প্রবা ফটো
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাজেট ঘাটতি একটি সাধারণ ঘটনা। সরকারের উচিত বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের জন্য সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ এবং কাঠামোগত সংস্কার করা।
শনিবার (১লা এপ্রিল) রাজধানীর গুলশানে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি (বিএমসিসিআই) আয়োজিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনার মূল বক্তব্য উপস্থাপনায় তিনি একথা বলেন।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এনবিআরকে বাংলাদেশে মোট কর ব্যয়ের একটি ব্যাপক মূল্যায়ন করতে হবে। বাজেটে সামাজিক ব্যয় সংরক্ষণও বাড়াতে হবে।’
উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং ক্রমাগত ডলার সংকটের কারণে বাজেট প্রণয়নে সামষ্টিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই কারণগুলো কম আমদানি, বিনিয়োগ এবং ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত মজুরি হ্রাসের সঙ্গে পরিবারের চাহিদা হ্রাস পাবে।’ তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএমসিসিআই সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর মাত্র তিন মিলিয়ন মানুষ তাদের ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেয়, তবে এই সংখ্যা বাড়ানো উচিত।’ তিনি নন-তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য করপোরেট কর কমানো এবং বর্তমান মুদ্রাস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনা করে ব্যক্তির জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা বিদ্যমান তিন লাখ থেকে পাঁচ লাখে উন্নীত করার অনুরোধ জানান।
বিএমসিসিআই সভাপতি বলেন, ২০৪১ সাল পর্যন্ত অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশের প্রায় ৬০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। তিনি এই বিনিয়োগের জন্য একটি আর্থিক উৎস ম্যাপিং করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের রপ্তানি প্রতিযোগিতা বাড়ানোর জন্য রপ্তানি বহুমুখীকরণের দিকে যেতে হবে এবং নতুন সম্ভাব্য খাতগুলো অন্বেষণ করতে হবে। এবারের বাজেটে আয়কর ও মূল্য সংযোজন করের পরিধি বাড়ানো, আয়কর সংগ্রহে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, করব্যবস্থার সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়তা, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, স্থানীয় শিল্পায়নকে উৎসাহিত করা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া উচিত।’
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এবং আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার বৃদ্ধি আমাদের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি ও এলসি খোলার ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে এবং এ কারণেই আমাদের রিজার্ভ এখনও বেশ স্থিতিশীল রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত সন্তোষজনক নয় এবং আমাদের রাজস্ব আদায়ও কম, তাই কর নেট বাড়ানো ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই।’
তিনি ট্যাক্স অটোমেশন, কর ব্যবস্থার সরলীকরণ এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের স্বেচ্ছায় কর দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। আমরা কর না দিলে সরকার রাজস্ব পাবে কোথা থেকে। কৃষি, চামড়া, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে আরএমজি সেক্টরের মতো একই সুবিধা পাওয়া উচিত।’ তিনি এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর প্রতিযোগিতামূলক হতে আমাদের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের বৈচিত্র্যের ওপর জোর দেন। রেমিট্যান্স, রপ্তানি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং এফডিআইয়ের মতো সব সূচকেই গত ছয় মাসে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক ছিল না। তা ছাড়া বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও অস্থিতিশীলতা বিবেচনায় আগামী বাজেট অতি উচ্চাভিলাষী হবে না বলেও জানান তিনি।
প্রাক-বাজেট আলোচনায় ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার, এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি এমএ মোমেন, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী, বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. আবদুল মজিদ উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনায় বক্তারা করব্যবস্থার অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ, অটোমেশন, কর জাল প্রশস্তকরণ, কর সংস্কার, কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি, ট্যাক্স সহজীকরণ, দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন, টেকসই পুঁজিবাজার উন্নয়ন, এসএমই সুরক্ষা, পশ্চাৎপদ সংযোগ শিল্পের উন্নতি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি
প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু
রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯
যোগাযোগ
প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯, +৮৮০১৮১৫৫৫২৯৯৭ । ই-মেইল: [email protected]
সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]
2023 Protidiner Bangladesh All Rights Reserved. Developed By Protidiner Bangladesh Team.