প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৩ ২১:১০ পিএম
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৩ ২১:৩৮ পিএম
প্রবা ফটো
খেলাপির চাপে দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে দেশের ব্যাংক খাত। এ খাতে বর্তমানে দৃশ্যমান খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। কিন্তু মামলার দীর্ঘসূত্রতায় অর্থঋণ আদালতে বড় অঙ্কের খেলাপি আটকে আছে। এমন পরিস্থিতিতে খেলাপি ঋণের অর্থ উদ্ধারে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির দাবি করেছেন বিভিন্ন ব্যাংকের নির্বাহীরা। ব্যাংকের শীর্ষ কর্তাদের অংশগ্রহণে রবিবার অনুষ্ঠেয় ব্যাংকার্স সভার আলোচ্য সূচিতে অর্থঋণ আদালতের মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতির বিষয়ে অ্যাজেন্ডা রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চলতি বছরের প্রথম সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে তফসিলভুক্ত ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতামত দেওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া সভায় সব ব্যাংকের বাংলা কিউআর কোড চালু, নতুন অর্থবছরের মুদ্রানীতি এবং ব্যাংকারদের জন্য হাসপাতাল নির্মাণসহ বিবিধ বিষয় আলোচ্যসূচিত রয়েছে বলে সূত্র জানায়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘চলতি বছরের প্রথম ব্যাংকার্স সভা রবিবার সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে মুদ্রানীতি, খেলাপিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে।’
ব্যাংকার্স সভার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, খেলাপি ঋণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে। খেলাপি ঋণ কমাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ দেশের অভ্যন্তরেও নানা চাপ রয়েছে। কিন্তু নানা চেষ্টা করেও কমানো যাচ্ছে না। আর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছে, অর্থঋণ আদালতে মামলার দীর্ঘসূত্রতার সুযোগ নিয়ে অনেক গ্রাহক ইচ্ছাকৃত খেলাপি বনে যাচ্ছেন। এতে খেলাপি লাগামছাড়া হয়ে পড়েছে। এই খেলাপি কমাতে আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির বিকল্প দেখছেন না তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০০৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। যা ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। আর ২০০৩ সালে গঠনের পর থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থঋণ আদালতে দায়ের মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার। এসব মামলায় আটকে থাকা টাকার পরিমাণ ২ লাখ ৪৯ হাজার কোটি টাকা।
পাশাপাশি অর্থঋণ আদালতে এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তি মামলার সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার এবং এসব মামলায় নিষ্পত্তি করা অর্থের পরিমাণ ৮২ হাজার কোটি টাকা হলেও প্রকৃত আদায় ২১ হাজার কোটি টাকা। তবে অর্থঋণ আদালতে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৭২ হাজার এবং আটকা অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা।
একই প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০২২ সালে অর্থঋণ আদালতে দায়ের করা মামলা বেড়েছে ১৪ হাজার ৪৫২টি। একই সময়ে ব্যাংকের দাবি করা টাকার পরিমাণ বেড়েছে ৩৫ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। তবে গত বছরের শেষ ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) মামলা বেড়েছে ৮ হাজার ৩৪৪টি। এ সময় দাবি করা টাকার পরিমাণ বেড়েছে ১৯ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আফজাল করিম বলেন, “বিদ্যমান ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন’ সংশোধন হলে আমরা সেই অনুযাযী ব্যবস্থা নেব। ইতোমধ্যে খেলাপি কমাতে আমরা তৎপরতা বৃদ্ধি করেছি এবং গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে আগের তুলনায় খেলাপি কমেছে এবং কিছুটা হলেও খেলাপি ঋণ আদায় বেড়েছে। আর ব্যাংকার্স সভায় এজেন্ট উপস্থাপনের আগে বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না। যখন খেলাপি ঋণ আদায় বা নিষ্পত্তি নিয়ে কথা উঠবে তখন পরিস্থিতি বুঝে বিস্তারিত বলা যাবে।’
এর আগে গত মঙ্গলবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০২৩-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান খসড়া আইনের বিধিবিধান সম্পর্কে গণমাধ্যমকে জানান।