিপণন পর্যন্ত পুরো সময় কৃষকদের পরামর্শ ও সহায়তা দিয়েছেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা।
জামালপুরের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের পতিত জমিতে বর্তমানে প্রচুর তুলাগাছের বাগান গড়ে উঠেছে। জামালপুর সদর, মেলান্দহ ও ইসলামপুরে তিনটি উপজেলায় তুলার চাষ করা হচ্ছে। এ বছর অনুকূল আবহাওয়ায় তুলার বাম্পার ফলনও হয়েছে। কৃষকরাও তুলা সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পতিত জমি তুলা চাষের আওতায় আনতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড।
তুলা চাষের জন্য কৃষকদের প্রথমে প্রশিক্ষণ ও স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হয়। সরাসরি মাঠে গিয়ে চাষের শুরু থেকে প্রতিটি পর্যায়ে প্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা। তুলায় খুব একটা রোগবালাই দেখা না দেওয়ায় ও চাষের ক্ষেত্রে খুব বেশি যত্নের প্রয়োজন হয় না বলে তাই চাষের ঝুঁকি কম। তা ছাড়া তুলা সংগ্রহ করার পর তা বিক্রি নিয়ে কৃষকদের কোনো হয়রানি বা ঝামেলা পোহাতে হয় না।
তুলা সংগ্রহের সময় হলে নির্দিষ্ট সময় পরপর মাঠ থেকে তুলা সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত তুলা প্রথমে রোদে শুকানো হয়, তারপর বস্তায় ভরে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়। বস্তাভর্তি এসব তুলা সরাসরি সরকারিভাবে বিক্রি করা যায় তুলা উন্নয়ন বোর্ডে। তাই এখানে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী বা পাইকার না থাকায় কৃষকদের যেমন প্রতারিত হওয়ার সুযোগ নেই, তেমনি রয়েছে ন্যায্যমূল্য পাওয়ার নিশ্চয়তা। তুলা উন্নয়ন বোর্ড তুলা চাষের জন্য কৃষকদের যে ঋণ দেয়, সেই ঋণের টাকা শোধ দিয়ে তুলা বিক্রির লভ্যাংশ খুব সহজেই হাতে পেয়ে যান চাষিরা।
জামালপুর সদর উপজেলার পাথালিয়া এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলের তুলা চাষি বোরহান উদ্দিন, ইমাম হোসেন, মোস্তফা, সাব্বির হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বিঘা তুলা চাষে তাদের খরচ হয় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা আর উৎপাদন হয় ১৪ থেকে ১৫ মণ। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বিঘায় লাভ থাকে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা।
তুলা চাষের সুবিধা হলো- তুলা উন্নয়ন বোর্ড থেকেই চাষের জন্য কৃষকদের ঋণ দেওয়া হয়, এতে কৃষকদের কোনো বাড়তি বিনিয়োগ করতে হয় না। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কৃষকদের অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়।
কৃষকরা আরও জানান, তুলা বিক্রিতেও কোনো ঝামেলা নেই, সরাসরি সরকারিভাবে তুলা বিক্রি করা যায়। তুলা বাজারে নিয়ে বা পাইকারদের কাছে বিক্রির কোনো ঝামেলা না থাকায় কৃষকরাও ন্যায্যমূল্য পান। ঋণের টাকা শোধ দিয়ে তুলা বিক্রির লাভের টাকা কৃষকদের হাতে বুঝিয়ে দেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। এ বছর প্রতি মণ তুলার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৮০০ টাকা। তবে চলতি বছর মূল্যবৃদ্ধির কারণে সার, বীজ, কীটনাশকসহ অন্যান্য খরচ বেশি হওয়ায় লাভ কিছুটা কম হবে। তাই তুলার মূল্যবৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন চাষিরা।
জামালপুর তুলা উন্নয়ন বোর্ডের তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সালাহউদ্দিন জানান, অনুর্বর জমিকে তুলা চাষের আওতায় আনা হচ্ছে। এ বছর প্রতি মণ তুলার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৮০০ টাকা। ইতোমধ্যেই তুলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে, তুলা সংগ্রহ করা হয়েছে ৬০ শতাংশ।
গত বছর ৫৫০ হেক্টর জমি থেকে তুলার উৎপাদন হয় ১ হাজার ৬৫০ টন। চলতি বছর জেলায় তুলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭৮ হেক্টর জমিতে কিন্তু তা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ৬০০ হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত তুলা সংগ্রহ করা হয়েছে ১ হাজার টনের বেশি। আশা করা যায়, গত বছরের তুলনায় এবার তুলার উৎপাদন রেকর্ড গড়বে। চাষকৃত তুলার জাতের মধ্যে রয়েছে সিবি-১২, সিবি-১৪, সিবি হাইব্রিড এম-১, রুপালি-১, হোয়াইট গোল্ড ১ ও ২, শুভ্র-৩, ডিএম-৪ উল্লখযোগ্য।