গোমতী নদীতে নিরবচ্ছিন্ন নৌযান চলাচল নিশ্চিত করতে ৩৫৩ কোটি টাকা খরচে গোমতী নদীর নাব্য উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প প্রস্তাব করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটির আগের প্রস্তাবে খরচ ধরা হয়েছিল ২৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রকল্পের কাজ শুরু না হতেই আগের প্রস্তাবের তুলনায় ৬৪ কোটি টাকা খরচ বাড়ানো হয়েছে। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
প্রকল্পটির প্রস্তাবনায় দেখা যায়, ২০২১ সালে প্রকল্পটি ২৮৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে জানুয়ারি ২০২২ থেকে জুন ২০২৫ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। সেই উন্নয়ন প্রকল্প উপস্থাপনা উন্নয়নয় প্রকল্প প্রস্তাবনার (ডিপিপি) ওপর ৮ নভেম্বর ২০২১ তারিখে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির পিইসি সভায় বেশ কিছু সংশোধন প্রস্তাব দেওয়া হয়। এখন সেই প্রকল্পটিতে ৬৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা বেশি ব্যয় ধরে ৩৫৩ কোটি টাকায় প্রকল্পটি জুলাই ২০২৩ থেকে জুন ২০২৬ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন করে এই ৬৪ কোটি টাকা বেশি ব্যয় প্রস্তাব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
এত বেশি ব্যয় প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চিফ ইঞ্জিনিয়ারসহ সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শেখ মোহাম্মদ শরিফ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কাগজ না দেখে কিছু বলতে পারবেন না বলে জানান।
প্রকল্পটি কুমিল্লা সদর, বুড়িচং, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, হোমনা ও দাউদকান্দি, গৌরীপুর এলাকায় সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করবে বিআইডব্লিউটিএ। প্রকল্পটির মাধ্যমে গোমতী নদী খননের মাধ্যমে নৌপথ উন্নয়ন করে সারা বছর পানিপ্রবাহ পুনরুদ্ধার এবং কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন এলাকায় পণ্য ও যাত্রী পরিবহন সুবিধা প্রদান করা হবে।
প্রকল্পটির প্রস্তাবনায় বলা হয়, প্রকল্পটির মাধ্যমে গোমতী নদীর নৌপথের সমস্যাসংকুল এলাকায় ১৭১ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর নাব্য উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার করে সারা বছর নিরবচ্ছিন্ন নৌযান চলাচলের পথ উন্মুক্ত করা হবে। ৪৮ কিলোমিটার নদী খননের মাধ্যমে নাব্য উন্নয়ন করে ভারত-বাংলাদেশ নৌ-প্রটোকল চুক্তির আওতায় আমদানি-রপ্তানি তথা নৌ-বাণিজ্যের প্রসারতা বৃদ্ধি করা হবে। গোমতী নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ৯৭ কিলোমিটার নৌপথ পুনরুদ্ধার করা এবং গোমতী নদীতে ১০টি সিঁড়ি ও র্যাম নির্মাণের মাধ্যমে নৌপথ ব্যবহার, পণ্য ও যাত্রী ওঠানামা সহজ ও নিরাপদ করা হবে।
প্রকল্পটি নেওয়ার বিষয়ে প্রস্তাবনায় বলা হয়, গোমতী নদী ভারতে উৎপন্ন হয়ে কুমিল্লা সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়ন দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে কুমিল্লা সদর, দেবিদ্বার, কোম্পানীগঞ্জ হয়ে দাউদকান্দির শাপটা এলাকায় মেঘনা নদীতে পতিত হয়েছে। গোমতী নদীর দৈর্ঘ্য ৯২ কিলোমিটার। যার মধ্যে কোম্পানীগঞ্জ থেকে দাউদকান্দির দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার। বর্ষাকালে এ নদীতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নৌযান চলাচল করলেও শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় লঞ্চ, কার্গো, জাহাজ ইত্যাদি চলাচল করতে পারে না। আবার কখনও নাব্যের অভাবে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা দেখা দেয়। সব মৌসুমে বড় আকারের কার্গো জাহাজ নদীতে চলাচল করতে পারে তার জন্যই গোমতী নদীর নাব্যসংকট উন্নয়নে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পটির প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে, প্রকল্পটিতে ১১২ জন মাস পরামর্শক সেবার জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ একেকজন পরামর্শকের পেছনেই মাসে খরচ পড়ছে ৭ লাখ টাকার বেশি। সাতটি অফিস ভবন নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে ৫ কোটি টাকা। ৪৫ লাখ ঘনমিটার মাটির ডাইক নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে ৪৫ কোটি টাকা।
এবং বিআইডব্লিউটির ড্রেজার দিয়ে ক্যাপিটাল ও মেইটেন্যান্স ড্রেজিংয়ে খরচ ধরা হয়েছে ৬৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ঘনমিটার ট্রেনিংয়ে খরচ পড়ছে দেড়শ টাকা। এ ছাড়া ১০৬ লাখ ঘনমিটার বেসরকারি ড্রেজার বা এক্সকাভেটর দ্বারা ক্যাপিটাল ও মেইটেন্যান্স ড্রেজিংয়ে খরচ ধরা হয়েছে ১৯০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বেসরকারি ড্রেজিংয়ে প্রতি ঘনমিটারে খরচ পড়ছে ১৮০ টাকা। ২০ লাখ ঘনমিটার নদীর তীরে বাঁধের ওপর মাটি অপসারণ করতে খরচ পড়ছে ২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি ঘনমিটার মাটি সরাতে খরচ পড়ছে ১০০ টাকা। ১০টি ল্যান্ডিং, সিঁড়ি ও র্যাম নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে ৪ কোটি টাকা। ৪৫ লাখ ঘনমিটার খনন সহায়ক কাজে খরচ ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি
প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু
রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯
যোগাযোগ
প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯, +৮৮০১৮১৫৫৫২৯৯৭ । ই-মেইল: [email protected]
সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]
2023 Protidiner Bangladesh All Rights Reserved. Developed By Protidiner Bangladesh Team.