× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ব্রয়লার মুরগির দামে ‘সন্দেহজনক’ পতন

সোহেল চৌধুরী

প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৩ ১২:২৭ পিএম

আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৩ ১৩:০২ পিএম

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

‘বর্তমানে মুরগির খাবারের দাম অত্যধিক। তাই মুরগির দাম বাড়ছে। সারা দেশে মুরগি উৎপাদনে ঘাটতি হয়েছে। ৩০ বছরের ব্যবসায় এমন অবস্থা দেখিনি। সরবরাহ কম থাকার কারণে মুরগির দাম বাড়ছে।’- বেশি দিন হয়নি, গত ২৩ মার্চ ভোক্তা অধিদপ্তরের সঙ্গে বৈঠকের পর এ কথা বলেছিলেন কাজী ফার্মস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল হাসান।

বিস্ময়কর হলেও সত্য, এরপর মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে ‘৩০ বছরের সর্বোচ্চ উৎপাদন ঘাটতি’ কাটিয়ে গতকাল সোমবার ব্রয়লার মুরগিতে সয়লাব হয়ে গেছে বাজার। গরিবের আমিষের অন্যতম এ উৎসের দাম হঠাৎ করেই গতকাল কমেছে ১০০ টাকা। রাজধানীর অধিকাংশ বাজারেই তা বিক্রি হতে দেখা গেছে ১৬০ টাকা কেজি দরে।

ব্রয়লার মুরগির দাম এভাবে কমে যাওয়ার নজির সৃষ্টি হওয়ায় স্বস্তি ও অস্বস্তি দুটোই দেখা দিয়েছে ভোক্তাদের মধ্যে। মূল্য হ্রাসের কারণে স্বস্তি দেখা দিয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। কিন্তু তারা এ-ও ভেবে পাচ্ছেন না, মাত্র তিন দিন আগেও উৎপাদক বড় করপোরেটগুলো যেখানে ব্রয়লার মুরগি ১৯৫ টাকা কেজি দরে নামিয়ে আনতেই গড়িমসি করছিল, সেখানে এমন দরপতন ঘটল কেন। 

এ প্রসঙ্গে গতকাল সোমবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এতদিন অতিরিক্ত দামে মুরগি বিক্রি করেছে। এখন তারা তা বিক্রি করছে ১৬০ টাকা দরে। এই দরপতন প্রান্তিক খামারিদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রতিযোগিতা কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে লিখিত দেওয়া হবে। প্রান্তিক খামারিদের টিকিয়ে রাখতে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

শুধু ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরই নয়, প্রান্তিক খামারিরাও ১৬০ টাকা দরে মুরগি বিক্রিতে ক্ষুব্ধ, হতবাক ও উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এরকম পরিস্থিতিতে প্রান্তিক খামারিরা বাজার থেকে ছিটকে পড়বে। তাদের ক্ষতি হবে। এখন খামারিদের মুরগি বাজারে চলে আসায় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কম দামে মুরগি বিক্রি করছে। বাজারে এভাবে দাম কমে যাওয়ায় প্রান্তিক খামারিরা বড় আকারের লোকসানের মুখে পড়বে। করপোরেট কোম্পানিগুলো বরাবরই এই কাজ করে আসছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে তারা এরকম করছে। প্রান্তিক খামারিদের সরিয়ে দিয়ে তারা বাজার সম্পূর্ণ দখলে নিতে চায়।’


বাজারে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) বাজার বিশ্লেষক ও ভোক্তা কণ্ঠের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, ‘বাজারে প্রান্তিক খামারিরা যেন কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের আওতায় আসতে বাধ্য হয়, সেই লক্ষ্য নিয়ে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এই কাজ করছে। প্রান্তিক খামারিদের এভাবে ক্ষতি করার প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ অনৈতিক। আমরা বরাবরই এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘এই ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের যে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল, তা তারা করেনি। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর এই অরাজকতায় নীরব ভূমিকা পালন করছে।’

মুখ খুলছে না করপোরেটগুলো

মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির এমন নাটকীয় মূল্য পতনের বিষয়ে জানতে প্রতিদিনের বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় বড় বড় করপোরেটের সঙ্গে। কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও বড় করপোরেটগুলোর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

বিস্তারিত তথ্য জানতে কাজী ফার্মস গ্রুপের পরিচালক ও ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি কাজী জাহিনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। প্যারাগন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মসিউর রহমানকে অনেকবার ফোন করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। মেসেজ পাঠিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। 

তবে ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আনোয়ারুল হক করপোরেট কোম্পানিগুলোর অবস্থান সম্পর্কে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এখানে কেউ কারও প্রতিপক্ষ নয়। সবাই যার যার জায়গা থেকে ব্যবসা করে লাভবান হোক, এটাই সবার প্রত্যাশা। যারা বলেন, প্রান্তিক খামারিদের ধ্বংস করতে চায় করপোরেট কোম্পানিগুলো- তারা ভুল বলেন। এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আজকের বাজারে পাইকারি ক্রেতা একেবারেই কম ছিল। মুরগি কাঁচামাল পণ্য; এক দিন রেখে দিলেই ক্ষতি। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে যে মূল্য পাওয়া যায়, সে দামেই ছেড়ে দিতে হয়। বাজারে আজ ক্রেতা কম থাকায় করপোরেট এবং প্রান্তিক খামারিরা ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা দরে মুরগি বিক্রি করে দিয়েছেন।’

সরকারি তদারকি না থাকার অভিযোগ

এদিকে গত ২৬ মার্চ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন অভিযোগ করেছে, সরকারি তদারকি না থাকায় হরিলুট চলছে দেশের পোল্ট্রি খাতে। সংগঠনটির দাবি, এই খাতের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো গত ৫২ দিনে মুরগি ও বাচ্চার দাম বাড়িয়ে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রান্তিক খামারিদের সংগঠনটি জানাচ্ছে, ৩১ জানুয়ারি থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত এই ৫২ দিনে মুরগি বিক্রি করে করপোরেট কোম্পানিগুলো লাভ করেছে ৬২৪ কোটি টাকা। আর এক দিনের মুরগির বাচ্চা বিক্রি করে তাদের মুনাফা হয়েছে ৩১২ কোটি টাকা!

সংগঠনটির দাবি, দেশে প্রতিদিন মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হয় ২০ লাখ। এসব বাচ্চা উৎপাদন করে কোম্পানিগুলো। একেকটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদনে বর্তমানে খরচ হয় ২৮ থেকে ৩০ টাকা। যা চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ছিল ১০ থেকে ১৫ টাকা। প্রতিটি মুরগির বাচ্চা এখন ৬২ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রির কথা থাকলেও বেচা হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। ফলে প্রতি বাচ্চায় ২৫ থেকে ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে করপোরেট কোম্পানিগুলো।

উল্লেখ্য, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মুরগির উৎপাদন খরচ ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ দাঁড়ায় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। গত ২৩ মার্চ ভোক্তা অধিদপ্তরের সঙ্গে উৎপাদক করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈঠকের দিন বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৭০ টাকায়। এতে ভোক্তার পকেট থেকে অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। ওই দিন দুপুরে পোল্ট্রি খাতের শীর্ষস্থানীয় চার প্রতিষ্ঠান কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, আফতাব বহুমুখী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশকে তলব করে ভোক্তা অধিদপ্তর। শীর্ষ এই চার প্রতিষ্ঠান ভোক্তা অধিদপ্তরের সঙ্গে বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেয় রমজানে ফার্ম থেকে মুরগি বিক্রি হবে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়। এই বৈঠকের পর বাজারে কমতে শুরু করে ব্রয়লার মুরগির দাম।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা