ঠাকুরগাঁও প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৩ ১০:৪২ এএম
হরিহরপুর গ্রামে তুলা ক্ষেত পরিচর্যা করছেন কৃষকরা। প্রবা ফটো
তুলা চাষে এত লাভ জানতেন না ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা। হরিহরপুর গ্রামের তুলাচাষি আব্দুর রহমান জানান, ৩৩ শতক জমিতে তুলা চাষ করতে তার খরচ হয়েছে ২২ হাজার টাকা আর তুলা বিক্রি করে মুনাফা হয়েছে ৪০ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, ‘মুই লাল তীরের হাইব্রিড ডিএম-৪ জাতের তুলা চাষ করছু। সব জাতের তুলার তুলনায় এই জাতের তুলা ভালো। জমিতে ভালো ফলন হইছে। বাজারে দামও ভালো।’
বস্ত্র খাতে তুলার ব্যবহার অপরিহার্য। তাই সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর যৌথ উদ্যোগে অধিকাংশ তুলা বাংলাদেশ থেকে উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাজারে নিয়ে এসেছে উন্নত হাইব্রিড ডিএম-৪ জাতের তুলার বীজ। যা চাষ করে দ্বিগুণ লাভবান হচ্ছেন ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা।
সদর হরিহরপুরের কৃষক খালেক জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে তুলা চাষে সফলতা পাওয়া যাবে এটা তার কাছে অবিশ্বাস্য ব্যাপার ছিল। তাই প্রাথমিকভাবে তিনি অল্প জমিতে তুলা চাষ শুরু করেন। তার মতে, তুলা চাষ করতে পরিশ্রম খুব বেশি না। তবে অন্য ফসলের থেকে তুলায় বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। পরের মৌসুমে তিনি আরও বেশি জমিতে তুলা চাষ করবেন বলে জানান।
নারগুন ইউনিয়নের তুলাচাষি রামনাথ বলেন, ‘আমার জমিগুলো এমনি পড়ে ছিল। পরে ঠাকুরগাঁও তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের পরামর্শে আমার পতিত জমিতে তুলা চাষ করছি। আমার এইবার প্রায় দুই গুণ লাভ হয়েছে। তার পাশাপাশি তুলার সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে কলার বাগান করেছি। এতে এক জমিতে দুই ফসল করে বেশি লাভ হচ্ছে। সার-কীটনাশক কম ব্যবহার হচ্ছে।’
রায়পুর ইউনিয়নের কৃষক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমি দুই বিঘা জমিতে তুলা চাষ করছি। আমার তুলা হইছে ২৮ মণ। দাম ভালো পাইছি। কৃষি কর্মকর্তারা সব সময় আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন। তুলা চাষ করে এবার আমি লাভবান হয়েছি।’
জেলা তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতা ও পরামর্শে ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা পরিত্যক্ত জমিতে চাষ করেছেন তুলা। চাষিদের অনেকেই তুলার সঙ্গে সাথি ফলস হিসেবে কেউ আখ, কলা, কেউ আবার নানা ধরনের শাকসবজি চাষ করেছেন। এতে এক ফসলের পরিচর্যা ও খরচে দুই ফসল পাওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। তুলা চাষ করার পর তুলাগাছগুলো জৈবসার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও তুলা উন্নয়ন বোর্ডের মাঠ পরিদর্শক স্বদেশ চন্দ্র রায় বলেন, তুলা এমন একটি ফসল যার প্রতিটি অংশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন আঁশ থেকে সুতা, বীজ থেকে খৈল ও খাওয়ার তেল পাওয়া যায়। গাছ থেকে জ্বালানি, কাগজ তৈরি ও হার্ডবোর্ড বানানো হয়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। যে জমিতে কোনো ফসল হয় না, সেই জমিতে পরপর দুই মৌসুম তুলা চাষ করলে এর উর্বরতা শক্তি এমন বৃদ্ধি পায় যে তখন সব রকম ফসল সহজেই ফলানো যায়।
ঠাকুরগাঁও জোনের তুলা উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কর্মকর্তা এ কে এম হারুন অর রশিদ বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলায় আগে তুলা চাষ সম্পর্কে মানুষের ধারণাই ছিল না। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে উফশী ও হাইব্রিড মিলে তুলা চাষ হয়েছে ৪২৬ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৮১৬ বেল তুলা। যার দাম ১৮ কোটি টাকা। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে তুলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০০ হেক্টর জমিতে, যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বর্তমান মূল্য প্রায় ২৮-৩০ কোটি টাকা।
ঠাকুরগাঁওয়ে তুলা চাষের মাঠ পরিদর্শনে এসে রংপুর অঞ্চল তুলা উন্নয়ন বোর্ডের উপপরিচালক আবু ইলিয়াস মিঞা বলেন, লাল তীর সিড়ের ডিএম-৪ জাতের বীজের জার্মিনেশন ভালো ও এর বিঘাপ্রতি ১৬-২০ মণ করে ফলন হওয়ায় খুশি কৃষকরা।
তিনি বলেন, তুলা উন্নয়ন বোর্ডই কৃষকদের কাছে তুলা কেনে এবং এই ফসলের দাম স্থিতিশীল। একই ফসলের সঙ্গে অন্য ফসল করতে পারায় আগামীতে জেলায় তুলা চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে। তুলার সঙ্গে কৃষকরা সাথি ফসলও চাষ করতে পারছেন বলে বেশি করে তুলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তুলা বোর্ড কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ দিচ্ছে ও বীজ সরবরাহ করছে। লাল তীর সিড়ের ডিএম-৪ ও তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সিবি হাইব্রিড-১, উফশী-১২ ও-১৫ জাতের বীজ কৃষকদের সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্তমানে কৃষকরা এসব হাইব্রিড জাতের তুলা চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছেন।