আনিছুর রহমান
প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৯:০৩ পিএম
আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৯:৫৯ পিএম
উদ্যোক্তা ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মেলবন্ধন স্থাপনে চালু হচ্ছে অলটারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড-এটিবি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসই শিগগির এ বোর্ড চালু করবে। পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা কোম্পানির শেয়ারের পাশাপাশি বে-মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড এবং বিভিন্ন ধরনের বন্ডের লেনদেন হবে ডিএসইর এটিবি বোর্ডে।
মূলত দীর্ঘমেয়াদি বিনিযোগকারীদের জন্যই এ বোর্ড করা হচ্ছে। যেকোনো সচল কোম্পানি শেষ তিন বছরের আর্থিক প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজ যুক্ত করে মাত্র ১০ হাজার টাকা দিয়েই তালিকাভুক্তির জন্য ডিএসইর কাছে আবেদন করতে পারবে। আবেদন জমার ৩০ দিনের মধ্যে তালিকাভুক্ত করতে হবে, অন্যথায় আবেদন বাতিলের কারণ উল্লেখ করে আবেদনকারীকে জানাতে হবে। আর এ তালিকাভুক্তির জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিএসইসির কোনো অনুমোদন লাগবে না। তবে বিএসইসি চাইলে কোনো কোম্পানিকে তালিকাভুক্তির নির্দেশনা দিতে পারবে।
এক বছরের বেশি সময় অপেক্ষার পর ‘ডিএসই অলটারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড রেগুলেশন ২০২২’ অনুমোদন দেয় বিএসইসি--যা এখন গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য ডিএসইর কাছে পাঠানো হয়েছে। গত আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে ডিএসইর পাঠানো প্রস্তাবের কিছু পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের পর এটিবি রেগুলেশন অনুমোদন পায়।
রেগুলেশন অনুযায়ী এটিবি বোর্ড হবে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের জন্য, এখানে স্বল্প সময়ে বিনিয়োগ করে কোনো লাভ পাওয়া যাবে না। কারণ এটিবি মার্কেটে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ার কিনে ৩ মাস আগে বিক্রি করলে লাভ পাবেন না বিনিয়োগকারীরা। এ সময় যে পরিমাণ লাভ করবেন তা কেটে বিনিয়োগকারী সুরক্ষা তহবিলে স্থানান্তর করবে স্টক ব্রোকার। তবে ওভার দ্য কাউন্টার-ওটিসি থেকে যেসব কোম্পানি এটিবিতে স্থানান্তর হবে, তাদের ক্ষেত্রে এ প্রভিধান প্রযোজ্য হবে না বলে জানান ডিএসইর কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে এটিবির শেয়ার কিনতে মার্জিন লোন পাবেন না বিনিয়োগকারীরা।
এটিবিতে সার্কিট ব্রেকার বা দর হ্রাস-বৃদ্ধির সীমা হবে ৫ শতাংশ। অর্থাৎ যেকোনো শেয়ারের দাম দৈনিক ৫ শতাংশ কমতে বা বাড়তে পারবে। তবে নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রথম ২ কার্যদিবস সার্কিট ব্রেকার হবে ৪ শতাংশ। আর তৃতীয় কার্যদিবসে লেনদেনটি সম্পূর্ণ করার জন্য স্থগিত রাখা হবে বেচাকেনা। চতুর্থ দিন থেকে সার্কিট ব্রেকার ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়াবে ৫ শতাংশ। মূল মার্কেটের মতো এটিবিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের ভিত্তিমূল্য হবে ১০ টাকা।
এটিবিতে তালিকাভুক্তির আগে কোম্পানি উদ্যোক্ত-পরিচালকদের শেয়ার ‘সাধারণ শেয়ার’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। তালিকাভুক্তির ৩০ দিনের মধ্যে কমপক্ষে ১০ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করতে হবে। তবে উদ্যোক্তা পরিচালকরা কোনোভাবেই ৪৯ শতাংশের বেশি শেয়ার বাজারে ছাড়তে পারবে না। কারণে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কমপক্ষে ৫১ শতাংশ শেয়ারধারণে বাধ্যবাধকতা থাকছে। তবে কমপক্ষে ১০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি এবং ৫১ শতাংশ উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ধারণের বাধ্যবাধকতা প্রযোজ্য হবে না ওটিসিতে থেকে আসা কোম্পানি বা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কর্তৃক নির্দেশনায় তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য। এটিবিতে বন্ড লেনদেনের জন্য সার্ভিস চার্জ হবে সমাপনী মূল্যের ৫ পয়সা বা ৫০ টাকা। টাকার অঙ্কে যেটি বড় হবে, সেটাই বন্ড ক্রেতা-বিক্রেতাদের সার্ভিস চার্জ হিসেবে দিতে হবে।
বে-মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডও লেনদেন হবে এটিবিতে। মূলত বিনিয়োগকারীরা চাইলে তাদের হাতে থাকা ফান্ড হস্তান্তর করে ট্রাস্টির কাছ থেকে সম্পদের সমমূল্য অর্থ নেওয়ার সুযোগ পাবেন এ প্ল্যাটফর্মে। এজন্য প্রতিদিন লেনদেন শুরুর আগে ওয়েবসাইটে ফান্ডের সম্পদমূল্য ঘোষণা দিতে হবে ট্রাস্টিকে।
গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর ওটিসির ১৮টি কোম্পানিকে এটিবিতে তালিকাভুক্তির নির্দেশনা দিয়েছিল বিএসইসি। প্রয়োজনীয় শর্ত পালন করে নির্দেশনা অনুযায়ী এটিবিতে যাবে নিচের ১৮টি কোম্পানি। সেগুলো হলো--বাংলা প্রসেস ইন্ডাস্ট্রিজ, ড্যান্ডি ডায়িং, ডায়নামিক টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ, মেটালেক্স করপোরেশন, মিতা টেক্সটাইলস, মডার্ন সিমেন্ট, মডার্ন ইন্ডাস্ট্রিজ, মোনা ফুড প্রোডাক্টস, পারফিউমস কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, পেট্রো সিনথেটিকস প্রোডাক্টস, ফার্মাকো ইন্টারন্যাশনাল, কাসেম সিল্ক মিলস, কাসেম টেক্সটাইলস মিলস, রাসপিট ইনস বিডি, রোজ হ্যাভেন বলপেন, সালেহ কার্পেট মিলস, শেরপুর টেক্সটাইল মিলস, থেরাপিউটিকস বাংলাদেশ, জাগো করপোরেশন ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ।
এসব কোম্পানির ৫০ শতাংশ শেয়ার ডিমেট আকারে থাকলেও এটিবিতে তালিকাভুক্ত হতে পারবে। সেই হিসেবে গত বছর মূল মার্কেট থেকে ওটিসিতে পাঠানো ইউনাইটেড এয়ার লিমিটেড এটিবি তালিকাভুক্তি অনেকটাই নিশ্চিত। এ ছাড়াও আরও কিছু কোম্পানি শেয়ার ডিমেটের আকারে রূপান্তর করতে কাজ করছে বলে জানা গেছে।
আর এটিবি বোর্ড চালু হলে পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হবে বলে প্রত্যাশা করছেন ডিএসই সংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে ডিএসইর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলেও জানা গেছে।
‘ডিএসই এটিবি রেগুলেশন-২০২২’ সময়যোপযোগী হয়েছে বলে মনে করেন ডিএসইর সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশীদ লালি। তার মতে এ ট্রেডিং বোর্ড চালু হলে অনেক নতুন কোম্পানি পুঁজিবাজারের আওতায় আসবে, বাড়বে লেনদেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবতার নিরিখে কিছু পরিবর্তন বা সংযোজন দরকার হবে।
প্রবা/আরএম/এমআই