প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:৩৫ পিএম
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:৩৭ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হওয়ার (বেক্সিট) পর সবচেয়ে বড় বাণিজ্য চুক্তি করলো যুক্তরাজ্য। বৈদিশিক বাণিজ্যের অংশ হিসেবে এবার প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের এশিয়ার ১১ টি দেশের সঙ্গে চুক্তিতে ব্রিটেন। এতে দেশটির মোট অর্থনীতিতে শূন্য দশমিক ০৮ শতাংশ যুক্ত হবে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে চুক্তি হওয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনাই, কানাডা, চিলি, জাপান, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, পেরু, সিঙ্গাপুর এবং ভিয়েতনাম।
এ চুক্তির কারণে যুক্তুরাজ্য তাদের গাড়ি, যন্ত্রপাতি, পনির, চকোলেট, জিন এবং হুইস্কির মতো পণ্যের উপর শুল্ক কমিয়ে রপ্তানি করবে। চুক্তিটি বাণিজ্য এলাকার ৫০ কোটি মানুষের বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে। এ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকার বলছে, চুক্তিটি ব্রেক্সিটের পর যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য চুক্তি।
এদিকে ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপের অধীনে বিস্তৃত ও প্রগতিশীল বাণিজ্য চুক্তি- সিপিটিপিপি। যেখানে অন্তর্ভুক্ত ছিল অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনাই, কানাডা, চিলি, জাপান, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, পেরু, সিঙ্গাপুর এবং ভিয়েতনাম। সিপিটিপিপির অধীনে সদস্যরা বাণিজ্যের উপর বিধিনিষেধ শিথিল করে এবং পণ্যের উপর শুল্ক কমিয়ে দেয়। ফলে নতুন এ চুক্তি থেকে খুব একটা লাভ হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাজ্যের নতুন এ চুক্তি থেকে লাভের পরিমাণ সামান্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ ইতোমধ্যেই ব্রুনাই এবং মালয়েশিয়া ব্যতীত সমস্ত সদস্যের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে।
এর আগে যুক্তরাজ্যের অফিস ফর বাজেট রেসপনসিবিলিটি (ওবিআর) তাদের এক পূর্বাভাসে জানিয়েছিল, ব্রেক্সিট দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। এর ফলে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশ কমে যাবে। তবে নতুন এ চুক্তির ফলে ব্রিটিশ সরকার অনুমান করছে এটি ১০ বছরের মধ্যে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে শূন্য দশমিক ০৮ শতাংশ যোগ করবে।
তবে গত ২১ মাসের আলোচনা শেষে ১১ টি দেশ এক বাণিজ্য চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। তাদের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে বিশ্ব বাণিজ্যের ১৩ শতাংশের সমান। এশিয়ার সঙ্গে এই বৃহৎ বাণিজ্য চুক্তিতে ইউরোপীয় দেশ হিসেবে প্রথম যুক্ত হয়েছে ব্রিটেন।
এ বিষয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, ‘ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ে এই চুক্তিটির মাধ্যমে আমরা অর্থনীতির প্রকৃত সুবিধা পেতে যাচ্ছি। সিপিটিপিপির অংশ হিসাবে যুক্তরাজ্য এখন নতুন চাকরি, প্রবৃদ্ধি এবং উদ্ভাবনের সুযোগগুলো পাচ্ছে। এতে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি প্রধান অবস্থানে রয়েছে ব্রিটেন।’
নতুন এই বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে একই রকম কথা বলেছেন যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য সচিব কেমি ব্যাডেনোচ।
তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশ ব্যবসাগুলো এখন ইউরোপ থেকে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত বাজারে অতুলনীয় প্রবেশাধিকার উপভোগ করবে। তবে এটাকে আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিকল্প বাজার হিসেবে তৈরি করতে চাইনি। আমরা এখনও ইইউর সঙ্গে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে রয়েছি।’
এ চুক্তির ফলে কৃষিতে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এটি কৃষকদের জন্য নতুন বাজার তৈরি করবে।’
তবে সবকিছুর পরেও ভোক্তা সুরক্ষা, খাদ্য সুরক্ষা, ডেটা সুরক্ষা এবং পরিবেশগত সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশটির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সচিব নিক থমাস-সাইমন্ডস। তবে এ বিষয়ে দেশটির সরকার বলছে, এই ব্লকে থাকার ফলে পরিষেবা খাতের উন্নতির জন্য কোনও স্থানীয় অফিস স্থাপন করা হবে না। পরিষেবা সরবরাহের সমস্ত কাজ স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে করা হবে। ফলে সুরক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। চুক্তিটির আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর চলতি বছরের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য যুক্তরাজ্য প্রয়োজনীয় চূড়ান্ত আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সূত্র: বিবিসি