প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৩ ২০:৪৪ পিএম
আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৩ ২১:১২ পিএম
প্রবা ফটো
একদিকে ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলো ক্রেতাশূন্যতায় ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে, অন্যদিকে স্বল্প মূলধনি দুর্বল কোম্পানিগুলোর দাম বাড়ছে।
চলতি সপ্তাহের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত দুই দিনে দর বৃদ্ধির তালিকার সিংহভাগই স্বল্প মূলধনি কোম্পানি। সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা ১০টি কোম্পানির মধ্যে সাতটির পরিশোধিত মূলধনই ১৩ কোটি টাকার নিচে। সবশেষ আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, এই সাতটি কোম্পানির মধ্যে পাঁচটিরই শেয়ারপ্রতি আয় নেতিবাচক। অর্থাৎ এই কোম্পানিগুলো লোকসানে রয়েছে।
সোমবার (৩ এপ্রিল) দর বৃদ্ধির শীর্ষে অবস্থান করছে সমতা লেদার কমপ্লেক্স লিমিটেড। দিন শেষে ৭৭ টাকায় শেয়ারটির কোনো বিক্রেতা ছিল না। গত দুই দিনে সমতা লেদার কমপ্লেক্সের দাম বেড়েছে ৯ টাকা ৬০ পয়সা বা ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। কিন্তু ৩০ জুন, ২০২২ হিসাব বছর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছিল ৬ পয়সা। আর শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১৪ টাকা ৩২ পয়সা। এরপর তিনটি প্রান্তিক শেষ হলেও আর কোনো আর্থিক হিসাব দাখিল করেনি কোম্পানিটি। এই কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
দর বৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিডি অটোকারস লিমিটেডের সবশেষ লেনদেন হয় ১৪৭ টাকা ৫০ পয়সায়। গত দুই দিনে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ১৫ টাকা ২০ পয়সা বা ১১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। সবশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি হিসাব বছরের প্রথম ছয় মাস শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ৪৪ পয়সা। আর শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৭ টাকা ২৩ পয়সা। আয় ইতিবাচক থাকলেও মূলধনের চেয়ে সম্পদমূল্য কমে গেছে কোম্পানিটির। বিডি অটোকারসের পরিশোধিত মূলধন ৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
ডিএসইর দর বৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষে থাকা লিগ্যাসি ফুটওয়্যার লিমিটেডের সবশেষ লেনদেন হয় ৮৯ টাকা ৮০ পয়সায়। কোম্পানির গত দুই দিনে ১৫ টাকা ৪০ পয়সা বা ২০ দশমিক ৭৯ শতাংশ দাম বেড়েছে। কিন্তু চলতি হিসাব বছরের প্রথম ছয় মাসে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি লোকসান করেছে ৭৯ পয়সা। আর শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৯ টাকা ৪ পয়সা। অর্থাৎ কোম্পানিটির সম্পদমূল্য ভিত্তিমূল্যের নিচে নেমে গেছে। লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের পরিশোধিত মূলধন ১৩ কোটি ৮ লাখ টাকা।
গত রবিবারই দ্বিতীয় প্রান্তিকের হিসাব প্রকাশ করেছে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ। এতে দেখা যায়, চলতি হিসাব বছরের প্রথম ছয় মাসে কোম্পানির লোকসান আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এরপরও গতকাল দাম বৃদ্ধি পাওয়া শেয়ারের তালিকায় থাকায় পাঁচ নম্বরে অবস্থান করছে কোম্পানিটি। সবশেষ ১১৯ টাকায় লেনদেন হওয়া কোম্পানিটির শেয়ার গত রবিবার সবশেষ লেনদেন হয় ১০৯ টাকা ৯০ পয়সায়। আর গত দুই দিনের হিসাবে ৮ টাকা ১০ পয়সা বা ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ দাম বেড়েছে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের। চলতি হিসাব বছরের প্রথম ছয় মাস শেষে শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ৪ টাকা ৩৩ পয়সা। আর শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ৩৩ পয়সা। অর্থাৎ কোম্পানির আর্থিক দুর্বলতার চিত্র স্পষ্ট। স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের পরিশোধিত মূলধন ৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
জেমিনি সি ফুড লিমিটেডের পরিশোধিত মূলধন ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা। স্বল্প মূলধনি এই কোম্পানির শেয়ার গতকাল সবশেষ লেনদেন হয়ে ৬১০ টাকা ৩০ পয়সায়। চলতি সপ্তাহের হিসাব বলছে, গত দুই দিনে কোম্পানির শেয়ারের দাম ৮২ টাকা ১০ পয়সা বা ১৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের চেয়ে আয় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। হিসাব বছরের প্রথম ছয় মাস শেষে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ৭ টাকা ১০ পয়সা। আর শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ১৮ পয়সা। এত অল্প সম্পদমূল্যের জেমিনি সি ফুডের লেনদেন হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ দরে।
স্বল্প মূলধনি আরেক কোম্পানি আজিজ পাইপ লিমিটেড দর বাড়ার তালিকায় নবম স্থানে অবস্থান করছে। গতকাল সবশেষে কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয় ৯১ টাকায়। গত দুই দিনে শেয়ারটির দর বেড়েছে ২ টাকা ৫০ পয়সা বা ২ দশমিক ৮২ শতাংশ। চলতি হিসাব বছরের প্রথম ছয় মাস শেষে শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ১৪ পয়সা। শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ২১ টাকা ৭২ পয়সা, অর্থাৎ সম্পদের চেয়ে দায় বেশি। আজিজ পাইপের পরিশোধিত মূলধন ৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
জিকিউ বলপেন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ার সবশেষ লেনদেন হয় ৯২ টাকা ৯০ পয়সায়। গত দুই দিনে কোম্পানিটির শেয়ারের দর বেড়েছে ৯ টাকা ৩০ পয়সা বা ১১ দশমিক ১২ শতাংশ। হিসাব বছরের প্রথম ছয় মাস শেষে শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ২৩ পয়সা। আর শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১২০ টাকা ৮০ পয়সা। জিকিউ বলপেনের পরিশোধিত মূলধন ৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ’এই শেয়ারগুলো নিয়ে কারসাজি হচ্ছে বিধায় এগুলোর দাম বাড়ছে। গত কিছু দিনের শেয়ারবাজার পর্যবেক্ষণ করলে দেখবেন, করপোরেট উদ্যোক্তা-পরিচালকরা শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিলেও দাম বাড়ছে এগুলোর। কিন্তু চাহিদা-জোগানের মূল তত্ত্ব অনুযায়ী শেয়ারের দাম কমে যাওয়ার কথা। কিন্তু উল্টো বাড়ছে। এখানে একটি চক্র কাজ করছে নিশ্চিত। তাই বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের উচিত এগুলোতে ভালোভাবে নজরদারি করা।’